মিশরের বেরেনিসে আবিষ্কৃত হয়েছে প্রচীন বুদ্ধ মূর্তি

মিশরের বেরেনিস সমুদ্র বন্দরে গৌতম বুদ্ধের একটি প্রাচীন মূর্তি আবিষ্কৃত হয়েছে। এর ফলে বৌদ্ধধর্ম যে একসময় ভারত ছাড়িয়ে মিশর পর্যন্ত বিস্তার লাভ করেছিল তার প্রমাণ পাওয়া যায়। এছাড়াও রোমান শাসনের সময় ভারত ও মিশরের মধ্যে যে বাণিজ্য সংযোগ ছিল তা আরো ফুটে ওঠেছে। মূর্তিটি খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীর বলে মনে করা হচ্ছে।

বুধবার মিশরের পর্যটন ও পুরাকীর্তি মন্ত্রনালয় আবিষ্কৃত বুদ্ধমূর্তিটি প্রকাশ্যে এনেছে। ঘোষণা অনুযায়ী, মূর্তিটি একটি যৌথ পোলিশ-আমেরিকান প্রত্নতাত্ত্বিক মিশনের মাধ্যমে আবিষ্কার করা হয়েছে।

১৯৯৪ সাল থেকে একটি প্রত্নতাত্ত্বিক মিশন এই পুরনো বেরেনিস বন্দরে কাজ করছে বলে জানা গেছে। প্রাপ্ত বুদ্ধের মূর্তিটি এই প্রত্নতাত্ত্বিক মিশনের দ্বারা আবিষ্কৃত।

বেরেনিস একসময় টলেমাইক রাজবংশের দ্বারা নির্মিত একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র ছিল। প্রাচীন গ্রীকে এই রাজবংশ প্রায় তিন শতাব্দী ধরে মিশরকে শাসন করেছিল বলে জানা যায়।

মিশরের বেরেনিসে আবিষ্কৃত হয়েছে প্রচীন বুদ্ধ মূর্তি

বুদ্ধের মূর্তি এবং মিশর ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য

প্রত্নতত্ত্বের সুপ্রিম কাউন্সিলর মহাসচিব ডক্টর মোস্তফা ওয়াজিরি একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে মন্তব্য করেন যে, ”প্রাচীন বুদ্ধ মূর্তি আবিষ্কার রোমান যুগে মিশর ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্কের অস্তিত্বের গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ প্রদান করে, যেখানে মিশর ছিল বাণিজ্য রুটের একটি কেন্দ্রীয় অবস্থান যা রোমান সাম্রাজ্যকে ভারত সহ প্রাচীন বিশ্বের অনেক অঞ্চলের সাথে সংযুক্ত করে।”

ওয়াজিরি আরো বলেন, “মিসরের লোহিত সাগর উপকূলে রোমান যুগের বেশ কয়েকটি বন্দর এই বাণিজ্যে অংশ নিয়েছিল। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল বেরেনিকে (বেরেনিস) বন্দর, যেখানে ভারত থেকে আগত জাহাজগুলি মরিচ, আধা, মূল্যবান পাথর, বস্ত্র এবং হাতির দাঁতের মতো পণ্যে বোঝাই করতো।”

মিশরের মূর্তির বর্ণনা

প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে আবিষ্কৃত বুদ্ধ মূর্তিটি ৭১ সেমি উঁচু এবং পাথরের তৈরি। দেখা যাচ্ছে মূর্তিটিতে বুদ্ধ এক হাতে তাঁর পোশাকের কিছু অংশ ধরে দাঁড়িয়ে আছে। তার মাথার চারপাশে সূর্যালোক বিকিরণকারী একটি প্রভা এবং পায়ে তলায় একটি প্রস্ফুটিত পদ্ম ফুল।

প্রত্নতাত্ত্বিক মিশনের পোলিশ দলপতি ডাঃ মারিয়াস গোয়েজাদা বলেছেন যে, “আবিষ্কৃত মূর্তিটি পাথরের তৈরি যা ইস্তাম্বুলের দক্ষিণে একটি অঞ্চল বেরেনিস থেকে আবিষ্কৃত হয়েছে। সম্ভবত বেরেনিসে স্থানীয়ভাবে খোদাই করা মুর্তিটি ভারত থেকে আগত কোন ব্যবসায়ী স্থানীয় বৌদ্ধ বিহারে দান করেছিল।

মিশনে আমেরিকান পক্ষে নেতৃত্বে থাকা ডঃ স্টিফেন সিডবোথাম বলেন, ”প্রত্নতাত্ত্বিকরা রোমান সম্রাট ফিলিপ দ্য আরব (মার্কাস জুলিয়াস ফিলিপাস) (244 – 249 খ্রিস্টাব্দ) এর সময়কার হিন্দি (সংস্কৃত) একটি শিলালিপি উন্মোচন করতেও সফল হয়েছেন। এই শিলালিপিটি মূর্তিটির একই তারিখের বলে মনে হয় না,  সম্ভবত এটি আরো অনেক বেশি পুরানো। কারণ একই মন্দিরের অন্যান্য শিলালিপিগুলো গ্রীক ভাষায় ছিল, যা খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতাব্দীর প্রথম দিকের।”

আরো পড়ুন>>

শেয়ার করে সবাইকে পড়ার সুযোগ দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!