পসন পূর্ণিমা: আজ ১১ জুন ২০২৫, শ্রীলঙ্কা জুড়ে গভীর ধর্মীয় শ্রদ্ধা, আধ্যাত্মিক উৎসাহ এবং সংস্কৃতিমূলক আয়োজনে পালিত হচ্ছে পসন পূর্ণিমা। প্রতি বছর জুন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে পালিত হয় এই পবিত্র দিনটি, যা স্মরণ করিয়ে দেয় শ্রীলঙ্কায় বৌদ্ধধর্মের সূচনার ঐতিহাসিক মুহূর্তকে। খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে ভারতের সম্রাট অশোকের পুত্র আরহত মহিন্দ্র যখন শ্রীলঙ্কা সফর করে রাজা দেবানামপ্রিয় তিস্সের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং মিহিনতলেতে প্রথম ধর্মোপদেশ প্রদান করেন, তখন থেকেই বৌদ্ধধর্ম শ্রীলঙ্কায় প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
পসন” (Poson) শব্দটি পালি শব্দ “পালগুণি” (Possatha বা Uposatha) থেকে উদ্ভূত বলে মনে করা হয়, যার অর্থ হলো পূর্ণিমা বা উপবাস দিবস। এটি মূলত বৌদ্ধ ক্যালেন্ডারের জুন মাসের পূর্ণিমা দিবসকে বোঝায়।
পসন হলো শ্রীলঙ্কার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় দিবস, যা সেই দিনের স্মরণে পালন করা হয় যেদিন আরহত মহিন্দ্র থের শ্রীলঙ্কায় বৌদ্ধধর্ম প্রচার শুরু করেন।
পসন পূর্ণিমার ঐতিহাসিক পটভূমি
পসন মূলত সেই মহৎ ঘটনাকে স্মরণ করে, যখন রাজা দেবানামপিয় তিস্স বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেন এবং পুরো দ্বীপে থেরবাদ বৌদ্ধধর্ম ছড়িয়ে পড়ে। মিহিনতলে, যেটি এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান হিসেবে বিবেচিত হয়, সেখানে আরহত মহিন্দ্রের ধর্মদর্শনের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কায় একটি নতুন আধ্যাত্মিক দিগন্তের সূচনা ঘটে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই পসন পূর্ণিমা শ্রীলঙ্কার অন্যতম পবিত্র ধর্মীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে।
২০২৫ সালের পসন পূর্ণিমা উদযাপন
চলতি বছরে পসন পূর্ণিমা উপলক্ষে দেশব্যাপী বিভিন্ন ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক কার্যক্রম আয়োজিত হয়েছে। মিহিনতলে এবং অনুরাধপুরী শহরে হাজার হাজার ভক্ত জড়ো হয়েছেন পূজা-অর্চনা, ধর্মদেশনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য। শহরের রাস্তা ও বিহারগুলো সাদা পতাকা, ফানুস, আলোকসজ্জা এবং দানসাল দ্বারা সজ্জিত হয়েছে। দানসালে জনসাধারণকে বিনামূল্যে খাদ্য ও পানীয় পরিবেশন করা হচ্ছে।
পসন পূর্ণিমা ও সরকারি বিশেষ ব্যবস্থা
সরকারি উদ্যোগে ভক্তদের জন্য বিশেষ ট্রেন সার্ভিস চালু করা হয়েছে। পসন সপ্তাহে অনুরাধপুরী ও মিহিনতলের মধ্যে ফ্রি শাটল ট্রেন চলছে এবং কলম্বো ফোর্ট থেকে অনুরাধপুরীগামী অতিরিক্ত ট্রেনও চালানো হচ্ছে যাতে তীর্থযাত্রীরা নির্বিঘ্নে যাত্রা করতে পারেন।
পসন পূর্ণিমায় ভারতীয় অংশগ্রহণ
শ্রীলঙ্কায় নিযুক্ত ভারতের হাই কমিশন কলম্বোর জাতীয় জাদুঘরে একটি বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে, যেখানে ভারতীয় বৌদ্ধ ঐতিহ্য এবং অশোক যুগের নিদর্শন তুলে ধরা হয়েছে। এই প্রদর্শনী শ্রীলঙ্কা ও ভারতের মধ্যে ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধনকে আরও জোরদার করেছে।
পসন উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতির বার্তা
রাষ্ট্রপতি অনুরা কুমার ডিসানায়েকে পসন উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে বার্তা প্রদান করেন, যেখানে তিনি জাতীয় ঐক্য, নৈতিকতা ও আধ্যাত্মিকতার পুনর্জাগরণ এবং সমাজ পরিবর্তনে বৌদ্ধধর্মের গঠনমূলক ভূমিকার উপর আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, “পসন পূর্ণিমা কেবল একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি আমাদের জাতীয় সংস্কৃতি ও আত্মপরিচয়ের প্রতীক।”