দ্রৌপদী মুর্মু শপথ নিলেন ভারতের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে

দ্রৌপদী মুর্মু শপথ নিলেন ভারতের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে: ভারতের ১৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে গত সোমবার (২৫ জুলাই) শপথ নিলেন দ্রৌপদী মুর্মু। তিনি হলেন সে দেশের প্রথম নারী আদিবাসী প্রেসিডেন্ট।  

শপথ নেওয়ার পর দ্রৌপদী মুর্মু বলেছেন, গরিবরাও যে স্বপ্ন দেখতে পারে এবং তা পূরণ করতে পারে সেটা প্রমাণিত হলো। ভারতের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ৬৪ শতাংশ ভোট পেয়েছেন দ্রৌপদী।

উত্তর প্রদেশ ও মহারাষ্ট্র থেকে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ভোট পেয়েছেন দ্রৌপদী। ওড়িশার ময়ূরভঞ্জের সাঁওতাল পরিবারের সন্তান দ্রৌপদীর জয়ের পরই উৎসবে মেতে ওঠে আদিবাসী সমাজের মানুষ।

এর আগে রামনাথ কোবিন্দ, প্রণব মুখোপাধ্যায়, প্রতিভা পাতিল, এ পি জে আবদুল কালাম–সবাই প্রেসিডেন্ট পদে শপথ গ্রহণ করেছিলেন ২৫ জুলাই।

প্রসঙ্গত, ১৯৭৭ সাল থেকে ২৫ জুলাই ভারতের প্রেসিডেন্ট পদে শপথগ্রহণ শুরু হয়েছে। সেদিন ভারতের ষষ্ঠ প্রেসিডেন্ট নীলম সঞ্জীব রেড্ডি শপথ গ্রহণ করেছিলেন। 

এর পর থেকে সব প্রেসিডেন্ট ২৫ জুলাই শপথ গ্রহণ করেছেন। কারণ ১৯৭৭ সালের পর থেকে সব প্রেসিডেন্টই তাদের পূর্ণ মেয়াদ পর্যন্ত পদে থেকেছেন। সেই অনুযায়ী সব প্রেসিডেন্টেরই মেয়াদ শেষ হয়েছে ২৪ জুলাই। এই আবহে ২৫ জুলাই পরবর্তী প্রেসিডেন্ট শপথ গ্রহণ করেছেন সাড়ে চার দশক ধরে।

ভারতের প্রথম প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন রাজেন্দ্র প্রসাদ। তিনি শপথ গ্রহণ করেছিলেন ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি। ১৯৬২ সালের ১৩ মে পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট পদে ছিলেন তিনি। এরপর প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণন। তিনি নিজের পূর্ণ মেয়াদ পর্যন্ত পদে ছিলেন। তবে এরপর ফকরুদ্দিন আলী আহমেদ এবং জাকির হুসেন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজেদের মেয়াদ পূরণ করতে পারেননি। মাঝে ভিভি গিরি অবশ্য নিজের মেয়াদ পূর্ণ করেছিলেন।

এরপর অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট হিসেবে ১৯৭৭ সালের ২৫ জুলাই পর্যন্ত দায়িত্ব সামলেছিলেন বিডি জাট্টি। এর পর থেকে সব প্রেসিডেন্ট নিজেদের পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করেছেন এবং সবার মেয়াদই শেষ হয়েছে ২৪ জুলাই।

এ পরিস্থিতিতে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট শপথ নিয়েছেন ২৫ জুলাই এবং এই পরম্পরা সাড়ে চার দশক ধরে চলে আসছে।

দ্রৌপদী মুর্মু কে

দ্রৌপদী মুর্মূ (জন্ম: ২০ জুন ১৯৫৮) হলেন একজন ভারতীয় রাজনীতিবিদ এবং ভারতের ১৫ তম রাষ্ট্রপতি।

তিনি এর আগে ২০১৫ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ঝাড়খণ্ডের নবম রাজ্যপাল হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ওড়িশা রাজ্য থেকে আসা মুর্মূ হলেন ঝাড়খণ্ডের প্রথম রাজ্যপাল যিনি পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করেন এবং প্রথম তফসিলি উপজাতির অন্তর্গত ব্যক্তি, যিনি ভারতের রাষ্ট্রপতির পদে মনোনীত হন।

ব্যাক্তিগত জীবন

দ্রৌপদী মুর্মু ১৯৫৮ সালের ২০ জুন ওড়িশার ময়ুরভঞ্জ জেলার বাইদাপোসি গ্রামে বিরাঞ্চি নারায়ণ টুডুর কাছে একটি সাঁওতালি উপজাতি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা এবং দাদা উভয়েই পঞ্চায়েতি রাজ ব্যবস্থার অধীনে গ্রামের প্রধান ছিলেন।

দ্রৌপদী মুর্মু ১৯৫৮ সালের ২০ জুন ওড়িশার ময়ুরভঞ্জ জেলার বাইদাপোসি গ্রামে বিরাঞ্চি নারায়ণ টুডুর কাছে একটি সাঁওতালি উপজাতি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা এবং দাদা উভয়েই পঞ্চায়েতি রাজ ব্যবস্থার অধীনে গ্রামের প্রধান ছিলেন।

দ্রৌপদী মুর্মু শ্যাম চরণ মুর্মূকে বিবাহ করেছিলেন। এই দম্পতির দুটি ছেলে ছিল যারা উভয়ই মারা গেছে এবং একটি মেয়ে আছে।

কর্মজীবন

শিক্ষকতা পেশা

রাজ্য রাজনীতিতে আসার আগে মুর্মূ একজন স্কুল শিক্ষক হিসাবে শুরু করেছিলেন। তিনি শ্রী অরবিন্দ ইন্টিগ্রাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ, রায়রঙ্গপুর এর একজন সহকারী অধ্যাপক এবং ওড়িশা সরকারের সেচ বিভাগে জুনিয়র সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন।

রাজ্য রাজনীতি

মুর্মু ১৯৯৭ সালে ভারতীয় জনতা পার্টিতে যোগদান করেন এবং রায়রঙ্গপুর নগর পঞ্চায়েতের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। তিনি ভারতীয় জনতা পার্টি তফসিলি উপজাতি মোর্চার জাতীয় সহ-সভাপতি হিসেবেও কাজ করেছেন।

ওড়িশায় ভারতীয় জনতা পার্টি এবং বিজু জনতা দলের জোট সরকারের সময়, তিনি ৬ মার্চ, ২০০০ থেকে ৬ আগস্ট, ২০০২ পর্যন্ত বাণিজ্য ও পরিবহন এবং ৬ আগস্ট, ২০০২ থেকে ১৬ মে ২০০৪ পর্যন্ত মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ উন্নয়নের স্বাধীন দায়িত্বের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন।[৬] তিনি ওড়িশার প্রাক্তন মন্ত্রী এবং ২০০৪ এবং ২০০৪ সালে রায়রঙ্গপুর বিধানসভা কেন্দ্রের একজন বিধায়ক।[৭] ২০০৭ সালে ওড়িশা বিধানসভা দ্বারা তিনি সেরা বিধায়কের জন্য নীলকণ্ঠ পুরস্কারে ভূষিত হন।

গভর্নরশিপ

তিনি ছিলেন ঝাড়খণ্ডের প্রথম মহিলা রাজ্যপাল।[৮][৯] তিনি ওডিশা থেকে প্রথম মহিলা আদিবাসী নেত্রী যিনি ভারতীয় রাজ্যের গভর্নর হিসেবে নিযুক্ত হন।

২০২২ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনী প্রচারণা

২০২২ সালের জুনে, বিজেপি জুলাই মাসে ভারতের রাষ্ট্রপতি পদে অনুষ্ঠিতব্য ২০২২ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জাতীয় গণতান্ত্রিক জোটের প্রার্থী হিসাবে মুর্মূ মনোনীত করেছিল।

শেয়ার করে সবাইকে পড়ার সুযোগ দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!