মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সান জোসে সিটিতে বৌদ্ধ বিহার নির্মাণের অনুমোদন পেয়েছে কম্বোডিয়ান বৌদ্ধরা। সান জোসে সিটি কাউন্সিল গত সপ্তাহয় কম্বোডিয়ান বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের পরিকল্পিত বৌদ্ধ মন্দির নির্মাণের জন্য এই অনুমোদন দিয়েছে।
কাউন্সিলের সভায় উপস্থিত অনেক বৌদ্ধ ভিক্ষুসহ অনেক নেত্রীবৃন্দ উপস্থিত ছিল। এমন খুশির সংবাদে কাউন্সিল সভা কক্ষ করতালিতে মুখরিত হয়ে ওঠে। এখানে বসবাসরত বৌদ্ধ সম্প্রদায় একটি বৌদ্ধ মন্দিরের অনুমোদন পাওয়ার জন্য বছরের পর বছর ধরে কাজ করে আসছিল। সিটি কাউন্সিল অনুমোদন দিচ্ছিল না, কারণ অনেক স্থানীয় বাসিন্দা এই বৌদ্ধ বিহার নির্মাণ বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন।
বৌদ্ধ সংগঠন খেমার বুদ্ধ ফাউন্ডেশন এর সদস্য লিয়ানা লাম বলেন, “এটি কম্বোডিয়ান তথা সমগ্র বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের জন্য একটি নির্মল আনন্দের সংবাদ।”
সভায় স্থানীয় বাসিন্দারা যারা মন্দির প্রকল্পের বিরোধিতা করেছিল তাদের মূল অভিযোগ ছিল যে এখানে বৌদ্ধ মন্দির প্রতিষ্ঠিত হলে ট্র্যাফিক এবং আশেপাশের প্রতিবেশি অন্যান্য সম্প্রদায়ের সমস্যা হতে পারে। তারা আরো উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল যে বৃহৎ বৌদ্ধ মন্দিরটি এলাকায় অবাঞ্ছিত শব্দ সৃষ্টি করে শব্দ দূষনের কারণ হতে পারে।
সান জোসে স্পটলাইটে দেওয়া এক স্বাক্ষাতকারে স্থানীয় বাসিন্দা ডেমিয়েন মেকার বলেন, “আমাদের আশেপাশের এলাকাটি আসলে খুব বৈচিত্র্যময় এবং খুব গ্রহণযোগ্য, এখানে কোনও বর্ণবাদ নেই, মন্দির বা গির্জা বা এই জাতীয় কিছুর প্রতি কোনও ঘৃণা নেই। আমরা আসলে এটাকে স্বাগত জানাই। আমরা আসলে খুব শান্ত প্রতিবেশী এবং আমরা এটি সবসময় বজায় রাখতে চাই।”
আরেক প্রতিবেশী মন্দিরটিকে একটি বাণিজ্যিক সুবিধার সাথে তুলনা করে বলেছেন, “এটি স্থাপনাটি আমাদের এলাকার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। আমি জানি, জনাব মেয়র, আপনি কমন সেন্সে করেছেন তবে এই সিদ্ধন্তটি এতো তাড়াতাড়ি নেওয়া উচিত হয়নি।”
বিহার নির্মাণের অনুমোদন পেলেও এখানে কিছু শর্ত জুড়ে দিয়েছে সিটি কাউন্সিল। শর্তে বলা হয়েছে মন্দিরের পরিকল্পনা অনুসারে, ধ্যান এবং প্রার্থনার জন্য নিয়মিত সভায় ২০-৫০ জন পূণ্যার্থীর বেশি অংশগ্রহণ করতে পারবে না। বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানে জন্য অনসাইটে ৩০০ জনের বেশি দর্শনার্থী থাকা যাবে না। বিহারটিতে সর্বোচ্চ আটজন ভিক্ষু বাস করতে পারবে।
নির্মাণাধীন মন্দির জেলার প্রতিনিধি কাউন্সিলর সদস্য ডমিঙ্গো ক্যান্ডেলাস গণমাধ্যমকে বলেন, শহরটি প্রতিবেশীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য বৌদ্ধ বিহার প্রতিষ্ঠা প্রকল্পে প্রায় ৪০ টি শর্ত দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বৃহত্তর ইভেন্টগুলির জন্য ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণ এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা, সেইসাথে সকাল ৯ টা থেকে ১০ টা পর্যন্ত সংক্ষিপ্ত নিয়মিত ধর্মীয় কাজ।
