জেটিএস কোরিয়ার মানবিক সহায়তা মিয়ানমার শরণার্থীদের পাশে

বৌদ্ধবার্তা ডেস্ক | জুন ২০২৫

জেটিএস: দক্ষিণ কোরিয়ার মানবিক বৌদ্ধ সংস্থা Join Together Society (JTS Korea) সম্প্রতি তাদের তৃতীয় মানবিক সহায়তা মিশন সম্পন্ন করেছে মিয়ানমার শরণার্থীদের জন্য। এই তৎপরতা পরিচালিত হয়েছে থাইল্যান্ড-মিয়ানমার সীমান্তবর্তী মায়ে সট, চিয়াং মাই এবং চিয়াং দাও অঞ্চলে, যেখানে ২০টিরও বেশি কেন্দ্রে এক হাজারের বেশি মানুষের কাছে সাহায্য পৌঁছায়।

এই তৃতীয় মিশনটি ছিল JTS কোরিয়ার পক্ষ থেকে সাংগঠনিক দক্ষতা, সহানুভূতি ও বৌদ্ধ মূল্যবোধের বাস্তব প্রয়োগ। সংস্থাটি প্রখ্যাত কোরিয়ান বৌদ্ধ গুরু ভেনারেবল ফমন্যুন সুনিম এর প্রতিষ্ঠিত, যার মূল দর্শন হল: “অন্যকে সাহায্য করাই নিজেকে সমৃদ্ধ করার সর্বোত্তম উপায়”।

এই মিশনে JTS স্বেচ্ছাসেবকরা খাদ্যসামগ্রী, শিক্ষা উপকরণ এবং মৌলিক চাহিদাপূর্ণ সামগ্রী সরবরাহ করেন। স্থানীয় শরণার্থী বিদ্যালয়, অনাথ আশ্রম ও সুরক্ষিত ক্যাম্পে এই সহায়তা পৌঁছায়। বিশেষভাবে, কুং জাও শান ক্যাম্প-এ শৃঙ্খলাবদ্ধ পরিবেশে শিশু, নারী ও বৃদ্ধদের মধ্যে সমভাবে ত্রাণ বিতরণ করা হয়।

এছাড়াও, এক পা হারানো সৈনিক, রাজনৈতিক দমন-পীড়নের শিকার শিক্ষক ও নিরাপদ আশ্রয়ে আসা ছাত্রদের দেখা পান JTS-এর টিম। তাদের অভিজ্ঞতায় উঠে আসে শরণার্থী জীবনের চরম বাস্তবতা ও বেঁচে থাকার সংগ্রাম।

জেটিএস

বৌদ্ধ কর্মধারা ও সম্প্রীতির বার্তা:

JTS-এর এই সহায়তা মিশন Engaged Buddhism বা ‘অংশগ্রহণমূলক বৌদ্ধতা’র বাস্তব দৃষ্টান্ত। ভেন. ফমন্যুন সুনিমের নেতৃত্বে সংস্থাটি বহু বছর ধরে কাজ করছে মানবিক বিপর্যয়ে আক্রান্ত দেশে। এর আগেও তারা ক্যাম্বোডিয়া, লাওস, উত্তর কোরিয়া, ফিলিপাইন ও শ্রীলঙ্কা-তে সফলভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে।

মিয়ানমার সংকট: একটি মানবিক জরুরি অবস্থা

মিয়ানমারে ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপের দিকে। রাষ্ট্রপতি ও অং সান সু চি-সহ নির্বাচিত নেতৃবৃন্দকে গ্রেপ্তার করার পর থেকে শুরু হয় দমন-পীড়ন। হাজারো মানুষ প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে যাচ্ছে। এর মাঝে, মার্চ ২০২৫-এ ঘটে ৭.৭ মাত্রার ভূমিকম্প, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে।

JTS স্বেচ্ছাসেবকরা শিশুদের সঙ্গে ঐতিহ্যবাহী খেলা খেলেছেন, বৌদ্ধ মঠে থাকা বালক সন্ন্যাসীদের সঙ্গে সময় কাটিয়েছেন এবং অনাথ শিশুদের আশ্রয়কেন্দ্রে ভিজিট করেছেন। এক স্বেচ্ছাসেবক বলেন, “শুধু ত্রাণ নয়, আমরা চেষ্টা করেছি এই শিশুদের জন্য একটি হাসি, একটু ভরসা এনে দিতে।”

জেটিএস কোরিয়ার এই মানবিক সহায়তা আমাদের শেখায়—সহানুভূতির শক্তি সীমাহীন। সাধারণ মানুষের মাঝেও যখন থাকে অসাধারণ দায়িত্ববোধ, তখন সেখানেই গড়ে ওঠে এক মানবিক ভবিষ্যৎ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *