দক্ষিণ কোরিয়া মৃত্যুদণ্ড বাতিল করার জন্য আদালতকে অনুরোধ করেছে দক্ষিণ কোরিয়ার বৌদ্ধরা। সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ার আদালত মৃত্যুদণ্ডের সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে একটি উন্মুক্ত শুনানি শুরু করে। শুনানিতে দক্ষিণ কোরিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম বৌদ্ধ সহ সাতটি ধর্মীয় গোষ্ঠীর নেতারা একটি যৌথ বিবৃতি দাখিল করেছেন। বিবৃতিতে মৃত্যুদণ্ড বাতিল করার জন্য আদালতকে অনুরোধ করা হয়।
১৪ জুলাই শুরু হওয়া শুনানির আগে যৌথ বিবৃতির এই লিখিত আবেদনটি আদালতে জমা দেওয়া হয়৷ স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছে জোগিয়ে বৌদ্ধ অর্ডারের প্রধান সম্মানিত ওনহেং; কোরিয়ার ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ চার্চেসের সাধারণ সম্পাদক, লি হং-জুং এবং গুয়াংজু শহরের আর্চবিশপ এবং কোরিয়ার ক্যাথলিক বিশপস সম্মেলনের খ্রিস্টান ঐক্য ও আন্তঃধর্মীয় সংলাপের প্রচার কমিটির চেয়ারম্যান কিম হি-জুং।
এছাড়াও বিবৃতিটিকে সমর্থন করে ওয়ান বৌদ্ধ অর্ডার, সুংকিয়ঙ্কওয়ান কনফুসিয়ান আন্দোলন, চেওন্ডোগিও প্যান্থিস্টিক ধর্মীয় আন্দোলন এবং কোরিয়া ধর্ম সমিতির প্রতিনিধিরা।
দক্ষিণ কোরিয়াকে বুদ্ধমুর্তি উপহার দিল ভারত
বিবৃত্তিতে আধ্যাত্মিক নেতারা কোরিয়াতে মৃত্যুদণ্ড অবসানের আহ্বান জানিয়েছেন। তারা মনেকরেন মৃত্যুদণ্ড মানুষের মর্যাদা এবং জীবনের অধিকার পরিপন্থী।
যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “মানুষের ক্ষতি করে এমন সব অপরাধীই শাস্তির যোগ্য, কিন্তু দেশ যেন নিষ্ঠুর শাস্তির মাধ্যমে তাদের জীবন কেড়ে না নেয়।” “এর পরিবর্তে, সরকারকে অবশ্যই এই ধরনের অপরাধের পিছনে প্রাথমিক কারণগুলি নির্ণয় করতে হবে এবং আইন ভঙ্গ প্রতিরোধের উপায় সন্ধান করতে হবে৷ পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্থদের প্রশাসনিক সহায়তা দেওয়ার জন্য অবশ্যই প্রচেষ্টা চালাতে হবে।”
মৃত্যুদণ্ড আইনটি দক্ষিণ কোরিয়ায় ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে একটি বিলোপবাদী নীতির অবস্থায় বজায় আছে।
১৯৪৮ সাল থেক দেশটিতে মোট ৯২০ টি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় এবং সর্বশেষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় ৩০ ডিসেম্বর ১৯৯৭ ইং তারিখে। সর্বশেষ মৃত্যুদণ্ডে ২৩ জনকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল, যাদের প্রত্যেককে কমপক্ষে দুইজন মানুষকে হত্যার জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল।
বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়াতে ৫৯ জন আসামী মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত রয়েছেন। সর্বশেষ চলতি বছরের জুনে একটি আদালত ৫৩ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে একজন মহিলাকে হত্যা এবং ২০২১ সালের ডিসেম্বরে একজন সহযোগীকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ড দেয়।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রয়াত রাষ্ট্রপতি কিম ডাই-জং, একজন বিশিষ্ট গণতন্ত্রপন্থী রাজনীতিবিদ। তিনি ১৯৯৮-২০০৩ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন, ১৯৮০ সালে তাকে রাষ্ট্রদ্রোহ ও বিদ্রোহের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। পরে সামরিক স্বৈরশাসক চুন ডো-হোয়ানের শাসনামলে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় এই নেতাকে।
ভারতে কোরিয়ান নতুন বৌদ্ধ মন্দির উদ্বোধন
আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে পরে মৃত্যুদণ্ডকে কমিয়ে বিনাশ্রম কারাদণ্ডে পরিণত করা হয়। পরে আবারও রাষ্ট্রপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করার সময়, কিম একটিও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার অনুমোদন দেননি।
সাংবিধানিক আদালত দ্বারা পূর্ববর্তী দুটি শুনানিতে, ১৯৯৬ এবং ২০১০ সালে, বিচারকরা যথাক্রমে ৭-২ এবং ৫-৪ -এর বিভক্ত সিদ্ধান্তে মৃত্যুদণ্ডের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন। ২০২০ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৫ তম অধিবেশন চলাকালীন সময় কোরিয়ার বিচার বিভাগ মৃত্যুদণ্ডের উপর স্থগিতাদেশ প্রস্তাবের পক্ষে প্রথমবারের মতো ভোট প্রদান করে মৃত্যুদণ্ড বিলোপের বিষয়ে সমর্থন জানায়।
কোরিয়ার ধর্মীয় নেতারা আদালতে পেশ করা বিবৃতিতে বলেছেন, “জীবন একটি পরম মূল্য যা আইনগত রায়ের মাধ্যমে কেড়ে নেওয়া যায় না।” “যেহেতু গত ১২ বছরে সমাজ পরিবর্তিত হয়েছে, আমরা এবার একটি সঠিক উপসংহার আশা করছি।”
২০১৫ সালের আদমশুমারির তথ্য অনুসারে, দক্ষিণ কোরিয়ার জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ ৫৬.১ শতাংশ কোনো ধর্ম মানে না। বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়ার সংখ্যাগরিষ্ট ধর্ম হলো খ্রিস্টান ধর্ম। জনসংখ্যার প্রায় ২৭.৬ শতাংশ খ্রিস্টান, দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম বিশ্বাসী বৌদ্ধরা সংখ্যায় ১৫.৫ শতাংশ।