বৌদ্ধ তহবিলে ৩.৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দান

ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বৌদ্ধ তহবিলে ৩.৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দান করেছেন মার্কিন অধ্যাপক দম্পতি। এই অর্থ দিয়ে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, লস এঞ্জেলেস এর এশিয়ান ভাষা ও সংস্কৃতি বিভাগের অধীনে বৌদ্ধ স্টাডিস উন্নয়নের লক্ষ্যে তহবিল গঠন করা হবে।

একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, কোরিয়ান বৌদ্ধ গ্রন্থ অনুবাদক, রবার্ট বুসওয়েল জুনিয়র এবং তার স্ত্রী ক্রিস্টিনা লি বুসওয়েল এই অর্থ দান করার ঘোষণা দেন। এই অর্থ ব্যয়ে যে তহবিল গঠন করা হবে তা পুরিল পোজো চিনুল তহবিল নামে পরিচিত হবে। পুরিল পোজো চিনুল একজন কোরিয়ান বৌদ্ধ ভিক্ষু। এই তহবিলের অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের বোড্ডিস্ট স্ট্যাডিজ উন্নয়নের জন্য ব্যয় করা হবে বলে জনিয়েছেন।

রবার্ট বুসওয়েল

রবার্ট বুসওয়েল একজন কোরিয়ান বৌদ্ধধর্ম গ্রন্থ অনুবাদক হিসেবে দীর্ঘ দিন কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বৌদ্ধধর্মের প্রতি এতটাই আকৃষ্ট হয়েছেন যে, তাকে পশ্চিমের বৌদ্ধ পণ্ডিত ও বৌদ্ধ ধ্যান শিক্ষার গুরু হিসেবে গণ্য করা হয়। তিনি University of California, Los Angeles এর সেন্টার ফর কোরিয়ান স্টাডিজ এবং বুডিস্ট স্টাডিজের প্রতিষ্ঠাতা।

এছাড়াও রবার্ট বুসওয়েল বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধ শিক্ষার্থীদের কাছে দুই খণ্ডের এনসাইক্লোপিডিয়া অফ বুদ্ধিজ এর প্রধান সম্পাদক (রেফারেন্স: ম্যাকমিলান লাইব্রেরি ২০০৩) এবং প্রিন্সটন ডিকশনারি অফ বুদ্ধিজ এর সহ-লেখক হিসেবে (প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি প্রেস ২০১৩) পরিচিত। বর্তমানে তিনি University of California, Los Angeles এর এশিয়ান স্টাডিজ অ্যাসোসিয়েশন এর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এই মহাৎ ব্যক্তি ২০১৬ সালে আমেরিকান একাডেমি অফ আর্টস অ্যান্ড সায়েন্স নির্বাচিত হন।

UCLA এর মানবিক বিভাগের সিনিয়র ডিন ডেভিড শ্যাবার্গ বলেন, “বৌদ্ধ অধ্যয়ন এবং কোরিয়ান অধ্যয়নের ক্ষেত্রে রবার্ট বুসওয়েলের প্রভাব অতুলনীয়। তিনি শুধু UCLA এর বুড্ডিস্ট স্টাডিজের প্রতিষ্ঠাতা নন, সারা বিশ্বের বিভিন্ন একাডেমিক প্রতিষ্ঠানে শিক্ষাদান ও অধ্যয়নরত কয়েক ডজন স্কলারকে প্রশিক্ষণও দিয়েছেন। আমি তার অসাধারণ গুণাবলীতে মুগ্ধ। রবার্ট বুসওয়েল এবং ক্রিস্টিনার এই অসাধারণ উদার উপহারের জন্য UCLA এর পক্ষ থেকে আমি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ।”

ক্রিস্টিনা বুসওয়েল

ক্রিস্টিনা বুসওয়েল একজন ক্যাথলিক পরিবারে জন্মজাত ও ক্যাথলিক হিসেবেই বেড়ে ওঠা নারী। তিনি মাত্র ১৩ বছর বয়সে তার পরিবারের সাথে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হন। ক্রিস্টিনা বলেন, “একজন কোরিয়ান-আমেরিকান অভিবাসী হিসাবে আমি সবসময় নিজেকে বোঝতে চেষ্টা করতাম, আমি নিজেকে প্রশ্ন করতাম ‘আমি কে?’ আমি উত্তর খুঁজতে খুঁজতে শেষ পর্যন্ত, বৌদ্ধধর্মের প্রতি দূর্বল হয়ে পড়ি। আমি বৌদ্ধধর্মেই নিজেকে আবিষ্কার করতে পেরেছি।”

