শ্রীলঙ্কায় নতুন রাষ্ট্রপতি রনিল বিক্রমাসিংহে শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে বৌদ্ধ ধর্মের অগ্রণী স্থান সমুন্নত রাখার অঙ্গীকার করেছেন। গত সপ্তাহে বিক্রমাসিংহে পার্লামেন্টে তার প্রথম বক্তৃতাকালে এই প্রতিস্রোতি ব্যক্ত করেন।
বিক্রমাসিংহে গত ১৩ জুলাই ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত হন এবং ২১ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাকে শ্রীলঙ্কায় স্থিতিশীলতা আনায়নের জন্য শক্তি হিসেবে বিবেচনা করেছে দেশটির জনগন। শ্রীলঙ্কানদের বিশ্বাস দেশের সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে তিনি আবারও একত্রিত করে নতুন করে দেশকে সাজাতে পারবেন। দেশটির বৌদ্ধ ভিক্ষু নেতা সহ সকলেই এই আশা ব্যক্ত করেছেন।
গত ৩ আগস্ট বিক্রমাসিংহে শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট হিসেবে পার্লামেন্টে তার প্রথম ভাষণ দেন। ভাষণে তিনি রাষ্ট্র ধর্ম বৌদ্ধধর্মের স্থানকে সর্বাগ্রে সমুন্নত রাখার এবং দেশে আইন-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
বিক্রমাসিংহের ভাষণ জুড়ের বিশেষভাবে শ্রীলঙ্কায় বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদী কাঠামোর প্রতি তার সমর্থনের পুনর্নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, “সাংবিধানিকভাবে বৌদ্ধধর্মকে সর্বাগ্রে স্থান দিতে বাধ্য থাকবো এবং সেই অনুযায়ী বুদ্ধসাসনকে রক্ষা ও প্রতিপালন করবো।”
একই সময়ে, তিনি অ-বৌদ্ধদের আশ্বস্ত করছেন যে, শ্রীলঙ্কায় বসবাসকারী সকল ধর্মের নাগরীকদের অধিকার সুরক্ষিত থাবকে। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা পর্যালোচনা করে তিনি সিংহল বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদের গভীরতা বুঝতে সক্ষম হন। সাথে সাথে তিনি বৌদ্ধ নেতাদের পক্ষ থেকে অসহিষ্ণুতা বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন।
এর আগে ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট শ্রীলঙ্কাকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, “শ্রীলঙ্কা ক্রমশ সামরিকীকরণের দিকে প্রবাহিত হয়েছে এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলিতে সিংহল জাতীয়তাবাদ ও বৌদ্ধধর্মের জোর বেশি দৃশ্যমান হয়েছে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রান্তিকতা এবং অনিশ্চয়তা বাড়িয়েছে।”
শ্রীলঙ্কায় সাধারণ মানুষের পাশে BDCHK
ইতিমধ্যে, অসংখ্য মানবাধিকার সংস্থা শ্রীলঙ্কাকে একটি ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান গ্রহণ করার আহ্বানও জানিয়েছে যা বৌদ্ধ ধর্ম বা অন্য কোনো ধর্মকে বিশেষ কোন স্থান দেবে না।
বিক্রমাসিংহে গত তিন দশক ধরে শ্রীলঙ্কায় একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে তার বক্তৃতা ও কর্মে ধারাবাহিকভাবে বৌদ্ধ ধর্মের প্রাধান্যকে সমর্থন করেছেন। তার বক্তৃতায় সিংহলী এবং তামিলদের মধ্যে জাতিগত বিভাজনের রাজনৈতিক সমাধানের জন্য নিজের আকাঙ্ক্ষার উপর জোর দেন। তামিলদের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন:
যুদ্ধের কারণে তারা অনেক সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যায় ভুগছে। জমি সংক্রান্ত অনেক সমস্যা আছে যেগুলোর সমাধান করা দরকার। উত্তরাঞ্চলের উন্নয়ন কাজগুলো নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। আমরা শ্রীলঙ্কার পুনর্গঠনের কর্মসূচিতে তাদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার মাধ্যমে বিদেশে বসবাসরত শ্রীলঙ্কান তামিলদের সমর্থন আশা করি। আমরা তাদের মাতৃভূমিতে সফর এবং বিনিয়োগের অপেক্ষায় আছি।
যাইহোক, বিক্রমাসিংহের জন্য সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, কয়েক মাস ধরে চলা বিক্ষোভ এবং মাঝে মাঝে সহিংসতার অবসান ঘটানো। তিনি বিক্ষোভকারীদের সমালোচনা করে বলেন যে বিক্ষোভকারীরা যখন শুরুতে একটি অহিংস আন্দোলন হিসেবে শুরু করলেও পরে তা “সহিংসতায় লিপ্ত হয়ে বিক্ষোভটি সন্ত্রাসবাদের দিকে মোড় নেয়।”
তিনি সহিংস আন্দোলকারীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, “যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আইন লঙ্ঘন করেছে এবং সহিংস ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে আমরা খেয়াল রাখবো কারা আন্দোলনের সময় শান্তি বজায় রাখতে চেষ্টা করেছে। যারা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করেছে তাদের ছাড় দেওয়া হবে।”
বিক্রমাসিংহে প্রতিবেশী ভারতকে সঙ্কটের সময় সহায়তা প্রদানের জন্য বিশেষ ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ভারত সরকার আমাদের প্রাণের শ্বাস দিয়েছে। আমরা তাদের ধন্যবাদ না দিয়ে পারি না।”
উল্লেখ্য, দক্ষিণ এশিয়ার দেশটি কয়েক মাস অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতার পর আপেক্ষিক বর্তমানে কিছুটা শান্ত সময়ে প্রবেশ করেছে বলে মনে করা হচ্ছে। অশান্তির জের ধরে গত মে মাসে তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসেকে তার পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছিল। পরে জুলাই মাসে বিক্ষোভকারীরা রাষ্ট্রপতির প্রাসাদে হামলা চালালে, রাষ্ট্রপতি গোতাবায়া রাজাপাকসে পদত্যাগ করেন এবং দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান।