বৌদ্ধ বিবাহ মন্ত্র পালি

বৌদ্ধ বিবাহ মন্ত্র: বিবাহ শুধু দুটি আত্মার নয়, দুটি জীবনদর্শনেরও মিলন। বৌদ্ধ ধর্মে বিবাহ একটি পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন হলেও, এর পেছনে আছে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা, পারমি (পুণ্যসঞ্চয়) পূরণের অঙ্গীকার এবং পরস্পরের কল্যাণকামী সহাবস্থানের সংকল্প।

এই বৌদ্ধ বিবাহ মন্ত্র সমূহ প্রাচীন পালি ভাষায় রচিত, যা বর-কন্যার জীবনে সুখ, শান্তি, মৈত্রী ও ধর্মানুগ সহাবস্থান নিশ্চিত করতে পাঠ করা হয়। এতে যেমন রয়েছে বুদ্ধ, ধম্ম ও সংঘের প্রতি আশ্রয় গ্রহণের অঙ্গীকার, তেমনি রয়েছে মঙ্গলকামনা, উপদ্রব বিনাশের প্রার্থনা এবং পারস্পরিক সহানুভূতি ও সহনশীলতা চর্চার নির্দেশ।

এই বৌদ্ধ বিবাহ মন্ত্র পাঠ একটি ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান হলেও, এর অন্তর্নিহিত শিক্ষাগুলো সার্বজনীন—জীবনের যেকোনো পর্যায়ে মৈত্রীর শক্তি, সদগুণের চর্চা এবং শুভ চিন্তার মাধ্যমে শান্তিময় সম্পর্ক গড়ে তোলার দিকনির্দেশনা দেয়।

মন্ত্রদাতার উপদ্রব বন্ধ করা

অমহাকং খো পন ভগবা দীপঙ্করপাদমূলতো পট্ঠায পঠমং দানপারমী, দুতিযং সীলপারমী, ততিযং নেক্খম্মপারমী, চতুথং পঞঞাপারমী, পঞ্চমং বিরিযপারমী, ছট্ঠমং খন্তিপারমী, সত্তমং সচ্চপারমী, অটুঠমং অধিট্ঠাপারমী, নবমং মেত্তাপারমী, দসমং উপেক্খপারমী’তি দস পারমিযো, দস উপপারমিযো, দস পরমত্থ পারমিযো’তি সমতিংস পারমিযো পূরেসি। তাসং পারমীনং অনুভাবেন মযয্হং সব্বে উপদ্দবা বিনাসমেস্তু।

বর-কন্যার উপদ্রব বন্ধ করা

পুরথিমায দিসায, দক্খিণা দিসায, পচ্ছিমায দিসায, উত্তরায় দিসায, পুরত্থিমায অনুদিসায, দক্খিণায় অনুদিসা, পচ্ছিমায অনুদিসায়, উত্তরায় অনুদিসায, হেট্ঠিমায দিসায, উপরিমায দিসায, সব্বে সত্তা, সব্বে পাণা, সব্বে ভূতা, সব্বে পুগ্গলা, সব্বে অত্তভাব-পরিযাপন্না, সব্বা ইত্থিযো, সব্বে পুরিসা, সব্বে অরিযা, সব্বে অনরিযা, সব্বে দেবা, সব্বে মনুস্সা সব্বে অমনুস্সা সব্বে বিনিপাতিকা অবেরা হোন্তু, অব্যাপজ্জা হোন্তু, অনীঘো হোন্ত, সুখী অত্তানং পরিহরন্তু, দুক্খা মুঞ্চন্তু, যথালদ্ধ সম্পত্তিতো মা বিগচ্ছন্তু কম্মসূসকা। ইমিনা মেত্তানুভাবেন জযম্পতিমো সব্বে উপদ্দবা বিনাসমেন্তু।

