বুদ্ধ পূর্ণিমাঃ ১ম পর্ব

আগামী ২৬ মে, ২০২১ ইং বৌদ্ধদের অত্যান্ত পবিত্র একটি দিন। কারণ এই দিন বৈশাখী পূর্ণিমা বা বুদ্ধ পূর্ণিমা। আগামী ১০ জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৮ বাংলা, ২৫ মে ২০২১, রোজ মঙ্গলবার ভারতীয় সময় ৮টা ২৯ মিনিটে এবং বাংলাদেশ সময় রাত ৮টা ৫৯ মিনিটে পূর্ণিমা তিথি শুরু হবে।  পরের দিন ভারতীয় সময় বিকাল ৪টা ৪৩ মিনিট ও বাংলাদেশ সময় ৫টা ১৩ মিনিটের সময় পূর্ণিমার তিথি শেষ হবে।

বৌদ্ধ পূর্ণিমা বৌদ্ধ বর্ষপঞ্জিতে সর্বাধিক পবিত্র দিন। এটি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে

 when was gautama buddha born and died
Collected photo

গুরুত্বপূর্ণ উৎসব এবং মহা উৎসবের সাথে উদযাপিত হয়।

বৌদ্ধ পূর্ণিমাকে ইংরেজীতে Vesak Day বলে। এর সঠিক তারিখটি চন্দ্র ক্যালেন্ডারে চতুর্থ মাসে প্রথম পূর্ণিমায় হয়। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে তারিখটি বছরের পর বছর পরিবর্তিত হয় তবে সাধারণত দিনটি মে মাসেই হয়।

যদিও এই ধর্মের অনুসরীরা প্রতিটি পূর্ণিমাটিকে পবিত্র হিসাবে বিবেচনা করে তবে বৈশাখ মাসের চাঁদের পূর্ণিমার বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। কারণ এই দিনটিতে বুদ্ধের জীবনের ৩টি বিশেষ ঘটনা ঘটেছিল। এই দিন বুদ্ধের জন্ম, বুদ্ধত্ব লাভ (জ্ঞান লাভ), ও মহা পরিনির্বাণ (মৃত্যু বরণ) লাভ করে ছিলেন।

বুদ্ধ পূর্ণিমার ঐতিহ্য

বৌদ্ধ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা শাক্যমুনি বুদ্ধ আনুমানিক ৩০০০ বছর পূর্বে বর্তমান নেপালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর জন্ম ও মৃত্যুর সঠিক তারিখ সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত রয়েছে। তবে বৌদ্ধে ঐতিহ্য অনুসারে তিনি খ্রিস্টপূর্ব ১০২৯ সালের ৮ এপ্রিল এক বৈশাখী পূর্ণিমায় জন্ম গ্রহণ করেন, ২৯ বছর বয়সে আষাঢ়ী পূর্ণিমার রাতে বুদ্ধ সংসার ত্যাগ করেন, বুদ্ধ ৩৫ বছর বয়সে বৈশাখী পূর্ণিমার রাতে বুদ্ধত্ব লাভ করেন  এবং খ্রিস্টপূর্ব ৯৪৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ৮০ বছর বয়সে মৃত্যু ব

 buddha got enlightenment after how many days

রণ করেন। আবার অনেক বৌদ্ধ পন্ডিত তাঁর জন্ম খ্রিষ্টপূর্ব ১০২৯ সলের আরো ৫০০ বছর পরে বলে মনে করেন। এই তিনটি বিশেষ দিনকে স্মরণ করতে বৌদ্ধরা যুগ যুগ ধরে বৈশাখী পূর্ণিমা পালন করে আসছে।

যদিও অনেক বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা এপ্রিল মাসেই বুদ্ধের ঐতিহাসিক জন্ম দিবস পালন করে আসেছেন তবে এর সঠিক তারিখ সম্পর্কে এখনও প্রশ্নে রয়ে গেছে। ধর্মীয় গ্রন্থ পর্যালোচনা ও আধুনিক প্রত্নতাত্ত্বিক এবং ঐতিহাসিকগণ গবেষণা করে নিশ্চিত করেন যে যুবরাজ সিদ্ধার্থ গৌতম এই সময়েই জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

বিশ্বব্যাপি বৌদ্ধরা এই দিন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করে বিহারে যায়, গৃহীরা অষ্টশীল গ্রহণ ও পালন করে।  অনেকে সাদা

পোশাক পরতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। এই দিন বিভিন্ন দেশেরে বৌদ্ধরা পায়েস রান্না করে। বৌদ্ধ কিংবদন্তি অনুসারে, বুদ্ধ সুজাতা নামে এক মহিলার পয়েস আহার করেই বুদ্ধত্ব লাভ করেছিলেন। তখন থেকেই পায়েস আহার করা একটি ঐতিহ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশের বুদ্ধ পূর্ণিমা

যে অঞ্চলটি আজ বাংলাদেশ নামে পরিচিত, ত্রয়োদশ শতাব্দীর ইসলাম ধর্ম আগমনের আগে এটি বৌদ্ধ দেশ ছিল, তাই বেশিরভাগ বাংলাদেশী মুসলমানদের মধ্যে হিন্দু বংশের পরিবর্তে বৌদ্ধ বংশধর বেশি।

বর্তমানে বাংলাদেশে বৌদ্ধ জনসংখ্যা এতই কম যে তা অত্যান্ত নগন্য। উইকিপডিয়া তথ্যমতে সব মিলিয়ে ৮,৯৮,৬৩৫ জন মত বৌদ্ধ বর্তমানে বাংলাদেশে বাস করে যা মোট জনসংখ্যার ০.৬%। সে হিসেবে বৌদ্ধধর্ম বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম ধর্ম।

বাংলাদেশে এই অনুষ্ঠানের নাম বৌদ্ধ পূর্ণিমা। পূর্ণিমার আগের দিন বৌদ্ধ ভিক্ষু এবং পুরোহিতরা বৌদ্ধ মন্দিরগুলো বর্ণিল সজ্জায়, মোমবাতি দিয়ে সজ্জিত করেন।

পূর্ণিমার দিন, রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী বৌদ্ধ ধর্মের ইতিহাস, গুরুত্ব এবং দেশের ধর্মীয় সম্প্রীতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। দুপুরের পর থেকে মন্দির এবং বিহারগুলির আশেপাশে বড় বড় মেলা বসে, বাঙালি খাবার (মূলত নিরামিষ), জামাকাপড় এবং খেলনা বিক্রি করে। সবচেয়ে বড় মেলাটি বসে চট্টগ্রামের বৈদ্যপাড়া গ্রামে, যা বোধিদ্রুম মেলা নামে সমধিক পরিচিত।

বুদ্ধের জীবনী অভিনয় করেও উপস্থাপন করা হ Buddha's death storyয়। বৌদ্ধ ভিক্ষুরা ধর্ম ও পঞ্চ আদেশ (পঞ্চশীল) সম্পর্কে উদযাপনকারীদের শিক্ষা দেয়। এরপরে সবাই বিহার অভ্যন্তরে একটি সমবেত প্রার্থনায় যোগ দেন। সেখানে ত্রিরত্নের শরণ নিয়ে আদর্শ জীবন যাপনের বিষয়ে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা আলোচনা ও ধর্মদেশনা করেন।  শেষে বিশ্ব শান্তি কামনা করে সকল জীবের সুখ ও নিরোগ জীবন কমনা করা হয়।

দিবসটির গুরুত্ব তুলে ধরতে এই দিন দেশের জাতীয় সংবাদপত্রগুলি বিভিন্ন নিবন্ধ ছাপিয়ে থাকে, বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং কিছু কিছু বেসরকারী টিভি চ্যানেল সমহু বুদ্ধের জন্মদিনের তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে।

শেয়ার করে সবাইকে পড়ার সুযোগ দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!