দুর্গম হিমালয় রাজ্যে বৌদ্ধ ভিক্ষুণীদের শিক্ষিত ও ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে কাজ করা ভুটান নান ফাউন্ডেশন (বিএনএফ) বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে যাচ্ছে। ভুটানের রাজধানী থিম্পুর উপকণ্ঠে বিএনএফের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত প্রশিক্ষণ ও রিসোর্স সেন্টারের (টিআরসি) আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করার ঘোষণা দিয়েছে।
ভুটানে মহিমান্বীত রানী মা আশি শেরিং ইয়াংডোয়ান ওয়াংচাক এর জন্মদিন এবং জাতীয় ভিক্ষুণী দিবসকে একত্রিত করে আগামী ২১ জুন টিআরসি উদ্বোধন করা হবে বলে জানা গেছে। একই দিন বিএনএফ ভিক্ষুণী এবং তাদের সমর্থকদের দ্বারা সম্পাদিত কয়েক বছরের নিবেদিত কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ একটি দন্ডায়মান স্মৃতিস্তম্ভ উন্মোচন করা হবে।
বৌদ্ধ সমাজ কর্মী এবং বিএনএফের নির্বাহী পরিচালক ডাঃ তাশি জাংমো বলেন, “ভুটান নানস ফাউন্ডেশনের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন অবশেষে বাস্তবায়িত হয়েছে। এই স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে সহায়তা দাতা বিশ্বজুড়ে আমাদের সকল সমর্থক এবং শুভাকাঙ্ক্ষীদের ধন্যবাদ জানাতে পেরে খুব আনন্দিত।
তিনি আরো বলেন, “পুনাখার সানচেন দোর্জি লেন্দ্রপ নুনেরি থেকে স্নাতক প্রাপ্ত ১০ জন এবং টঙ্গসার টাক্সে থেকে ভাষা ও সংস্কৃতি স্টাডিজ থেকে স্নাতক প্রাপ্ত আরও দু’জন ভিক্ষুণীদের নিয়ে প্রথম আমাদের প্রশিক্ষণ ও সংস্থান কেন্দ্রের দরজা খুলেছি। তারাই টিআরসি-তে প্রথম ব্যাচ হবে যারা প্রথম প্রশিক্ষক হিসেবে নিজেরা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবে।”
রানী মা আশী শেরিং ইয়াংডোয়ান ওয়াংচকের পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত, বিএনএফ একটি অলাভজনক সংস্থা। বিএনএফ মূলত ভুটানের বৌদ্ধ ভিক্ষুণীদের প্রত্যহিক জীবনে বেসিক এবং উচ্চতর ক্ষেত্রে তাদের প্রবেশাধিকার বাড়ানোর জন্য শিক্ষা দেয়। বিএনএফের মূল লক্ষ্য হলো, ভুটানী মেয়ে এবং মহিলাদের জীবনযাত্রার উন্নতি এবং গ্রামীণ অর্থনৈতিক জীবনশক্তি উন্নত করার লক্ষ্যে তাদের শিক্ষার ব্যবস্থা করা। যাতে দ্রুত শিক্ষা বিকাশের মাধ্যমে দেশের সমৃদ্ধ সহ বৌদ্ধ সংস্কৃতি রক্ষা করতে সহায়তা করে।
ডাঃ জাংমো বলেন, “যদি কোভিড -১৯ না থাকত, বিশ্বজুড়ে আমাদের সমর্থক এবং বৌদ্ধ ভিক্ষুণী প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হতো। বিশ্বের বৌদ্ধ ব্যক্তিত্ব ও শুভাকাঙ্খিদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে কেন্দ্রটি উদ্বোধন করতাম। তবে, আমরা আশা করি যে বিশ্ব মহামারী কোভিড-১৯ কাটিয়ে উঠলে আমরা আবারও সবাইকে নিয়ে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করবো।”
