প্রায় ৩০ মিটার (১ মিটার=৩.২৮ ফুট প্রায়) দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট বুদ্ধ মুর্তি প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছে ভারত। নতুনভাবে তৈরীকৃত পুরো ভারত বর্ষের বৃহত্তম সিংহশয্যা বুদ্ধ মূর্তিটি আগামী কয়েক মাসের মধ্যে বিহার রাজ্যের বুদ্ধগয়ার আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ কল্যাণ মিশন মন্দির প্রাঙ্গনে স্থাপন করা হবে।
কলকাতার প্রখ্যাত ভাস্কর মিন্টু পাল এবং তাঁর ২২ জন সহযোগী কারিগরকে নিয়ে কলকাতার উপকণ্ঠে বরানগর ঘোষপাড়া, নাইনান বান্ধব সমিতির মাঠে এই মূর্তিটি তৈরি করার জন্য কমিশন দেওয়া হয়েছিল।
আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ কল্যাণ মিশন এর প্রতিষ্ঠাতা ভদন্ত আর্য পাল ভিক্ষু বলেন, “বুদ্ধের মূর্তিটি প্রথমে গত বুদ্ধ পূর্ণিমাতে স্থাপনের করার পরিকল্পনা ছিল। ভারতে কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় ঢেউ এর বিধিনিষেধের কারণে মোড়ক উন্মোচন সহ যাবতীয় অনুষ্ঠানিকতা স্থগিত করা হয়েছিল।
পুরোপুরি ফাইবারগ্লাসে মোডানো মুর্তিটির বেশ কিছু অংশ সোনার পিগমেট মিশ্রিত করে তৈরি করা হয়েছে। সুন্দর মুর্তিটির প্রতিটি অংশ এখন আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ কল্যাণ মিশন মন্দিরে সংরক্ষণ করা হয়েছে। যেখানে স্থাপান করা হবে সেখানে কংক্রিট, লোহা এবং ইস্পাত নির্মিত ভিত্তি কাঠামো তৈরির কাজও শেষ।
ভিক্ষু আর্যপাল বলেন, “মিন্টু পালের কাজ দেখে আমরা খুশি। আমি বিশ্বাস করি বুদ্ধ মূর্তিটি পুরোপুরি স্থাপন করলে সকলকে মুগ্ধ করবে। আমাদের শাখা মন্দির কলকাতার উপকণ্ঠে রাজচন্দ্রপুরে ৪৫ ফুটের [১৪মিটার] আরো একটি বুদ্ধের মূর্তি রয়েছে।”
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, মিন্টু পাল ২০১৯ সালের মার্চ মাসে মূর্তিটি তৈরি শুরু করেছিলেন, তবে COVID-19 লকডাউনের কারণে কিছু দিন কাজ স্থগিত করা হয়েছিল। শিল্পীরা গত বছরের নভেম্বর মাসে তাদের কাজটি আবার শুরু করে। বর্তমানে এর যাবতীয় কাজ শেষ। এখন শুধু আনুষ্ঠানিক স্থাপনের কাজ বাকি আছে।
ভদন্ত আর্যপাল ভিক্ষু এমন আকৃতির মুর্তির কারন ব্যাখ্যা করে বলেন, “বুদ্ধ বর্তমান উত্তরপ্রদেশের কুশিনগরে মহাপরিনির্বাণ লাভের ঠিক আগে, সিংহশয্যা হয়ে শুয়ে তাঁর শেষ বাণীটি শোনিয়ে ছিলেন। এই স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্যই এই পজিশনের মুর্তি বৌদ্ধদের কাছে এত বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া সারনাথে ২৪ মিটারের একটি দন্ডায়মান এবং বুদ্ধগায়াতে আরো একটি ২৪ মিটার ধ্যান ভঙ্গিতে আসনরত বুদ্ধের মূর্তি আছে।”
তিনি যোগ করে ভান্তে বলেন, “নতুন তৈরী সিংহশয্যারত বুদ্ধ মূর্তিটির মূল স্তম্ভ ৮০ ফুট [২৪ মিটার]। মূর্তিটি আরও বড় করা যেত, তবে বুদ্ধ যেমন ৮০ বছর বেঁচে ছিলেন সেটিকে প্রধান্য দিয়ে এর মূল দৈর্ঘ্য ৮০ ফুট রাখা হয়েছে। মূল মুর্তির সাথে একটি বেদী যুক্ত করায় ভাস্কর্যটির পুরো দৈর্ঘ্য ১০০ ফুট [৩০ মিটার] এ চলে আসে। এটি দেশের বৃহত্তম সিংহশয্যার মূর্তি হবে।”
এদিকে ভাস্কর মিন্টু ইতিহাসের অংশ হতে পেরে বেশ খুশি। তিনি বলেন, “প্রতি বছর হাজার হাজার বৌদ্ধ ভিক্ষু, তীর্থযাত্রী এবং বিশ্বজুড়ে পর্যটকগণ বুদ্ধগয়া ভ্রমণ করেন। এই সোনার মূর্তিটি প্রত্যেকে দেখবেন। আমি হয়তো পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবো কিন্তু এই ফাইবারগ্লাসে মোড়ানো মূর্তিটি হাজার হাজার বছর ধরে থাকবে।”
মুম্বাই কেসি কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডঃ বৃত্তান্ত মনওয়াতকার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, “এই সিংহশয্যা চিহ্নটি বুদ্ধের শেষ জীবন থেকে পাওয়া। বুদ্ধের এই বিশেষ স্মৃতি চিত্রকলা, স্থাপত্য ও মুর্তির মাধ্যমে স্বতন্ত্র বিবরণ দিয়ে দর্শনীয়ভাবে পুনরায় তৈরি করা দরকার।”
আরো পড়ুন>>
- ভারতের নাসিকে আবারও তিনটি নতুন বৌদ্ধ গুহা আবিষ্কৃত হয়েছে।
- মরণোত্তর দেহ দান করেছেন ভদন্ত শাসন রক্ষিত ভিক্ষু।
- প্রথমবার হোয়াইট হাউসে বৈশাখী পূর্ণিমা উদযাপন।
- অভিধর্ম দর্শনের উপর ভারতীয় বৌদ্ধ পণ্ডিতের বই রচনা।
- মালুংক্যপত্রের ১০টি প্রশ্ন।