ভেসাক উপলক্ষে ভ্যাটিকানের শুভেচ্ছা: সংলাপ শুধু শব্দে নয়, হোক কর্মে

ভেসাক: বিশ্ব বৌদ্ধদের উদ্দেশে আন্তরিক বার্তা পাঠাল ভ্যাটিকান | শান্তি ও ন্যায়ের পক্ষে একত্রে কাজের আহ্বান  জানানো হয়েছে তাতে।

গত ১২ মে ২০২৫, রোম/ধর্মশালাবুদ্ধ পূর্ণিমা বা ভেসাক উপলক্ষে ভ্যাটিকানের পক্ষ থেকে বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রতি শুভেচ্ছা ও সহমর্মিতা প্রকাশ করে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা প্রেরণ করা হয়েছে। এই বার্তায় ধর্মীয় সংলাপকে কেবল কথার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে বাস্তব শান্তিপূর্ণ কর্মে পরিণত করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

বার্তাটি প্রকাশ করেছে ভ্যাটিকানের আন্তধর্মীয় সংলাপ সংক্রান্ত দপ্তর (Dicastery for Interreligious Dialogue)। এর শিরোনাম—“আমাদের সময়ের মুক্তির আহ্বানে বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানদের সংলাপ”।

বার্তায় স্বাক্ষর করেছেন দপ্তরের প্রধান কার্ডিনাল জর্জ জ্যাকব কুভাকাড এবং সচিব মন্সিনিয়র ইনদুনিল জানাকারাত্নে কোদিথুওয়াক্কু।

ভেসাক উৎসবের মাহাত্ম্যে শুভেচ্ছা

বার্তায় বৌদ্ধদের ভেসাক উদযাপনের আনন্দে অংশগ্রহণ করে ভ্যাটিকান জানায়: “এই বছরের শুভেচ্ছাবার্তা আরও গভীর তাৎপর্য ধারণ করে, যেহেতু আমরা খ্রিস্টীয় জুবিলি বর্ষের প্রস্তুতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি।”

ধর্মীয় সম্মান ও সংলাপের ৬০ বছর

বিশেষভাবে স্মরণ করা হয়েছে ‘নোস্ত্রা এইতাতে’ (Nostra Aetate) নামক ঐতিহাসিক ঘোষণাপত্রকে, যেটি ১৯৬৫ সালে দ্বিতীয় ভ্যাটিকান কাউন্সিলের মাধ্যমে গৃহীত হয় এবং ২০২৫ সালে যার ৬০ বছর পূর্তি।
ঘোষণায় বলা হয়েছিল: “যে সমস্ত ধর্মে সত্য ও পবিত্রতা রয়েছে, ক্যাথলিক গির্জা তা অস্বীকার করে না।”

এই ঐতিহাসিক দলিল ধর্মীয় সংলাপ ও পারস্পরিক সম্মানকে বৈশ্বিক স্তরে উত্থাপন করেছিল।

সংলাপ হোক মানবতার পক্ষে কার্যকর উদ্যোগ

বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে যেখানে সংঘাত, বিভেদ ও দুঃখ-যন্ত্রণার ছায়া ঘনিয়েছে, বার্তায় জোর দেওয়া হয়েছে মুক্তিমুখী সংলাপের প্রয়োজনীয়তার ওপর। তবে ভ্যাটিকান সতর্ক করে দিয়ে বলেছে—

“সংলাপ যেন শুধুমাত্র কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ না থাকে। আমাদের উচিত এই শব্দগুলোকে রূপ দিতে বাস্তব কর্মে—শান্তি, ন্যায্যতা এবং মানব মর্যাদার পক্ষে।”

ধর্মের শক্তি ও পরস্পরের প্রজ্ঞা

ভ্যাটিকান মনে করে, বৌদ্ধ ধর্মের ‘মুক্তির পথ’ ও খ্রিস্টীয় ধর্মের ‘পূর্ণ জীবনের অনুসন্ধান’—দুয়ের মাঝে রয়েছে এক গভীর সাদৃশ্য। তারা লিখেছে:

“ধর্মগুলো মানব অস্তিত্বের জটিল প্রশ্নগুলোর প্রতিউত্তরে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে—যদি আমরা পরস্পরের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করি।”

ভিন্নতা নয়, ঐক্যই হোক মূল ভিত্তি

বার্তার শেষাংশে বলা হয়: “আমরা আশা করি, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ঐতিহ্য পরস্পরের পার্থক্যকে সম্মান করে যুগোপযোগী চ্যালেঞ্জগুলোর যৌথ উত্তর দিতে পারবে। বিশ্বজুড়ে শান্তি, ঐক্য ও ভালোবাসার মর্মবাণী ছড়িয়ে পড়ুক এই উৎসবের আলোকধারায়।”

বৌদ্ধবার্তা ডেস্ক রিপোর্ট
আপনার মতামত বা প্রতিক্রিয়া পাঠান: buddhabarta@gmail.com  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *