শরণার্থীদের সাড়ে ৫ লক্ষ মার্কিন ডলার দান করেছে বৌদ্ধ মানবিক সংগঠন: ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে চলমান উদ্বাস্তু সংকটের কারণে সহযোগীতার প্রতিক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে, তাইওয়ানের সদর দফতরের দাতব্য সংস্থা এবং মানবিক সংস্থা Buddhist Tzu Chi Foundation। ফাউন্ডেশনটি সম্প্রতি পোল্যান্ডের ওপোলে অবস্থিত কাউন্টিতে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীদের নগদ কার্ড বিতরণ করেছে।
Buddhist Tzu Chi Foundation-এর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,“ইউক্রেনে যে বিপর্যয় ঘটেছে তাতে লক্ষাধিক শরণার্থী পালিয়ে গেছে এটা যেমন ঠিক তেমনি অনেক দরিদ্র দেশ ক্ষুধার্ত হয়েছে। মানুষের দুঃখকষ্ট দূর করার জন্য প্রয়োজন কেবল সমবেদনা, প্রেমময় ও ভালোবাসা। ইচ্ছা করলেই সহানুভূতিশীল হৃদয় গড়ে তোলা খুব সহজ। একটি সহানুভূতিশীল হৃদয় গড়ে তোলতে আপনি- ছোট ছোট ভাল কাজগুলি করুন, যেমন একটি মুদ্রা ব্যাঙ্কে কয়েন সংরক্ষণ করুন এবং অভাবী লোকদের সাহায্য করার জন্য অর্থ দান করুন। বিশ্বাস করতে হবে সমস্ত ভাল কাজের সৌন্দর্য আমাদের হৃদয়ের মমতায় নিহিত। এখন থেকে, আসুন আমরা সহানুভূতিশীল হৃদয় গড়ে তোলার জন্য কঠোর পরিশ্রম করি। সমস্ত জীবন্ত প্রাণীকে লালন করি এবং আমাদের ভালবাসা এবং যত্ন ছড়িয়ে দিই।”
চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের কারণে ৬.৩ মিলিয়নেরও বেশি ইউক্রেনীয়কে তাদের দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে। UNHCR এর তথ্য অনুসারে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে শরণার্থীদের সবচেয়ে বড় সংখ্যা এটি। আক্রমণ থেকে পালিয়ে আসা অনেক মানুষ এবং পরিবারের জন্য প্রথম আশ্রয়স্থল হলো পোল্যান্ড। ইউরোপ, তাইওয়ান, তুরস্ক এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আগত শত শত Tzu Chi এর স্বেচ্ছাসেবক দল মানবিক সহায়তা দেওয়ার জন্য পোল্যান্ডর রাজধানী শহর ওয়ারশ সহ লুবলিন এবং পজনানে বর্তমানে অবস্থান করছে।
Tzu Chi এর প্রতিনিধি রাডোস্লো এটলাস বলেছেন, ইউক্রেনিয় উদ্বাস্তুরা Tzu Chi প্রদত্ত উপহার কার্ডগুলি বিভিন্ন উপায়ে ব্যবহার করতে সক্ষম হবে: “কার্ডগুলো সাধারণত মাস্টারকার্ড এবং ভিসা ক্রেডিট কার্ড এর মতোই ব্যবহার করা যাবে। যে মেশিন গুলোতে মাস্টারকার্ড এবং ভিসা ক্রেডিট কার্ড রিড করে সেব সব খুচরা আউটলেটে ব্যবহার করে কেনা-কাটা করতে পারবে৷ আবার ইচ্ছা করলে এটিএম থেকে নগদ অর্থও তুলতেও পারবে।
শরণার্থীদের পাশে দাঁড়ালে বৌদ্ধ সংগঠন -পড়তে ক্লিক করুন।
এর আগে Tzu Chi এর পক্ষ থেকে ১৩০০ জন শরণার্থীদের মাঝে প্রায় ২.৫ মিলিয়ন পোলিশ জলটি (পোল্যান্ডের মুদ্র zlotys) যার মূল্য প্রায় ৫৪১০০০ মার্কিন ডলারের সমান। এই চালানে ৩০০০ টি নগদ কার্ড বিতরণ করেছে যার প্রতিটির মূল্য ১,০০০ zlotys (US$216)।
“কারা এই কার্ডের সুবিধা পাবে তালিকাটি স্থানীয় পৌর কর্তৃপক্ষ বাছাই করে ঠিক করা হয়েছে।” এটলাস বলেন, “কার্ডগুলো কিভাবে বিতরণ করা হবে তা নির্ভর করছে মিউনিসিপ্যালিটি কীভাবে চাচ্ছে তার উপর। তারা সাধারণত বাচ্ছাসহ মাদের অগ্রাধিকার দিয়েছে।”
সাইলেসিয়ার ঐতিহাসিক শহর ওপোলের মেয়র Arkadiusz Wiśniewski কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, “আমরা Tzu Chi ফাউন্ডেশনের এরকম সমর্থনের জন্য সন্তুষ্ট কারণ আমাদের পক্ষে শরণার্থীদের সাহায্য করার ক্ষমতা সীমিত। আমারা তাইওয়ানের মানবিক সহায়তা সংস্থা Buddhist Tzu Chi Foundation কে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।”
ওপোলের নিকটবর্তী শহর নিমোডলিনের মেয়র ডোরোটা কনসেউইচ, উল্লেখ করেছেন যে, ”যদিও সম্প্রতি উদ্বাস্তুদের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে এরপরও এখানে মানবিক সহায়তার খুব প্রয়োজন। আমরা আমাদের সাহায্যের প্রকৃতি পরিবর্তন করছি: আমরা আশ্রিত কিছু শরণার্থীর জন্য চাকরির ব্যবস্থা করেছি। কিন্তু তাদের বাসস্থান খুঁজে বের করা আমাদের জন্য সত্যিই চ্যালেঞ্জের। এই সমস্যাটিই এখন আমরা বেশি মুখোমুখি হচ্ছি।”
Buddhist Tzu Foundation এখনও তাদের তহবিল সহংগ্রহের কাজ চলিয়ে যাচ্ছে। ফাউন্ডেশনের সিইও পো-ওয়েন ইয়েন বলেছেন “মানবতার সেবা এবং অন্যদের অনুপ্রাণিত করার জন্য আমাদের সাধারণ মিশনের সাথে আমরা বিশ্বাস করি এই আন্তঃধর্মীয় অংশীদারিত্ব উদ্বাস্তুদের বস্তুগত প্রয়োজন এবং মানসিক সমর্থন উভয় ক্ষেত্রেই সহায়তা করবে। তিনি আরো বলেন, “একজনের শক্তি ছোট হতে পারে, কিন্তু একসাথে, আমরা পাহাড় সরাতে পারি।”
“Love & Compassion for Ukraine” এই উদ্দেশ্যে দান করতে এখানে ক্লিক করুণ-
The Buddhist Compassion Relief Tzu Chi Foundation, Republic of China
বৌদ্ধ মানবিক সংস্থাটির আসল নাম The Buddhist Compassion Relief Tzu Chi Foundation, Republic of China যা বিভিন্ন দেশে Buddhist Tzu Chi Foundation নামে অধিক পরিচিত। সংগঠনটি ১৯৬৬ সালে তাইওয়ানে বৌদ্ধ সন্ন্যাসী এবং ধর্ম শিক্ষক মাস্টার চেং ইয়েন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তাদের স্লোগান “putting compassion into action” (সমবেদনাকে কার্যকর করা) এর উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে, Buddhist Tzu Chi Foundation তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে সুনামের সাথে। এটি বর্তমানে জাতিসংঘ-স্বীকৃত এনজিও যার প্রায় ১০ মিলিয়ন সমর্থক এবং বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশে ৪৩২টি অফিস আছে। বর্তমানে তারা বিশ্বের ৫১টি দেশে মানবিক সহায়তা, চিকিৎসা সেবা, শিক্ষার ক্ষেত্রে নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা করছে।