শ্রীলঙ্কা, কলম্বো: শ্রীলঙ্কার সুপ্রিম কোর্টের এক যুগান্তকারী রায়ে শ্রীলঙ্কা পূর্ণদীক্ষিত থেরবাদ বৌদ্ধ ভিক্ষুণীদের সমান মর্যাদা লাভের পথ উন্মুক্ত হলো। আদালতের নির্দেশে ধর্মদীপ্তা ভিক্ষুণীকে ‘সীল মাথা’ নয়, বরং ‘ভিক্ষুণী’ হিসেবে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের আদেশ দেওয়া হয়েছে—দেশটির ইতিহাসে এই প্রথম এমন সাংবিধানিক স্বীকৃতি।
ধর্মদীপ্তা ভিক্ষুণী রঙ্গিরি দাম্বুল সংগঠনের অধীনে পূর্ণভাবে দীক্ষা গ্রহণ করেন। তবে দীর্ঘদিন ধরে সরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তাঁকে “সীল মাথা” অর্থাৎ আধা-ব্রতচারিণী হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছিল। আদালত রায়ে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে যে, একজন নারী যদি পুরুষ ভিক্ষুর মতোই দীক্ষা ও নিয়ম অনুসরণ করেন, তবে তাকে তার প্রকৃত পরিচয় থেকে বঞ্চিত করা সাংবিধানিক সমতার লঙ্ঘন।
প্রধান বিচারপতি মুর্দু ফার্নান্দো এবং বিচারপতি গামিনী আমারাসেকেরা রায়ে বলেন, “যদি আবেদনকারী একজন পুরুষ হতেন, তবে তাঁকে এমন বাধার সম্মুখীন হতে হতো না।” তাঁরা আরও বলেন, “ভিক্ষুণী হিসেবে তাঁকে তার নিজ সংগঠন স্বীকৃতি দিলেও সরকারিভাবে তাঁকে সেই পরিচয় দেওয়া হয়নি—এটি সাংবিধানিক সমতার পরিপন্থী।”
বৌদ্ধ নারীদের এ স্বীকৃতির জন্য দীর্ঘ সংগ্রামের সূচনা ঘটে ১৯৯৬ সালে, যখন আন্তর্জাতিক সংগঠন Sakyadhita-এর সহায়তায় ১১ জন শ্রীলঙ্কান নারী ভারতে গিয়ে পূর্ণ দীক্ষা নেন। আজ সেই ভিক্ষুণী সম্প্রদায়ের সংখ্যা ৪,০০০ ছাড়িয়েছে, কিন্তু এখনও দেশের মূলধারার সংঘ তাদের স্বীকৃতি দিতে অনাগ্রহী।
এই রায়কে স্বাগত জানিয়ে International Network of Engaged Buddhists (INEB) বলেছে, “এই সাহসী সিদ্ধান্ত ধর্মীয় জীবনে নারীদের মর্যাদা, অধিকার ও অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করার পথে এক মহৎ বিজয়।” সংগঠনের নারী কর্মসূচির সমন্বয়ক আনচালি কুরুটাচ বলেন, “একজন ভিক্ষুণী হওয়া মানে শুধু দীক্ষা নেওয়া নয়—এটি আত্মপ্রত্যয়ের এক দীপ্ত অভিযাত্রা।”
এখন এই রায়ের বাস্তবায়নের মাধ্যমে শুধু একজন ধর্মদীপ্তা নয়, বরং সমগ্র ভিক্ষুণী সংঘ একটি নতুন ইতিহাসের অংশ হতে যাচ্ছে—যেখানে ধর্ম, আইনি সুরক্ষা ও সামাজিক মর্যাদা একসূত্রে গাঁথা।