ব্রাহ্মণ্য আগ্রাসনের শিকারে প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার

  • ড. বরসম্বোধি ভিক্ষু

ব্রাহ্মণ্য আগ্রাসন: ইতিপূর্বেও আমি ভারতবর্ষের অনেক হিন্দু মন্দিরের প্রমাণ সহ উদাহরণ দিয়ে লিখেছিলাম, যেগুলি ছিল পূর্বে বৌদ্ধ বিহার এবং সেগুলিকে অবৈধ দখল করে মনুবাদী ইউরেশিয়ান ব্রাহ্মণেরা হিন্দু মন্দির বানিয়েছে। আজকের লেখায় সেরকম আরও কয়েকটি হিন্দু মন্দিরের উল্লেখ করব, যেগুলি পূর্বে বৌদ্ধ বিহার ছিল। সেগুলিকে ব্রহ্মণেরা কিভাবে বিকৃত করেছে তার বর্ণনা তুলে ধরছি।

নীচের প্রথম ছবিটি হল উড়িষ্যার খ্যাতনামা মহাদেব মন্দিরের। এ মন্দিরে পাওয়া গিয়েছে বোধিসত্ব অবলোকিতেশ্বরের মূর্তি। কাশী, মথুরা ইত্যাদি বৌদ্ধ স্থান সমূহে বিদেশী ব্রাহ্মণেরা এখন প্রাচীন হিন্দু মন্দির দাবী করে আক্রমণ করতে প্রস্তুত হচ্ছে। কিন্তু সেগুলিতে প্রাচীন বৌদ্ধ বিহারের স্মৃতি চিহ্ন প্রচুর মাত্রায় বিকৃত অবস্থায় বিদ্যমান রয়েছে। অযোধ্যার বাবরি মসজিদ স্থানে খনন কার্যেও সবকিছু বুদ্ধের অবশেষ পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু কোরোনা কালীন লক ডাউনের সময় পুরাতত্ব বিভাগ মনুবাদী ব্রাহ্মণ্য ভারত সরকারের সাথে যুক্ত হয়ে সমস্ত বৌদ্ধ অবশেষ বিলুপ্ত করে সেখানে কাল্পনিক রামের জন্মস্থান দেখিয়ে সুপ্রিম কোর্টের মাধ্যমে রাম মন্দির বানানোর রায় হাসিল করে নিয়েছে। অনুরূপভাবে উড়িষ্যার প্রসিদ্ধ মহাদেব মন্দিরেও বৌদ্ধ বিহারের অবশেষ পাওয়া যাচ্ছে।

ব্রাহ্মণ্য আগ্রাসনের শিকারে প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার

মনুবাদী বিদেশী ব্রাহ্মণ্য দল ভারতের মূল নিবাসী বৌদ্ধদের প্রাচীন বিহার ও চৈত্য বা স্তূপ সমূহে প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে দখল করে নিয়েছে। এখন ইতিহাসের সত্যতা সর্বত্র সামনে এসে যাচ্ছে। স্থানীয় পত্র-পত্রিকায়ও এ খবর প্রচারিত হয়েছে। তার প্রমাণও এখানে যুক্ত করে প্রথম ছবিতে প্রদত্ত হল।

দ্বিতীয় ছবিটি হল কর্ণাটক রাজ্যের ‘বেলুর মঠের।’ ইহাও হল প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার। সেখানকার নাগ বংশীয় বৌদ্ধ রাজারা খৃষ্টীয় তৃতীয় শতাব্দীতে ইহা নির্মাণ করেছিলেন। এ মন্দির পরিসরে সম্রাট অসোক কালীন শিলালেখও পাওয়া গিয়েছে।

ব্রাহ্মণ্য আগ্রাসনের শিকারে প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার

কিন্তু প্রাচীন এ বৌদ্ধ ধম্ম বিহার বর্তমানে মনুবাদী বিদেশী ইউরেশিয়ান পুরোহিত ব্রাহ্মণেরা দখল করে নিয়েছে এবং বৌদ্ধ বিহারকে হিন্দু মন্দিরে পরিবর্তিত করেছে। দখলকারী ব্রাহ্মণেরা ইহাকে চেন্নী কেশবা মন্দির নাম দিয়েছে।

তৃতীয় ছবিটি হল গুজরাত রাজ্যের প্রাচীন বৌদ্ধ সূর্য বিহারের। ভারতের গুজরাত রাজ্যের মোডেরায় বর্তমানের হিন্দু মন্দিরটি অতীতে প্রাচীন বৌদ্ধ সূর্য বিহার ছিল। ষষ্ট শতাব্দীতে এ বিহারটি বৌদ্ধ রাজা সূর্য কর্তৃক নির্মিত হয়েছিল। বিহারে পালি ভাষায় এ সম্পর্কিত শিলালেখও রয়েছে।

ব্রাহ্মণ্য আগ্রাসনের শিকারে প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার

বিশ্বের সর্বত্র কেবল তথাগত বুদ্ধকেই ‘সূর্য’ বলে অভিহিত করা হয়েছিল। সেজন্য অনেক বৌদ্ধ বিহারকেই বলা হত সূর্য বিহার। বর্তমান ভারতে যে সমস্ত সূর্য মন্দির রয়েছে সেগুলির অধিকাংশই হল প্রাচীন বুদ্ধবিহার। কিন্তু বিদেশী মনুবাদী ব্রাহ্মণ পুরোহিতেরা অন্যান্য সূর্য বিহারের মত এ বৌদ্ধ বিহারকেও দখল করে নিয়েছে এবং তা এখন ব্রাহ্মণেরা হিন্দু মন্দিরে পরিণত করেছে।

নীচের বুদ্ধমূর্তিযুক্ত যে ছবিটি রয়েছে তা নেপালের খ্যাতনামা মৎস্যেন্দ্রনাথ মন্দির।

ব্রাহ্মণ্য আগ্রাসনের শিকারে প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার

নাথ এবং সিদ্ধা এরা ছিলেন বৌদ্ধ পরম্পরার তান্ত্রিত যোগী। ইতিহাসে ৮৪ (চুরাশি) সিদ্ধা এবং ৯ (নবম) নাথের উল্লেখ পাওয়া যায়, যাঁরা ছিলেন বৌদ্ধ। ৮৪ এবং ৯ এ দু’টি সংখ্যা হল বৌদ্ধদের মধ্যে বহুল প্রচলিত গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যা। ৮৪ সংখ্যা হল বুদ্ধের চুরাশি হাজার ধম্মবাণী এবং ৯ সংখ্যা হল বুদ্ধগুণ। তথাগত বুদ্ধের পরম্পরাকে মধ্যযুগীয় ভারতে সিদ্ধা এবং নাথেরা কোন প্রকারে জীবিত রেখেছিলেন। গোরক্ষনাথ এবং মৎস্যেন্দ্রিয়নাথ ছিলেন প্রসিদ্ধ নাথ-সিদ্ধা।

যদিও মৎস্যেন্দ্রিয় নাথের স্বনামধন্য বিহারটি পরবর্তীতে মনুবাদী ব্রাহ্মণেরা দখল করে হিন্দু মন্দিরে পরিবর্তিত করেছে, সেখানে কিন্তু ধ্বংস করার পরও এখনও বৌদ্ধ শিল্প প্রচুর মাত্রায় রয়েছে। চতুর্থ ছবিটি হল তার জাজ্জ্বল্য প্রমাণ। বৌদ্ধ সাহিত্যে মৎস্য হল গতিশীলতার প্রতীক।

আরো পড়ুন>>

শেয়ার করে সবাইকে পড়ার সুযোগ দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!