ভিয়েতনামে বুদ্ধের ধর্মাবশেষ প্রদর্শনীতে ১.৭৮ কোটি ভক্তের শ্রদ্ধা

হ্যানয়, ভিয়েতনাম | বৌদ্ধবার্তা প্রতিবেদন

ভিয়েতনামে প্রথমবারের মতো বুদ্ধের পবিত্র ধর্মাবশেষ প্রদর্শিত হওয়ায় সারা দেশে সৃষ্টি হয় গভীর ধর্মীয় আবেগ ও আধ্যাত্মিক উদ্দীপনা। ভারত থেকে আগত এই মহামূল্যবান ধর্মাবশেষ এক মাসব্যাপী প্রদর্শনীতে আনুমানিক ১ কোটি ৭৮ লক্ষ ভক্ত শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন বলে জানিয়েছে ভারতের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়।

জাতিসংঘ ঘোষিত ‘বেসাক দিবস’—বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে আয়োজিত এই ঐতিহাসিক কর্মসূচি ছিল ভারতের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ কনফেডারেশন (IBC), ও ভিয়েতনাম সরকারের সম্মিলিত উদ্যোগের ফল। মূলত ধর্মাবশেষটি ভারতের সারনাথের মুলগন্ধ কুটি বিহারে সংরক্ষিত থাকে, যেখানে গৌতম বুদ্ধ প্রথম ধম্মচক্র প্রবর্তন করেছিলেন।

২ মে ধর্মাবশেষ ভিয়েতনামের হো চি মিন সিটিতে পৌঁছে এবং ৩ মে ‘আই থান তাম’ মহাবিহারে স্থাপন করা হয়। এরপর এটি হানোইয়ের কোয়ান সু প্যাগোডা (১৩–১৭ মে) এবং তাম চুক প্যাগোডা, হা নাম প্রদেশে (১৭–১৯ মে) স্থানান্তরিত হয়। ভিয়েতনাম সরকারের অনুরোধে পূর্বনির্ধারিত ২১ মে’র পরিবর্তে প্রদর্শনীর মেয়াদ ২ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

প্রায় ১৩ কোটি জনসংখ্যার ভিয়েতনামে আনুমানিক ১.৩ কোটি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী রয়েছেন, যাঁরা মহাযান ধারায় বিশ্বাসী। তাঁদের জন্য এই ধর্মাবশেষ দর্শন ছিল এক অনন্য ধর্মীয় অনুপ্রেরণা। ভিয়েতনাম বৌদ্ধ সংঘের সর্বোচ্চ ধর্মগুরু ভিক্ষু থিচ ট্রি কুয়াং বলেন, “এই আগমন আমাদের জাতির পক্ষে গর্বের এবং লাখো ভক্ত তাঁদের ধর্মীয় ব্রত নতুন করে দৃঢ় করার সুযোগ পেয়েছেন।”

ভারতীয় প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন ওডিশার রাজ্যপাল প্রফেসর গণেশী লাল। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ভিক্ষু ও সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিনিধিরা। ২ জুন রাতে ধর্মাবশেষ ভারতীয় বিমান বাহিনীর বিশেষ বিমানে দিল্লিতে ফিরিয়ে আনা হয়। ৩ জুন একদিনের জন্য জাতীয় জাদুঘরে সর্বসাধারণের দর্শনের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয় এবং ৪ জুন রাষ্ট্রপতির কনভয়ে সারনাথের মুলগন্ধ কুটি বিহারে পুনঃস্থাপন করা হয়।

ভারত মহাবোধি সোসাইটির মহাসচিব ভিক্ষু পেলওয়াটে সিওয়ালী থের বলেন, “ভিয়েতনামের সরকার ও মানুষের ভালোবাসা আমাদের চিরস্মরণীয়। আমি বিশ্বাস করি, বুদ্ধ, ধর্ম ও সংঘের আশীর্বাদে ভিয়েতনাম আরও উন্নতির পথে এগিয়ে যাবে।”

এই মহাপুণ্য কর্মসূচি বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মধ্যে একতা, মৈত্রী ও ধর্মচেতনার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এই আন্তর্জাতিক ধর্মযাত্রা শুধু দুই দেশের সম্পর্কই নয়, বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মধ্যে মৈত্রী, সহানুভূতি ও বুদ্ধের করুণার বাণীকে আরও গভীরভাবে ছড়িয়ে দিয়েছে। এটি ছিল ধর্ম, সংস্কৃতি ও মানবতার এক অনন্য মিলনমেলা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *