অগ্রদূত বৌদ্ধ সংগঠনের ৭ম বর্ষপূর্তি উদযাপন সম্পন্ন

অগ্রদূত: বৃহত্তর চট্টগ্রামের বৌদ্ধ ধর্মীয় ও সেবামূলক সংগঠন অগ্রদূত উদযাপন করেছে তাদের ৭ম বর্ষপূর্তি। গত ১৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ইং, রোজ শুক্রবার “সর্বাগ্রে মোরা সেবার দূত, সপ্তপূর্ণে অগ্রদূত” প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে অগ্রদূত বৌদ্ধ সংগঠনের অগ্রগামী তরুণ সদস্য, উপদেষ্টা, দাতা এবং শুভাকাঙ্খিদের পৃষ্টপোষকতায় বিভিন্ন ধর্মীয় ও সেবামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে তাদের ৭ম বর্ষপূর্তি সম্পন্ন করেছে।

৭ম বর্ষপূর্তি উদযাপনকে কেন্দ্র করে একটি সুন্দর উদযাপন কমিটি গঠন করা হয়। সপ্তবর্ষকে কেন্দ্র করে ৭ সদস্য বিশিষ্ট্য উদযাপন গঠন করা হয়। কমিটিতে ছিলেন আহবায়ক সুষ্ময় বড়ুয়া, সদস্য সচিব প্রত্যয় চৌধুরী ঋদ্ধি, অর্থসচিব প্রজ্ঞা বড়ুয়া, প্রধান সমন্বয়কারী অমিত বড়ুয়া, সমন্বয়কারী রিন্টু বড়ুয়া, সদস্য হিসেবে ছিলেন হিমেল চৌধুরী এবং সুমিত বড়ুয়া।

১৫ই ডিসেম্বর প্রভাতে নন্দনকান থেকে শুরু হওয়া বাস ভ্রমনের গন্তব্য ছিল রত্ন ম্রাই অং বৌদ্ধ বিহার এবং মারমা ল্যাংগুয়েজ এডুকেশন সেন্টার বালুখালী, বেতবুনিয়া, কাউখালী, রাঙ্গামাটিতে। বুদ্ধপূজা ও সমবেত বন্দনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করেন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি বাবু প্রত্যয় বড়ুয়া নিলয়। সপ্তম বর্ষপূর্তি কেন্দ্র করে ৭টি পূজা করা হয়।

আশ্রমের ছেলে-মেয়ে, গ্রামের প্রতিবেশী,সংগঠনের সকল সদস্যদের নিয়ে বুদ্ধ বন্দনা,পঞ্চশীল গ্রহণ, অষ্টপরিষ্কার দান, পানীয় ও অন্যান্য সামগ্রী দান,ধর্মোপদেশ শ্রবণ এবং একই সাথে ভান্তে ও শ্রামণদের ছোঁয়াইং খাওয়ানোর মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্ব।

অগ্রদূত বৌদ্ধ সংগঠনের ৭ম বর্ষপূর্তি উদযাপন সম্পন্ন

দ্বিতীয় পর্বের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অত্র বিহারের পূজনীয় ভিক্ষু ভদন্ত সুধক্ষ্য স্থবির সহ শ্রামণসংঘ। সুধক্ষ্য স্থবির ভান্তে তার দেশনায় বলেন এই বিহার এবং আশ্রম রাঙামাটির এমন এক অঞ্চল এ অবস্থিত যেখানে কখনো কোনোদিন ভালোভাবে কেউ সহায়তা করেনি। অনেকে প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা রাখেনি। তিনি অগ্রদূত পরিবারকে ধন্যবাদ জানান তাদের এই অঞ্চলে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য। তিনি অগ্রদূত পরিবারের সকলের নিরোগ দীর্ঘায়ু জীবন কামনা করেন।

সংগঠনের উপদেষ্টা বাবু সুজয় বড়ুয়া বলেন অগ্রদূত বৌদ্ধ সংগঠন সেবামূলক কাজের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করে ২০১৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন ধর্মীয় ও সেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। বর্তমানে অগ্রদূত ৭ম বর্ষ পূরণ করে অষ্টমে পদার্পণ করেছে।

বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সকলের সম্মিলিত উদ্যোগে সুবিধাবঞ্চিত শিশু যারা কিনা তাদের প্রয়োজনীয় কোনো সুযোগ সুবিধা সহজে লাভ করতে পারে না তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। যা বরাবরের মতোই মুগ্ধ করার মতো। সকলের প্রতি আমার অনুরোধ, আপনারা সকলেই সৎ, মানবিক এবং ধর্মীয় কাজে এভাবে সবসময় নিজেদের নিয়োজিত রেখে অন্যদেরও আগ্রহী করে তুলবেন। এই যে আজকে এখানে শিশুরা তারাও একদিন বড় হবে। বড় হয়ে তাদের মধ্য থেকেই কেউ না কেউ মানবিক কাজে এগিয়ে যাবে।

তিনি যোগ করে বলেন, শিশুরা হচ্ছে ভেজা মাটির মতোই, তাদের আমরা যেভাবে আচরণ করব যেভাবে ব্যবহার শিখাব তারা ঠিক সেটাই অনুকরণ করবে। তাই আমরা যদি ভালো কিছু করে দেখিয়ে, ধর্মীয় কাজ করে, সেবামূলক কাজ করে, শিক্ষা উপকরণ দান করে সামান্য পরিমাণ কিছু যদি শিখিয়ে যেতে পারি তবেই আমাদের সকলের সার্থকতা।

এত সুন্দর আয়োজনের জন্য অগ্রদূত এবং গঠিত বর্ষপূর্তি উদযাপন পরিষদের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। অগ্রদূতের সকল সদস্য ভবিষ্যতে এভাবে আরো ভালো ও মহৎ কাজে এগিয়ে এসে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কাজ করুক এই আশা করছি। সকলের জন্য শুভকামনা।

সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি বাবু প্রত্যয় বড়ুয়া নিলয় বলেন প্রত্যয় বড়ুয়া নিলয় দেখতে দেখতে আমাদের অগ্রদূত বৌদ্ধ সংগঠন ৭ম বছরে পদার্পণ করলো, এর মধ্যে আমাদের অসংখ্য মানবিক এবং ধর্মীয় সফল কার্যক্রম আমরা শেষ করেছি। প্রতিবছরের ন্যায় এই বছর ও আমরা আমাদের ৭ম বর্ষপূর্তি উদযাপনের আনন্দ টুকু ভাগাভাগি করে নিতে আপনাদের মাঝে এসেছি, আমাদের সাধ্যানুযায়ী কিছু উপহার সামগ্রী নিয়ে।

তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দশ্যে বলেন, তারা যেন এইভাবে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি ধর্মীয় এবং পারিবারিক শিক্ষা গ্রহন করেন। তোমরা যদি তোমাদের এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারো, তাহলে ভবিষ্যৎতে দেশ এবং জাতি তোমাদের দ্বারা উন্নতি লাভ করবে এবং তোমরা ভবিষ্যৎতে সুন্দর একটি আগামী আমাদের উপহার দিবে।

তিনি বলেন অগ্রদূত বৌদ্ধ সংগঠন এমন একটি সংগঠন, এই সংগঠন জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলের উদ্দশ্যে কাজ করে মানবতার কাজ করে, এবং মানব ধর্ম হচ্ছে সব চাইতে বড় ধর্ম।

আশা করি তোমরাও বড় হয়ে স্বশিক্ষায় শিক্ষিত হবে এবং মানবতার কাজ করবে, অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াবে এবং সমাজের জন্যে সদ্ধর্মের জন্যে কাজ করবে।

বক্তব্য শেষে তিনি আরো বলেন, “মারমা ল্যাংগুয়েজ সেন্টারের পরিচালক পূজনীয় ভান্তে শিক্ষার্থীদের সুযোগ সুবিধার অভাব, প্রয়োজনীয়তা এবং বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছেন। যার মধ্যে শিক্ষার্থীদের আবাসস্থলের অভাব, রান্না ঘরের অভাব, টয়লেটে এবং ওয়াশরুমের অভাব অন্যতম।

এছাড়াও অনেক সময় পর্যাপ্ত খাবারের যোগান না থাকায় এই ছোট শিশুগুলো না খেয়েও থাকে। যা আসলে খুবই করুণ। আমাদের সাধ্য অনুযায়ী এখন এখানে আসলাম এবং দেখলাম, আসলেই অনেক কিছুরেই অভাব। আসলে আমরা তাদের জন্য সবকিছুর ব্যবস্থা করতে চাই। কিন্তু, সবাই আমরা যেহেতু এখনো শিক্ষার্থী তাই আমাদেরও অনেক বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

যদি সম্ভব হতো, এখানে যা কিছু অভাব আমরা সবই ব্যবস্থা করে দিতাম। অনেক কিছু করার ইচ্ছা থাকলেও আমাদের অনেক সময় সম্ভব হয়ে ওঠে না। এর পরও আমরা আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী সবসময় তোমাদের পাশে থাকার চেষ্টা করব” বলে জানান।

৭ম বর্ষপূর্তির শেষ পর্বে অত্র বিহারের ভান্তে শ্রামণ এবং আশ্রমের ছেলে-মেয়ে সকলের মাঝে শিক্ষা উপকরণ,শীতবস্ত্র ও প্যাকেটিং খাবার বিতরণ করা হয়।এরপরে তাদের সকলকে নিয়ে বর্ষপূর্তির কেক কেটে উদযাপন করা হয়।আশ্রমের সুবিধাবঞ্চিত শিশু-কিশোরদের সাথে আনন্দ ভাগাভাগির মাধ্যমেই অগ্রদূত তাদের ৭ম বর্ষপূর্তি পালন করে।

শেয়ার করে সবাইকে পড়ার সুযোগ দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!