ক্যান্ডেলাস বলেন, “চার বছর ধরে এই সম্প্রদয়ের বিভিন্ন কর্মকান্ড পর্যালোচনা এবং তাদের সাথে আলোচনার পর আমাদের সঠিক কাজটি করার সময় এসেছে। কম্বোডিয়ান বৌদ্ধ সম্প্রদায়কে উপাসনা করার এবং তারা যে ভয়ঙ্কর ট্রমা সহ্য করেছে তা থেকে নিরাময় করার জন্য বিহার তৈরীর জায়গা দেওয়া হয়েছে।”
মন্দিরটি শহরের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে এভারগ্রিন পাড়ায় অবস্থিত হবে। একবার সম্পূর্ণ হলে, এটি হবে উপসাগরীয় অঞ্চলের বৃহত্তম বৌদ্ধ মন্দির, যার উত্তরে সান ফ্রান্সিসকো এবং ওকল্যান্ড অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এটি সকলের জন্য উন্মুক্ত একটি কমিউনিটি সেন্টার এবং এলাকার ক্রমবর্ধমান কম্বোডিয়ান সম্প্রদায়ের জন্য একটি ভবনে পরিনত হবে।
মন্দির নির্মাণের অর্থ দাতা ল্যাম বলেন, “এটি আমাদের জন্য শুধুমাত্র একটি ধর্ম নয়, এটি একটি জীবনযাত্রার উপায়।”
বৌদ্ধ ভিক্ষু সাদুল সন বলেন, “যেমন আপনি এখানে দেখছেন, আমরা এটিকে একটি মন্দির বলি কিন্তু এটি শুধুমাত্র একটি ঘর কারণ আমাদের অন্য কোন জায়গা নেই।”
এখানে আমাদের আরো জায়গা প্রয়োজন এবং বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের জীবনযাত্রা পরিচালনা করার জন্য মন্দিরটি অতীব প্রয়োজনীয় ছিল। শুধু ধর্মীয় উপাসনার জন্য নয়, আমাদের শিক্ষার, সংস্কৃতি, ভাষা, কৃষ্টি টিকিয়ে রাখার জন্য এমন একটি স্থপনা অবশ্যক হয়ে পড়েছে। আমরা সিটি কাউন্সিলকে ধন্যবাদ জানাই।
লাম এবং মন্দির নির্মাণ কমিটির অন্যরা স্থানীয় বাসিন্দাদের আশ্বস্ত করেছেন যে তারা একটি সুন্দর সম্পর্ক নিশ্চিত করতে আশেপাশের সবার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ চালিয়ে যাবেন। এটাও নিশ্চিত করা হয় যে মন্দিরটি শুধুমাত্র কম্বোডিয়ান বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সদস্যদের জন্য হবে না, এটি হবে সার্বজানীন একটি প্রতিষ্ঠান।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বৌদ্ধরা বিশ্বের বিভিন্ন জাতি, জাতীয়তা, ধর্মীয় ঐতিহ্য এবং দেশ থেকে আসে। ২০১২ সালে, ইউটি সান দিয়েগো অনুমান করে মার্কিন বৌদ্ধধর্ম অনুশীলনকারী ১.৪ মিলিয়ন লোক, যাদের মধ্যে ৪০% দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় বসবাস করছে। শতাংশের পরিপ্রেক্ষিতে, হাওয়াই এর বৃহৎ এশীয়-মার্কিন সম্প্রদায়ের কারণে জনসংখ্যার ৮% এ সবচেয়ে বেশি বৌদ্ধ রয়েছে।
আরো পড়ুন>>
- প্রয়াত জ্যোতি:পাল মহাথের’র প্রয়ান দিবস পালিত
- রাউজানে দেশ ও জাতির কল্যানে পরিত্রাণ সূত্রপাঠ
- রোজাদারদের ইফতার বিতরণ করেছে বৌদ্ধরা
- বৌদ্ধধর্মকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিল বেলজিয়াম
- রামুতে ১০১ জনকে প্রব্রজ্যা দীক্ষা দিবে রাংকুট বনাশ্রম বৌদ্ধ বিহার
- বৌদ্ধধর্মের উত্তান-পতন: নবজাগরণের সম্ভাবনা
- মুক্তিযুদ্ধে বৌদ্ধদের অবদান
- হিন্দুধর্ম ত্যাগ করে যারা বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেছেন