নেপালে পঞ্চম শতাব্দীর বুদ্ধমুর্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠা সম্পন্ন

নেপালে পঞ্চম শতাব্দীর একটি বুদ্ধমুর্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। নেপালের রাজধানী শহর থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার পূর্বে কাঠমান্ডু উপত্যকার ঐতিহাসিক শহর ললিতপুরে, পঞ্চম শতাব্দীর এই প্রাচীন বৌদ্ধ মন্দির, মঠ এবং বৌদ্ধ মুর্তিটি পুনরুদ্ধার ও স্থানীয় শ্রী নপিচন্দ্র মহাবিহারে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠা করা হয়।

অনুষ্ঠানের নেতৃত্বে ছিলেন ললিতপুরের মেয়র চিরি বাবু মহারজান এবং নেপালে ভারতের রাষ্ট্রদূত নবীন শ্রীবাস্তব। ঐতিহাসিক স্থানটি প্রায় ৩৮.৪ মিলিয়ন নেপালি রুপি ব্যয়পূর্বক পুনরুদ্ধার সম্ভব হয়েছে যা মার্কিন ডলারের হিসেবে প্রায় US$288,900।

নেপালে পঞ্চম শতাব্দীর বুদ্ধমুর্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠা সম্পন্ন

অনুষ্ঠানের মূল বক্তব্যের সময় মেয়র চিরি বাবু মহারজান ভারত ও নেপালের মধ্যে দৃঢ় সম্পর্ক এবং সহযোগিতার উপর জোর দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, দুটি দেশ ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে একই ঐতিয্য বহন করে, কাজেই দুটি দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অটুট থাকবে।

ভারতীয় রাষ্ট্রদূত বলেন, “ভারত এবং নেপালের ঐতিহাসিক সাংস্কৃতিক গোড়া এক এবং ইতিহাস ঐতিহ্যেও প্রচুর মিল রয়েছে যা আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করা আবশ্যক। কাজেই এই ললিতপুরের মতো ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলিকে পুনরুদ্ধার করা আমাদের সাধারণ প্রচেষ্টা। সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারের জন্য ভারত নেপালের সাথে কাজ করছে।”

মেয়র চিরি বাবু বলেন, ”ললিতপুর এবং নেপালের বিভিন্ন স্থানে ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য ভারত যেভাবে নেপালের পাশে দাঁড়িয়েছে তার জন্য আমি ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।” তিনি নেপালে ভূমিকম্প-পরবর্তী পুনর্গঠন প্রচেষ্টার জন্য ভারতের সহায়তাকে অতুলনীয় বলে বর্ণনা করেছেন।

ললিতপুর প্রাচীন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যবাহী স্থানের উল্লেখযোগ্য সম্পদের পাশাপাশি এর ঐতিহ্যবাহী শিল্প ও কারুশিল্পের জন্য সারা বিশ্বে বিখ্যাত। ললিতপুরে প্রায় তিন লক্ষ বিভিন্ন জাতিগত জনসংখ্যার মধ্যে ৭২ শতাংশ হিন্দু এবং ১৯ শতাংশ বৌদ্ধ।

পাটন দরবার চত্বরের উত্তরে নপিচন্দ্র মহাবিহার অবস্থিত। যদিও এটি ১৯৩৪ সালে একটি ভূমিকম্পের আঘাতে মূল কাঠামোর বেশিরভাগই ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল, তবে মূল মন্দিরটি ১৯৮০ এর দশকে এবং সংলগ্ন কাঠামোটি ২০১৩ সালে পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। মঠ ভবনটি মূল মন্দিরের ভবন দ্বারা বেষ্টিত একটি ডুবে যাওয়া কেন্দ্রীয় প্রাঙ্গণ নিয়ে গঠিত। স্মৃতিস্তম্ভটি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ কৌশলের জন্য ভারত সরকারের খসড়া পরিকল্পনার অধীনে, ঐতিহ্যবাহী নির্মাণ সামগ্রী এবং পদ্ধতি ব্যবহার করে মাজার ভবনটি পুনর্গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছিল।

নেপাল একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হওয়া সত্বেও, নেপাল ধর্মীয় বিশ্বাস এবং ঐতিহ্যের দিক থেকে অত্যন্ত বৈচিত্র্যময়। নেপালি জনগণের প্রায় ৮১.২ শতাংশ হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও সেখানে অন্যান্য ধর্মের অনুসারীদের বাস করার অধিকার অবাধ। জনসংখ্যার দ্বিতীয় বৃহত্তম অংশ বৌদ্ধ যারা সংখ্যায় প্রায় মোট জনসংখ্যার ৮.২ শতাংশ, এখানে ৫.১ শতাংশ মানুষ ইসলাম ধর্ম পালন করেন। কিরাত মুন্ধুম নামে একটি ধর্মে অনুসারী আছে প্রায় ৩.২ শতাংশ এবং খ্রিস্টান সম্প্রদায় আছে ১.৮ শতাংশ। প্রকৃতি উপাসনা, বন, শিখ, জৈন ধর্ম সহ অন্যান্যরা মোট জনসংখ্যার ১ শতাংশের নিচে বাস করে এখানে।

শেয়ার করে সবাইকে পড়ার সুযোগ দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!