কোরিয়ান নতুন বৌদ্ধ বিহার উদ্বোধন

বুদ্ধগয়ায় কোরিয়ান নতুন বৌদ্ধ বিহার ‍উদ্বোধন করার খবর পাওয়া গেছে। আগামী শনিবার (২১ মে) ভারতের বুদ্ধগয়ায় ”বুনহওয়াং-সা” নামে একটি নতুন কোরিয়ান বৌদ্ধ মন্দির উদ্বোধন করা হবে। দক্ষিণ কোরিয়ান ভিক্ষু সংঘ (The Jogye Order of South Korea) এর ১৫০ জন ভিক্ষুর একটি প্রতিনিধি দল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের নেতৃত্ব দেবেন জোগে অর্ডার অব সাউথ কোরিয়ার সভাপতি, ভেনরেবল ওনহেং। কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের পর এটিই প্রথম সর্ববৃহৎ কোন কোরিয়ান তীর্থযাত্রীর দল বুদ্ধগয়া ভ্রমণ করছে।

দক্ষিন কোরিয়ায় জন্মহার আশংকাজনকভাবে কমে যাওয়ায় জোগিয়ে অর্ডারের পক্ষ থেকে ”One Million Vows Assemble“ নামে একটি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় যার প্রধান উদ্দেশ্য হলো লক্ষ মানুষের মাঝে বৌদ্ধধর্ম প্রচার ও বৌদ্ধ স্থাপনা সৃষ্টি। ”One Million Vows Assemble“ এর অংশ হিসেবে বুদ্ধগয়ায় বুনহওয়াং-সা নামের এই কোরিয়ান বৌদ্ধ বিহারটি স্থাপনে করা হয়েছে।

ভেন. ওনহেং বলেন, “আমরা যদি সবাই একা একা দাঁড়াই আমাদের আলাদা আলাদাভাবে ছোট এবং দুর্বল মনে হবে, কিন্তু যদি এক মিলিয়ন বৌদ্ধের একত্রিত করা যায় তবে আমরা বিশ্বের যে কোনও জায়গায় যে কোনও কিছু অর্জন করতে পারি।”

কোরিয়ান ”বুনহওয়াং-সা বৌদ্ধ বিহার

২০১৯ সালে মন্দিরটি নির্মাণের প্রথম পরিকল্পনা শুরু হয়। এই বিহার স্থাপনার জন্য সালমাই এবং ইয়েনচুই নামে দুই কোরিয়ান মহিলা ৫ বিলিয়ন কোরিয়ান ওয়ান (৩.৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) দান করেছিলেন।

মন্দিরের জন্য প্রায় ৬,৬০০ বর্গ মিটারের একটি জমি ক্রয় করার জন্য  টংডো-সা-এর সদস্যরা প্রয়োজনীয় অর্থ দান করেছিলেন। টংডো-সা হলো কোরিয়ার তিনটি বৃহত্তম বৌদ্ধ মন্দিরের মধ্যে একটি। জমিটি বুদ্ধগয়া মহাবোধি মন্দির কমপ্লেক্স থেকে প্রায় ২০০ মিটার দূরে অবস্থিত। বিহারটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০২০ সালে। কোভিড-১৯ মহামারী সত্ত্বেও নির্মাণ কাজ খুব তাড়াতাড়িই শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন কোরিয়ান প্রতিনিধি দলের একজন।

মূল মন্দিরটি আছে দান করা জমির অর্ধেক অংশ জুড়ে। বাকি জমিতে একটি বুদ্ধ হল, মেডিটেশন হল, গেস্ট কোয়ার্টার, পিআর অফিস, চা ঘর এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য একটি স্বাস্থ্য ক্লিনিক স্থাপন করার কথা আছে।

বিহারটির কাঠামো তৈরী করা হয়েছে স্টিলের পাত দিয়ে। কোরিয়ান-শৈলীর ছাদ বিহারটিকে করেছে দৃষ্টিনন্দন। বিহার প্রাঙ্গনের চারপাশে গাছ লাগানো হয়েছে এবং গাছগুলো ঘিরে ঐতিহ্যবাহী কোরিয়ান লন্ঠন দিয়ে সাজানো হয়েছে। বিহার কমপ্লেক্সে বেশ কয়েকটি বুদ্ধ ‍মুর্তিও স্থাপন করা হয়েছে।