ক্যালিফোর্নিয়া
পুরিল পোজো চিনুল

এই নারী, স্টোনি ব্রুকেতে অবস্থিত স্টেট ইউনিভার্সিটি অফ নিউ ইয়র্ক থেকে ধর্মীয় অধ্যয়নে বিএ এবং কলম্বিয়া থেকে কোরিয়ান স্টাডিজে এমএ ডিগ্রী অর্জন করেছেন। অধ্যানকালে তিনি উভয় প্রতিষ্ঠানেই কোরিয়ান বৌদ্ধধর্মের জন্য বরাদ্দকৃত সম্পদের যথেষ্ট ঘাটতি লক্ষ্য করেছিলেন। মূলত তখন থেকেই তিনি মনে মনে বৌদ্ধধর্মের উন্নয়নের এমন একটা তহবিল গঠনের স্বপ্ন দেখতেন।

ক্রিস্টিনা যোগ করে বলেন, “এমন একটা তহবিল গঠন করা আমাদের উভয়ের জন্য অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমেরিকায় অন্তত একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বৌদ্ধধর্মের জন্য বিশেষভাবে নিবেদিত স্থায়ী ফ্যাকাল্টি বোর্ড থাকা আবশ্যক। UCLA-ই হলো বৌদ্ধধর্ম ফ্যাকাল্টি গঠনের জন্য আদর্শ জায়গা কারণ আমেরিকায় এই বিশ্ববিদ্যালয়টি কোরিয়ান এবং বৌদ্ধ অধ্যয়নের ক্ষেত্র হিসাবে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।”

বৌদ্ধধর্ম ও ড. কার্জিনের অবদান

ক্রিস্টিনার মতো বুসওয়েলও খ্রিষ্টান পরিবারে বেড়ে ওঠেন। অল্প বয়স থেকেই তিনি বিভিন্ন দার্শনিক ও ধর্মীয় বিষয় গুলো নিয়ে ভাবতেন এবং নিজেকে প্রশ্ন করতেন। তিনি বলেন, “১৬ বছর বয়সেই আমি প্রথম বৌদ্ধধর্মের সংস্পর্শে আসি। আমি তখন থেকেই বৌদ্ধধর্মের প্রতি সম্পূর্ণরূপে আকৃষ্ট হয়ে পড়েছি।”

রবার্ট ১৯৭২ সালে কলেজ জীবন ত্যাগ করে থাইল্যান্ড, হংকং এবং কোরিয়াতে গমন করেন। সেখানে তিনি একজন বৌদ্ধ ভিক্ষু হিসেবে সাত বছর অনুশীলন করেন। বৌদ্ধ ভিক্ষু হিসেবে, তিনি কোরিয়ার সোংগওয়াং মঠে পাঁচ বছর কাটিয়েছিলেন। কোরিয়াতে অবস্থানকালে কোরিয়ান বৌদ্ধ ভিক্ষু পুরিল পোজো চিনুলের লেখা বৌদ্ধ গ্রন্থ অনুবাদে কাজ করেন।

পরে তিনি বৌদ্ধ ধর্মের উপর একাডেমিক অধ্যয়ন চালিয়ে যাওয়ার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসেন। পরে তিনি ১৯৮৫ সালে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বার্কলে থেকে বুড্ডিস্ট স্টাডিজ থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করেন।

রবার্ট বলেন, “কোরিয়ান বৌদ্ধ ইতিহাসের সবচেয়ে প্রভাবশালী ভিক্ষু ও পণ্ডিত চিনুল পোজিলের নামেই এই তহবিল গঠন করা যুক্তিযুক্ত বলে আমার মনে হয়েছে। চিনুল আমার ধর্মীয় বিশ্বাসকে যেভাবে বৌদ্ধধর্মের প্রতি আকৃষ্ট করেছেন, তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ “

অরো পড়ুন>>

শেয়ার করে সবাইকে পড়ার সুযোগ দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!