প্রথমবার হোয়াইট হাউসে বৈশাখী পূর্ণিমা উদযাপন।

ইতিহাসে প্রথম বারের মতো, আমেরিকার প্রেসিডেন্টের বাসভবন হোয়াইট হাউসে বৈশাখী পূর্ণিমা পালন করেছে। বুদ্ধের জন্ম, বুদ্ধত্বলাভ এবং মহাপরিনির্বাণ লাভ এই তিনটি স্মৃতির স্মরণার্থে একটি মোমবাতি জ্বালিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা করা হয়। সেকেন্ড জেন্টলম্যান ডগলাস এমফোফ এবং বৌদ্ধ ধর্মের তিনটি প্রধান শাখার (বজ্রযান, মহাযান, থেরবাদ) প্রতিনিধিগণের উস্থিতিতে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও প্রার্থনার আয়োজন করা হয়।

Tarthang Tulku Rinpoche. From dharma-college.com
Tarthang Tulku Rinpoche

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেক্রেটারি অ্যান্টনি ব্লিংকেন এই অনুষ্ঠানে বলেন, “এই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আমরা বিশ্বজুড়ে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অমূল্য অবদানকে উদযাপন করি। আমরা আজ বৌদ্ধদের সাথে যোগ দিয়েছি নিজেদের মধ্যে তাদের মধ্যে থাকা সহযোগীতার বিশ্বজনীন নীতি, শান্তি এবং মানবতার প্রতি সম্মান ও মর্যদাকে ধারণ করার জন্য।” “এই দিনটি আমাদের সকলকে অংশীদারি মূল্যবোধের প্রতিফলন ঘটাতে এবং সম্মিলিতভাবে কাজ করার মাধ্যমে সর্বোত্তম পৃথিবী গড়ে তোলার জন্য অনুপ্রাণিত করবে।” (ইন্ডিয়ান টাইমস)

ভেসাক, যাকে বুদ্ধ পূর্ণিমা (বা আরও অনানুষ্ঠানিকভাবে বুদ্ধের জন্মদিন) নামেও পরিচিত। এই দিন শাক্যমুনি বুদ্ধের জীবনের তিনটি প্রধান ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেয়। গঠনা গুলো যথাক্রমে: বৌদ্ধধর্মের জন্ম, তথা শাক্যমুনি বুদ্ধের জন্ম, আলোকপ্রাপ্তি (সোপাদিষে-নির্বাণ) এবং পৃথিবী ত্যাগ (মহাপরিনির্বাণ)।  বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষ্যে এশিয়ার অনেক দেশে দিনটি সরকারী ছুটির দিন এবং বিশ্বের লক্ষ লক্ষ বৌদ্ধ দিনটি উদযাপিত করে। যদিও ছুটির তারিখটি দেশ ভেদে বিভিন্ন হতে পারে তবে বৌদ্ধে ঐতিহ্য এবং জাতীয় রীতিনীতি অনুসারে মে মাসে পূর্ণ চাঁদের তিথিতেই দিনটি পালন করা হয়।

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এক বিবৃতির মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সাথে একাত্বতা ঘোষণা করেন। তিনি বুধবার হোয়াইট হাউস কর্তৃক প্রকাশিত তার সরকারী বার্তায় ঘোষণা করেন-

Joe Biden
Joe Biden

“বুদ্ধের জন্ম, জ্ঞানার্জন এবং মৃত্যু দিনটিকে স্মরণ করার মাধ্যমে [ফার্স্ট লেডি] জিল বাডেন এবং আমি আমেরিকা এবং বিশ্বজুড়ে বৌদ্ধদের কাছে আমাদের উষ্ণ শুভেচ্ছা জানাই। একটি প্রদীপের আনুষ্ঠানিক আলোকসজ্জা, পবিত্রতার প্রতীক যা ২৫০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে পালিত হয়ে আসছে। দিনটি আমাদের বৌদ্ধ ধর্মে নিহিত করুণা, নম্রতা, মানবতা এবং নিঃস্বার্থতার শিক্ষাগুলির স্মরণ করিয়ে দেয় যা আজকের দিনে খুবই দরকার। আজকের এই দিনে আমরা আমেরিকার বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অনেক অবদানকে স্মরণ করি যা আমাদের সম্প্রদায় এবং দেশকে সমৃদ্ধ করেছে। আমরা সবাই একত্রে সামনের উজ্জ্বল দিন সৃষ্টি করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।” (হোয়াইট হাউস)

“বজ্রাযান বৌদ্ধধর্মের প্রতিনিধি হিসাবে সর্ব প্রথম তারথং তুলকু রিনপোচে হোয়াইট হাউসে প্রদীপ জ্বালিয়ে প্রথম ভেসাক দিবস উদযাপন করেন!” জঙ্গসার খিয়ন্তসে রিনপোচের সংঘঠন, বুদ্ধধর্ম কার্যকলাপকে সমর্থনকারী বৌদ্ধ গোষ্ঠীগুলির একটি আন্তর্জাতিক সমষ্টিগত অংশ  “Siddhartha’s Intent India” প্রকল্পের পরিচালক প্রশান্ত ভি, বলেন,- “রিনপোচের কন্যা, আমেরিকা আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ সমিতি’র সভাপতি সেমো ওয়াংমো ডিক্সি এই অনুষ্ঠানের সমন্বয় করেন, অনুষ্ঠানে সেকেন্ড জেন্টলম্যান ডগলাস এমফোফ, মহাযান বৌদ্ধদের প্রতিনিধি রেভ. মারভিন হারদা, থেরবাদ বৌদ্ধদের প্রতিনিধি শ্রদ্ধেয় উঃপারাতানা উপস্থিত ছিলেন।”

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা এক পৃথক বার্তায় মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হ্যারিস বলেছেন:

আজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এবং বিশ্বজুড়ে বৌদ্ধরা ভেসাক উদযাপনের মাধ্যমে পূজনীয় বুদ্ধের জন্ম, জ্ঞানার্জন এবং মহাপরিনির্বাণকে সম্মান জনায়। ভেসাক নিঃসন্দেহে, একে অপরের প্রতি সমবেদনা, ঐক্য এবং যত্নের প্রতীক। এই মানবতার শিক্ষার চেয়ে কোন গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা আজ হতে পারে না। ডগলাস এমফোফ এবং আমি যারা দিনটি উদযাপন করছেন তাদের সকলকে শুভ কামনা জানাই!

সেক্রেটারি ব্লিংকেনও ভেসাক উপলক্ষ্যে নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বার্তা শেয়ার করেছেন:

#ভেসাকডেতে, আমরা বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অমূল্য অবদানকে উদযাপন করি। দিনটি আমাদের সকলকে ‍সহানুভূতি, শান্তি এবং মানবিক মর্যাদার প্রতি শ্রদ্ধার জন্য অনুপ্রাণিত করে।

হোয়াইট হাউসে আয়োজিত অনুষ্ঠানটির সঞ্চলন করেন ধর্ম ইন্টু ফাউন্ডেশনের সভাপতি শেকার নরসিমহান।

সেমো ওয়াংমো ডিক্সি বলেন- “অত্যান্ত আশ্চর্যজনক যে আমেরিকান গণতন্ত্রের কেন্দ্রবিন্দুতে বৌদ্ধ অনুশীলনের তিনটি মহান শাখা এক সাথে প্রার্থনা করেছে।” “এই শুভ দিনে বুদ্ধের জীবন ও শিক্ষা প্রতিপালনের শপথ এখানেই নেওয়া উচিত। আজ হোয়াইট হাউসে বসে যে প্রার্থনা করেছি তার প্রভাবে সমস্ত প্রাণীর জীবনে নিয়ে আসুক অনাবিল শান্তি আর আরোগ্য, বিশেষত ধর্মের প্রাণকেন্দ্র, ভারতে বসবাসকারী আমাদের ভাই-বোনদের জীবনে। আমেরিকা হোয়াইট হাউসে প্রজ্জ্বলিরত প্রদীপের আলো সমস্ত বিশ্ব জুড়ে জ্ঞান ও সম্প্রতির আলো হয়ে ছড়িয়ে পড়ুক। আমেরিকার বৌদ্ধ ইতিহাসকে সম্মান ও স্মরণীয় রাখতে আমরা আজ এক মিলিয়ন প্রদীপ জ্বালিয়ে দিচ্ছি। ”

ওয়াশিংটন, ডিসি ভিত্তিক পিউ রিসার্চ সেন্টারের তথ্য অনুসারে, বৌদ্ধরা মার্কিন জনসংখ্যার ১.২ শতাংশ বা প্রায় ৩.৭ মিলিয়ন লোকের প্রতিনিধিত্ব করে। আমেরিকার তৃতীয় বৃহত্তম ধর্ম হিসাবে বৌদ্ধ ধর্মকে চিহ্নিত করেছে পিউ রিসার্চ। যদিও আমেরিকান বৌদ্ধদের বেশিরভাগই এশীয় তবুও আধ্যাত্মিক, সংস্কৃতিক ও চলাফেরা সমস্ত বৌদ্ধদের মধ্যে একই।

আরো পড়ুন>>
শেয়ার করে সবাইকে পড়ার সুযোগ দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!