বিএনএফের প্রশিক্ষণ ও রিসোর্স সেন্টারের অধিনে ভিক্ষুণী ও মহিলাদের জীবন দক্ষতা এবং সামাজিক মূল্যবোধের উপর বৌদ্ধ ঐতিয্যের আলোকে অনেক গুলো কোর্স রাখা হয়েছে। যেমন: কাউন্সেলিং প্রশিক্ষণ, ধর্মশালা, বেসিক স্বাস্থ্যসেবা, উপশম যত্ন, নেতৃত্ব এবং পরিচালনা এমনকি বৌদ্ধ ভিক্ষুণীদের যারা পাঠদান করবেন তাদের প্রশিক্ষণ পদ্ধতিও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
কেন্দ্রটি নিয়মিত সংক্ষিপ্ত ধ্যান কোর্সগুলির পাশাপাশি আবাসিক ভিক্ষুণীদের যারা প্রশিক্ষণ শেষ করবে তাদের জন্য থাকবে সংক্ষিপ্ত পুনঃ আলোচনা। নাঙ্গি ইন্সট্রাকশন (একটি ভুটানী উপবাস অনুশীলন যা শারীরিক ও আধ্যাত্মিক পরিশোধনের মাধ্যম হিসাবে ব্যবহৃত হয়) পাশাপাশি প্রশ্নোত্তর ,গং, তাই চি, এবং যোগব্যায়ামও অর্ন্তভুক্ত থাকবে।
”ডাঃ জাংমো ব্যাখ্যা করে বলেন “সক্ষমতা এবং দক্ষতা বিকাশের উপর “ভিক্ষুণী ক্ষমতায়ন” শীর্ষক একটি প্রশিক্ষণ কাঠামো ম্যানুয়ালও তৈরী করা হয়েছে। ৩৮ টি মডিউল সমন্বিত, প্রশিক্ষণ ম্যানুয়ালটি ভিক্ষুণীদে নেতৃত্ব দানের ক্ষমতা তৈরি করবে বলে আশা করা হচ্ছে। ফাউন্ডেশন তাদের প্রশিক্ষণ পরিচালনার জন্য যাবতীয় দিকনির্দেশনা ও সহযোগীতা সরবরাহ করবে। ”
ডাঃ জাঙ্গমো, ভুটানের অন্যতম প্রত্যন্ত ও গ্রামীণ অঞ্চলে জন্মগ্রহণ ও বেড়ে ওঠেন। তিনি ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন। সর্বশেষ ম্যাসাচুসেটস-আমহার্স্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০০৯ সালে, তিনি ভুটান নানস ফাউন্ডেশন (বিএনএফ) প্রতিষ্ঠা করেন, যা তিনি এখন চালাচ্ছেন। ফাউন্ডেশনটিতে বর্তমানে প্রায় ২৮ জন বৌদ্ধ ন্যানারি পরিচালনা করছে। তারা প্রশিক্ষানার্থীদের সম্প্রদায় নেতা এবং শিক্ষক হওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন,“যারা এই প্রকল্পের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সহযোগীতা করেছেন তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। প্রত্যেকের উদার সমর্থন না থাকলে এটি সম্ভব হত না।”
ভুটানের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭৭০,০০০ জন বা প্রায় ৭৫ শতাংশ মানুষ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। বাকি ২৫ শতাংশের বেশিরভাগই প্রধানত নেপালি বংশোদ্ভূত লোহশম্প্পা নৃগোষ্ঠীর লোক। তারা হিন্দু ধর্ম অনুশীলন করে। ভুটানের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা বেশিরভাগই দ্রুকপা কাগু বা বজ্রায়ানা বৌদ্ধ ধর্ম অনুসরণ করে।
আরো পড়ুন>>
- বিখ্যাত বৌদ্ধ অনুবাদক থমাস ক্লিয়ারি মারা গেছেন।
- ক্যালিফোর্নিয়ায় অগ্নি যোদ্ধা ভিক্ষুরা দাবানল থেকে বিহার রক্ষার লডাইয়ে নেমেছেন।
- অনলাইন অনুষ্ঠানের তারিখ ঘোষণা করেছে কোর অব কালাচার।
- করোনায় আক্রান্ত মৃত বৌদ্ধ ব্যক্তির সৎকারের জন্য বিশেষ দল গঠন।
- সকল বন্দনা এক সাথে।
- সকল প্রার্থনা এক সাথে।
- সকল গাথা এক সাথে।
- সকল জাতক।
- সকল সূত্র।
- ধর্মীয় Pdf.