মন্ত্রদাতার গুরু প্রণাম ও শরণ গমন

পঠমং দ্বত্তিংস মহাপুরিসলক্খণ-সম্পন্নং অসীতি অনুব্যঞ্জন-পতিমণ্ডিতং নিরোধসমাপত্তিতো উট্ঠহিত্বা নিসিন্নং বিয ভগবন্তং অরহন্তং সম্মাসমুদ্ধং নমামি, দুতিযং আচরিযং নমামি, ততিযং তিরতনং সরণং গচ্ছামি।

বর কন্যার আসন রক্ষা করা

যং দুন্নিমিত্তং অবমঙ্গলঞ্চ

যো চামনাপো সকুণস্স সদ্দো,

পাপগগ্হো দুস্সু পিনং অকন্তং

বুদ্ধানুভাবেন বিনাসমেন্তু।

ধম্মানুভাবেন বিনাসমেন্তু।

সঙ্ঘানুভাবেন বিনাসমেন্তু।

 বরকে কন্যা সম্প্রদান

তুযহং দীঘরত্তং হিতায সুখায ইমং কঞ্ঞং গণ্হাহি।

বরের হস্তে কন্যার হস্ত রাখা

দ্বিহত্থং সম্বন্ধং বিয তুম্‌হেপি সব্বকালং সমগগ্ভাবেন বসথ,

অঞঞমঞং দেব-দেবীনং বিয সংবাসো চ হোতু।

বর ও কন্যার পদ সংযুক্ত করা

ইদং পাদদ্বযং সম্বন্ধকরণং তুমহাকং যাবজীবং অঞ্ঞমঞ্ঞং গিহীধম্মং সমাদানায চেব কুসলকম্মং করণত্থাযয চ অবিসংযোগস্স পযো হোতু।

মন্ত্রদাতা কর্তৃক বর ও কন্যার মঙ্গল কামনা

নত্থি তে সরণং অঞ্ঞং বুদ্ধো তে সরণং বরং,

বুদ্ধ তেজেন লোকস্স তাণা লেণা পরায়ণা,

এতেন সচ্চবজ্জেন হোতু তে জযমঙ্গলং।

নত্থি তে সরণং অঞ্ঞং ধম্মো তে সরণং বরং,

ধম্ম তেজেন লোকস্স তাণা লেণা পরাযণা,

এতেন সচ্চবজ্জেল হোতু তে জয়মঙ্গলং।

নথি তে সরণং অঞ্ঞং সঙ্ঘো তে সরণং বরং,

সঙ্ঘতেজেন লোকসস তাণা লেণা পরাযণা,

এতেন সচ্চবজ্জেন হোতু তে জযমঙ্গলং।

[তৎপর মন্ত্রদাতাকে বর কন্যার সম্মুখে বেদীর উপর স্থিত স-পল্লব জলপূর্ণ কলসী হতে দুই হাতে দুই পল্লব নিয়ে নিম্নোক্ত মন্ত্রটি পাঠ করতে হবে এবং সাতবার মন্ত্র পাঠ করে সাতবার পল্লব দ্বারা কলসী হতে জল নিয়ে পল্লবস্থিত জল বর কন্যার মস্তকের উপর ছিটিয়ে দিতে হবে।]

আবাহ-বিবাহ মঙ্গল কামনা

সিদ্ধিরাজস্স সামনে সিদ্ধিকিচ্চঞ্চ কারতো,

সিদ্ধিভাবং সমিজ্বন্তু সিদ্ধিলাভা ভবন্তু তে।

জযন্তো বোধিয মূলে সক্যানং নন্দিবড্ঢনো,

এবমেব জযো হোতু জযস্সু জযমঙ্গলে।

অপরাজিত পল্লঙ্কে সীসে পুথুবিমুক্খলে,

অভিসেকে সম্বুদ্বানং অগগপ্পত্তো পমোদতি;

এতেন সচ্চবজ্জেন হোতু তে জযমঙ্গলং।

জয জয মঙ্গলং বোধিপল্লঙ্কং’ব

জয জয মঙ্গলং ধম্মচক্কং’ব

জয জয মঙ্গলং সব্বগুণ-পাণিনং’ব

জয জয মঙ্গলং ঞাণাদিত্তিং’ব

জয জয মঙ্গলং সাধু সুপ্পতিটঠিতানং’ব।

বরকন্যাকে আশীর্বাদ করা

সমসীলা সমসদ্ধা ভবন্তু উভযো সদা,

আযু-বন্নং-সুখ-বলং-পাটিভাণং ভবন্তু তে।

ভবতু সব্বমঙ্গলং রক্খন্তু সব্বদেবতা,

সব্ব বুদ্ধানুভাবেন সদা সোত্থি ভবন্তু তে।

ভবতু সব্বমঙ্গলং রক্খন্তু সব্বদেবতা,

সব্ব ধম্মানুভাবেন সদা সোত্থি ভবন্তু তে।

ভবতু সব্বমঙ্গলং রক্খন্তু সব্বদেবতা,

সব্ব সঙ্ঘানুভাবেন সদা সোত্থি ভবন্তু তে।

এরপর ধনঞ্জয় শ্রেষ্ঠিকর্তৃক কন্যা বিশাখাকে দেওয়া ১০টি উপদেশ পাঠ করে মুখে মুখে বলানো হয়:

বিশাখাকে পিতা ধনঞ্জয় সেত্ঠীর দশ উপদেশ:

  • ১. আগন্তুককে রাগ করে গৃহে প্রবেশ করতে দিও না। (অর্থ: অতিথির প্রতি সদ্ব্যবহার করো। অভ্যাগতকে রাগ বা বিরূপতায় গ্রহণ করো না।)
  • ২. যাত্রী বা ভিক্ষুককে অবজ্ঞা করো না। (অর্থ: যেসব ব্যক্তি সাহায্যের জন্য আসে, তাদের অবহেলা করো না; যথাসাধ্য সহানুভূতিশীল হও।)
  • ৩. দানযোগ্য বস্তু দান করতে দেরি কোরো না। (অর্থ: দান করতে হলে তা বিলম্ব না করে শ্রদ্ধা ও সদিচ্ছায় করো।)
  • ৪. লোকেরা যা বলে তা শুনে তৎক্ষণাৎ উত্তেজিত হয়ো না। (অর্থ: অন্যদের কথায় বা গুজবে কান দিয়ে রাগ করো না, বিবেচনার মাধ্যমে সাড়া দাও।)
  • ৫. গৃহের অভ্যন্তরীণ কথা বাইরে বলো না। (অর্থ: পারিবারিক গোপনীয়তা রক্ষা করো।)
  • ৬. বাইরের গোপন কথা ঘরে বলো না। (অর্থ: অন্যের গোপনীয়তা রক্ষা করো, বাড়ির লোকদের সঙ্গে তা শেয়ার কোরো না।)
  • ৭. গৃহে যা ভালো নয়, তাকে ভালো বলো না। (অর্থ: অন্যায়কে প্রশ্রয় বা অপ্রশংসিত কিছুকে প্রশংসা কোরো না।)
  • ৮. গৃহে যা ভালো, তাকে খারাপ বলো না। (অর্থ: ভালো ও ন্যায্য জিনিসকে অবমূল্যায়ন কোরো না।)
  • ৯. তোমার অলংকার ও পোশাক যেন স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির মর্যাদা ও অবস্থার সঙ্গে মানানসই হয়। (অর্থ: বিলাসিতা ও অহংকার পরিহার করো, নম্রতা ও সংযম চর্চা করো।)
  • ১০. স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির কথা মনোযোগ দিয়ে শুনে পালন করো। (অর্থ: পরিবারের বড়দের কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে মেনে চলো; দাম্পত্য জীবনে পারস্পরিক শ্রদ্ধা বজায় রাখো।)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *