মিয়ানমারে বৌদ্ধ বিহারে হামলা: নিহত ২১

মিয়ানমারে দক্ষিণাঞ্চলীয় শান রাজ্যে সরকারি বাহিনীর হামলায় অন্তত ২১ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। গত শনিবার একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সাথে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী মধ্যে মারাত্মক সংঘর্ষ হলে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে।

মায়ানমারের সামরিক সরকারের বিরোধিতাকারী বেশ কয়েকটি জাতিগত মিলিশিয়া গোষ্ঠীর মধ্যে একটি কারেনি ন্যাশনালিটিজ ডিফেন্স ফোর্স (কেএনডিএফ)। কেএনডিএফ এর মতে, শনিবার সরকারি সেনারা শান রাজ্যের নান নিন গ্রামে কেএনডিএফকে লক্ষ্য করে গোলাবর্ষণ করেছে। গোলাগুলির পরে সামরিক বাহিনী গ্রামে প্রবেশ করে এবং সেখানে একটি বৌদ্ধ বিহারে আশ্রয় নেওয়া অন্তত ২১ জন গ্রামবাসীকে হত্যা করেছে সরকারি বাহিনী।

বিবিসি নিউজে প্রকাশিত রিপোর্ট মতে, “নিহত ব্যক্তিদের তারা [সামরিক বাহিনী] বৌদ্ধ মন্দিরের সামনে লাইনে দাঁড় করিয়েছিল এবং বিহারে অবস্থানরত বৌদ্ধ ভিক্ষু সহ সকলকে নির্মমভাবে গুলি করে”। স্থানীয় মিডিয়াকে দেওয়া এক স্বাক্ষাতকারে এমনটা দাবী করেছে কেএনডিএফের একজন মুখপাত্র।

২০২১ সালের ১ ফ্রেব্রুয়ারি প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারে ক্ষমতা দখলের পর থেকে দেশটিতে বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্টি ও সরকারি বাহিনীর মধ্যে চলছে সশস্ত্র সংঘর্ষ। এছাড়া স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি এবং গভর্নিং ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) দলের অন্যান্য সদস্যদের আটক করার পর মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী দেশটিতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে।

অভ্যুত্থানের পর থেকে, সামরিক-নেতৃত্বাধীন রাজ্য প্রশাসন কাউন্সিল জনগণের অসন্তোষের মুখে পড়ে। জনগনের আন্দোলনকে প্রশমিত করতে সামরিক সরকার সহিংস ক্র্যাকডাউন পরিচালনা করে দমন-পীড়ন চালায় রাস্তার বিক্ষোভরত জনসাধারণের উপর। দেশের পূজনীয় বৌদ্ধ ভিক্ষু সংঘও সামরিক বাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়েছে।

বিবিসি জানিয়েছে যে কেএনডিএফ মিলিশিয়া গোষ্ঠীর শেয়ার করা একটি ভিডিওতে দেখা গেছে অন্তত ২১টি মৃতদেহ পড়ে আছে, যার মধ্যে তিনজন বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পরিদেয় চীবর পড়া অবস্থায় দেখা গেছে। মৃত দেহগুলো বৌদ্ধ বিহারটির সামনে স্তূপ করে রাখতে দেখা গেছে। বিবিসি আরো বলেছে, মৃত দেহগুলোতে একাধিক গুলির আঘাতের চিহ্নের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

দুই বছরের বেশি সহিংস দমন সত্ত্বেও, জান্তা সরকার ব্যাপক বিরোধিতার মুখোমুখি হচ্ছে দেশটিতে। জনগণের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ আন্দোলনের উপর ক্র্যাকডাউনের ফলে একটি ক্রমবর্ধমান সংখ্যক সম্প্রদায় সশস্ত্র প্রতিরোধের দিকে ঝুঁকছে। সরকার বিরোধী বিদ্রোহী জাতিগত মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলোর সমর্থন দিন দিন বাড়ছে মিয়ানমারে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার (ওএইচসিএইচআর) ভলকার তুর্ক গত ৬ মার্চ দেশটির নাগরিকদের জন্য বৃহত্তর আন্তর্জাতিক সমর্থনের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন। তিনি বলেন, “মিয়ানমারে এখন মানুষের শান্তির আশা বিরল।” মিস্টার ভলকার আরো বলেন, “মানুষের জীবন এবং মানবাধিকারের প্রতি অবজ্ঞা এবং অবমাননা যা সেনাবাহিনী ক্রমাগত দেশটিতে প্রদর্শণ করছে, তা মানবতার বিবেকের প্রতি ক্ষোভ সৃষ্টি করে।” (ইউএন নিউজ)

OHCHR এর সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ১ ফেব্রুয়ারী, ২০২২ থেকে ২৩ জানুয়ারী, ২০২৩ পর্যন্ত  মিয়ানমারের সরকারী নিরাপত্তা বাহিনী দেশটির হাজার হাজার লোককে আটক করেছে, যার মধ্যে শিশুসহ কয়েক ডজন মানুষ গোলাগুলি এবং সামরিক হামলায় নিহত হয়েছে।

উল্লেখ্য, দেশটির প্রায় ৪০,০০০ ঘরবাড়ি ধ্বংস, ৮ মিলিয়ন শিশু স্কুল থেকে দূরে এবং ১৫ মিলিয়ন লোককে চরম খাদ্য অভাবে ভুগছে বলে চিহ্নিত করেছে জাতিসংঘ।

মিয়ানমার- এবং থাইল্যান্ড-ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনারস (এএপিপি) রিপোর্ট করেছে যে ১০ মার্চ পর্যন্ত, গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনের সাথে জড়িত ৩১২০ জন মানুষ সামরিক জান্তা কর্তৃক নিহত হয়েছে। এএপিপি উল্লেখ করেছে যে চিত্রটি শুধুমাত্র স্বাধীনভাবে যাছাই করা মৃত্যুর সংখ্য প্রকৃত এই সংখ্যা অনেক বেশি হতে পারে। তাদের তথ্য মতে, অভ্যুত্থান-পরবর্তী মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১০৩ জন বন্দী সহ মোট ১৬,৪৩২ জনকে আটক করা হয়েছে। এই পর্যন্ত সব মিলিয়ে ১৪৫ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া দিয়েছে দেশটির আদালত।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের আদমশুমারির তথ্য অনুসারে মায়ানমারের জনসংখ্যার প্রায় ৯০.০১ শতাংশ বৌদ্ধ। দেশটির ২য় বৃহত্তম জনগোষ্টি  খ্রিস্টানদের সংখ্যা ৬.২ শতাংশ, মুসলিম আছে ২.৪ শতাংশ এবং হিন্দু আছে ০.৫ শতাংশ। উপজাতীয় এবং অন্যান্য ধর্মের আরো ০.৫ শতাংশ মানুষ বাস করে মিয়ানমারে।

শেয়ার করে সবাইকে পড়ার সুযোগ দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!