বৌদ্ধধর্মকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিল বেলজিয়াম

বৌদ্ধধর্মকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি: বেলজিয়ামে বৌদ্ধধর্মকে একটি সরকারী ধর্ম হিসেবে স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে বেলজিয়াম ফেডারেল সরকার। এই নিয়ে বেলজিয়ম ইউরোপীয় ইউনিয়নের তৃতীয় দেশ হিসেবে বৌদ্ধ ধর্মকে এই রাষ্ট্রীয় মর্যদা দিতে যাচ্ছে। ফেডারেল তহবিল এবং ডেডিকেটেড স্কুল সিদ্ধান্তে, ফেডারেল সরকার গত ১৭ মার্চ একটি খসড়া আইন অনুমোদন করার মাধ্যমে, বেলজিয়ামে বৌদ্ধ ধর্মকে একটি সরকারী ধর্ম হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য প্রস্তুত বলে জানিয়েছে।

বেলজিয়াম বুড্ডিস্ট ইউনিয়ন ২০০৬ সালের মার্চ মাসে বৌদ্ধ ধর্মকে সরকারী স্বীকৃতির জন্য সরকারের কাছে আবেদন করার ১৭ বছর পর এই খবরটি আসে। এর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আরো দুটি দেশ  অস্ট্রিয়া এবং ইতালি বৌদ্ধধর্মকে রাষ্ট্রীয় ধর্ম হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। বেলজিয়াম ইউরোপীয় দেশের মধ্যে তৃতীয় দেশ হিসেবে বৌদ্ধ ধর্মকে স্বীকৃতি দিলো।

১৯৮৩ সালে অস্ট্রিয়ান এক আইনের মাধ্যমে বৌদ্ধধর্মকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত দেওয়া হয়। ২০০৭  সালে ইতালীয় বৌদ্ধ ইউনিয়ন (Unione Buddhista Italiana), ইতালীয় সরকারের সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে, যা ২০১২ সালে আইনে পরিণত হয়। উল্লেখ্য, ইতালীয় বৌদ্ধ ইউনিয়ন (Unione Buddhista Italiana) ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।

একটি অ-সাম্প্রদায়িক বিশ্বদর্শন হিসেবে বৌদ্ধধর্মকে বেলজিয়াম এই স্বীকৃতি দিয়েছে। বেলজিয়ামের মন্ত্রী পরিষদের ফেডারেল আইন মন্ত্রী ভিনসেন্ট ভ্যান কুইকেনবোর্ন খসড়া বিলটি অনুমোদন করার মাধ্যমে এই স্বীকৃতি কার্যকর হয়। অনুমোদিত খসড়া আইনটি এখন কাউন্সিল অফ স্টেটের কাছে জমা দিতে হবে।  

ভ্যান কুইকেনবোর্ন ১৭ মার্চ এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, “তারা [বৌদ্ধ আবেদনকারী] এই স্বীকৃতির যোগ্য, তারা দীর্ঘকাল ধরে এটার জন্য অপেক্ষা করছে।”

বৌদ্ধধর্মকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিল বেলজিয়াম

বেলজিয়ান-ফরাসি বৌদ্ধ নাগরিক, অভিযাত্রী এবং লেখক আলেকজান্দ্রা ডেভিড-নীল ১৯১০ সালের প্রথম দিকে ব্রাসেলসের মুক্ত মনাদের সংগঠন ”দ্য কংগ্রেসে অব ফ্রি থিঙ্কার্স”কে মহা বোধি সোসাইটির সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। ১৯৬০ সালে বেলজিয়ামে প্রথম বৌদ্ধ কেন্দ্রগুলো প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত বেলজিয়ামের বৌদ্ধ ইউনিয়ন। বর্তমানে এখন দেশটির সবচেয়ে সক্রিয় বৌদ্ধ সংগঠনগুলার মধ্যে বেলজিয়াম বৌদ্ধ ইউনিয়ন অন্যতম। বেলজিয়াম বৌদ্ধ ইউনিয়নের আওতায় এখন পর্যন্ত ৩৫টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

২০১৯ সালের তথ্য অনুসারে, বেলজিয়ামের ১১.৬ মিলিয়ন জনসংখ্যার ০.৩ শতাংশ বৌদ্ধ হিসাবে চিহ্নিত। এখানে ৬০ শতাংশ খ্রিস্টান, ৫ শতাংশ ইসলাম, ০.৩ শতাংশ ইহুদি ও ৪ শতাংশ অন্যান্য ধর্ম পালন করে। বেলজিয়ামের প্রায় ৩১ শতাংশ নাগরিক কোন ধর্ম পালন করে না।

ভ্যান কুইকেনবোর্ন বলেন, “আমাদের দেশে এখন বৌদ্ধধর্মের প্রায় ১৫০,০০০ অনুসারী রয়েছে। গত কয়েক দশক ধরে, বৌদ্ধ সম্প্রদায় প্রমাণ করেছে যে এটি প্রশাসনিক এবং প্রতিনিধিত্বমূলকভাবে নিজেদেরকে সুশৃঙ্খলভাবে গঠন করতে পারে এবং বেলজিয়ামের সমাজ ব্যবস্থায় ইতিবাচক অবদান রাখতে পারে। বৌদ্ধরা বেলজিয়ামে এই স্বীকৃতি পাওয়ার যোগ্য।”

ফেডারেল সরকারের এই স্বীকৃতি বৌদ্ধধর্মকে রাষ্ট্রীয় বিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচীতে অন্তর্ভূক্ত করবে। বৌদ্ধধর্ম বিষয়ে পড়ানোর জন্য বিদ্যালয় গুলোকে অনুমতি দেবে। এর ফলে, বৌদ্ধ সম্প্রদায়কে ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও কালচার পালনে ফেডারেল অর্থায়নের অধিকারও দেওয়া হবে।

বেলজিয়াম সরকারের এই ঐতিহাসিক পদক্ষেপের ফলে বেলজিয়ামে ৮টি সরকারি ধর্ম স্বীকৃত হলো। রোমান ক্যাথলিক (১৮৩০), ইহুদি ধর্ম (১৮৩০), অ্যাংলিকানিজম (১৮৩৫), প্রোটেস্ট্যান্ট-ইভাঞ্জেলিকালিজম (১৮৭৬), ইসলাম (১৯৭৪), অর্থোডক্সি (১৯৮৫) এবং মানবতাবাদ (২০০২) এর পরে বৌদ্ধধর্ম (২০২৩) বেলজিয়ামের অষ্টম আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত জীবন দর্শনে পরিণত হলো।

আরো পড়ুন>>

শেয়ার করে সবাইকে পড়ার সুযোগ দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!