ইতিহাস

কোরিয়ান শব্দ “বুনহওয়াং” অর্থ পদ্ম ফুল, যা কাদাযুক্ত স্থানে জন্ম নিয়েও সুগন্ধি ও সৌন্দর্য্য বিলায়। এই শব্দের আরো কয়েকটি অর্থ আছে, যেমন: সুগন্ধি বা সম্রাট। প্রাচীন সিলা রাজ্যের রাজধানী বর্তমান উত্তর গিয়াংসাং প্রদেশের গিয়াংজুতে “বুনহওয়াং” নামে আরো একটি বৌদ্ধ বিহার আছে। যা ৬৩৪ খ্রিস্টাব্দে সিলা রাজ বংশদ্বারা (57 BCE-935 CE) প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল।

উত্তর গিয়াংসাং প্রদেশের “বুনহওয়াং” মন্দিরটি রাণী সিওনডিওক তার ভক্তিমূলক কাজের অংশ হিসাবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। রাণী বিশ্বাস করেছিলেন, এই বিহার তৎকালীন অশান্ত কোরিয়াতে শান্তি ও সমৃদ্ধি ফিরিয়ে আনবে। কথিত আছে যে, এই বিহার প্রতিষ্ঠা করার পর কোরিয়াতে শান্তি সমৃদ্ধি ফিরে এসেছিল।

ভারতের বুদ্ধগয়ায় একই নামে নতুন মন্দির প্রতিষ্ঠা করায় তীর্থযাত্রী এবং বুদ্ধগয়ার জনগণের জন্য সৌভাগ্য নিয়ে আসার প্রত্যাশা করছেন সকলে।

ভেনরেবল ওনহেং এবং অন্যরা আশা করেন যে এটি ২১ শতকে কোরিয়ায় বৌদ্ধধর্ম পুনরুজ্জীবনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ভেনরেবল ওনহেং বলেন, “একজন ব্যক্তির উচ্চাকাঙ্খা ১০০ জনের মধ্যে ছড়াবে আর ১০,০০০ ব্যাক্তির উচ্চাকাঙ্খা ছড়াবে এক মিলিয়নেরও বেশি মানুষের বিশাল নদীতে। কোরিয়ান বৌদ্ধধর্মের উজ্জ্বল ভবিষ্যত আমাদের সামনে বিস্তৃত না হওয়া পর্যন্ত কখনই আমাদের এই উত্সাহী উচ্চাকাঙ্খা বন্ধ করব না।”

উত্তর-পূর্ব ভারতের বিহার রাজ্যে অবস্থিত বুদ্ধগয়া শহরটি বৌদ্ধধর্মের চারটি প্রধান তীর্থস্থানের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এখানে বৌদ্ধধর্মের প্রতিষ্ঠাতা গৌতম বুদ্ধ বোধি জ্ঞান বা আলোকপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। অন্য তীর্থস্থান গুলোর মধ্যে বাকি তিনটি হল নেপালের লুম্বিনি, যেখানে বুদ্ধের জন্ম হয়েছিল, শ্রাবস্তী, যেখানে বুদ্ধ তাঁর প্রথম ধর্ম প্রচার করেছিলেন এবং কুশিনগর, যেখানে তিনি পরিনির্বাণ লাভ করেছিলেন।

২০১৫ সালের আদমশুমারী তথ্য অনুসারে, দক্ষিণ কোরিয়ার জনসংখ্যার প্রায় ৫৬ শতাংশ মানুষ কোন ধর্ম অনুসরণ করে না। খ্রিস্টানরা দেশের জনসংখ্যার প্রায় ২৭.৬ শতাংশ এবং বৌদ্ধ আছে ১৫.৫ শতাংশ। সে হিসেবে বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়ার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ খ্রিস্টান ধর্ম অনুসরণ করেন।

অরো পড়ুন>>

শেয়ার করে সবাইকে পড়ার সুযোগ দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!