দালায় লামা: ভারতের লাদাখে ভ্রমণরত শ্রদ্ধেয় দালায় লামা মুসলিম সম্প্রদায়ের সাথে দেখা করার জন্য একটি আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছে। গত শনিবার (১৩ আগস্ট) মুসলিম সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে এই আমন্ত্রণ জানানো হয়। মুসলিম সম্প্রদায়ের সাথে মতবিনিময়ের সময় তিনি সমবেদনা এবং আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতির একটি বার্তা শেয়ার করেছেন। বর্তমানে দালায় লামা ভারতের লাদাখে বৌদ্ধ প্রধান জান্সকার জেলায় ভ্রমণ করছেন।
মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতারা মহামতি দালায় লামাকে স্বাগত জানান। সমাবেশে স্থানীয় ইমাম বিশেষ আশীর্বাদ প্রার্থনা করেন।
সমাবেশের উদ্দেশ্যে দালায় লামা বলেন, “একজন বৌদ্ধ সন্ন্যাসী হিসাবে, আমি যেখানেই যাই আমি মানুষকে আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি গড়ে তুলতে উত্সাহিত করি। প্রচলিত সকল ধর্মীয় ঐতিহ্য তাদের অনুগামীদের প্রেম ও সহানুভূতি গড়ে তুলতে এবং অন্যের উপকারে জন্য কাজ করার পরামর্শ দেয়। তাই আমি যখনই পারি বিভিন্ন উপাসনালয় পরিদর্শন করি, যেমনটি আজ সকালে এই ঈদগাহে এসেছি।”
দালায় লামার জন্মদিন পালিত>>
“যদিও বিভিন্ন ধর্মীয় অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা দেখে দুঃখজনক তবে এমনও দেখা যায় যে একই ধর্মের বিভিন্ন মতবাদের সদস্যদের মধ্যেও ঝগড়া হয় যা দুঃখজনক। যেমনটি আমরা আফগানিস্তানে সুন্নি এবং শিয়া মুসলমানদের মধ্যে দেখতে পাই৷ যদিও আমাদের বিভিন্ন ধর্মীয় মতবাদ বিভিন্ন দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি জাহির করে, তবে সকলের সাধারণ উদ্দেশ্য হল তাদের অনুসারীদের সদয় হতে উত্সাহিত করা।”
দালাই লামা তিব্বতীয় বৌদ্ধ এবং লাসার ছোট মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে যে সুসম্পর্ক দেখেছেন তা স্মরণ করে বলেন, ”তিব্বতে সমস্ত বৌদ্ধ উৎসবে মুসলমানদের সর্বদা স্বাগত জানানো হয়।“
“আমি এটা দেখে আনন্দিত যে এখানে জান্সকারে, মুসলিম এবং বৌদ্ধ সম্প্রদায় একে অপরের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে বসবাস করে, যার জন্য আমি আজ আবার আমাদের মুসলিম ভাই ও বোনদের ধন্যবাদ জানাতে চাই। এই সুসম্পর্ক যুগযুগ ধরে ঠিকে থাকার প্রার্থনা করি।”
তার বক্তব্যে দালাই লামা ৪,০০০ এরও বেশি সমবেত ছাত্র এবং যুবকদের উদ্দেশ্যে সামাজিক, আবেগগত এবং নৈতিক শিক্ষার (SEE লার্নিং) প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে বিভিন্ন বিষয় শেয়ার করেছেন। তার বক্তব্য জুড়ে মানুষের হৃদয়কে শিক্ষিত এবং মনকে বিকশিত করার উপর জোর দেয়।
তিনি বলেন,“সময় সর্বদা এগিয়ে চলেছে। কিছুতেই তা থামানো যাবে না এই গতিকে। আমাদের মনে রাখতে হবে যে আমরা অতীতকে পরিবর্তন করতে পারি না, কিন্তু আমরা ভবিষ্যৎকে রূপ দিতে পারি। আপনি যত বেশি সহানুভূতিশীল হবেন তত বেশি আপনি অভ্যন্তরীণ শান্তি পাবেন। যেহেতু মানুষের মধ্যে চিন্তা করার প্রকৃতি প্রদত্ত ক্ষমতা রয়েছে এটি কাজে লাগিয়ে শিক্ষা একটি ভাল ভবিষ্যত তৈরি করতে মূল ভূমিকা পালন করতে পারে।”
দালায় লামা লাইব্রেরী স্থাপন করা হয়েছে আমেরিকায়>>
“আপনি ধর্মে বিশ্বাস করেন বা না করেন সেটা ব্যক্তিগত বিষয়। যাইহোক, বিশ্বে শান্তি বজায় রাখতে উপযোগী পরিস্থিতি তৈরি করার জন্য আমাদের সম্মিলিত দায়িত্ব রয়েছে। যেহেতু সংঘাত শক্তি দ্বারা নিষ্পত্তি করা যায় না, তাই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত একটি অসামরিক বিশ্ব।”
তিব্বতীয় মালভূমির উঁচুতে অবস্থিত লাদাখ, যা উচ্চ গিরিপথের দেশ হিসাবে পরিচিত। এটি হিমালয় পর্বত থেকে কুনলুন রেঞ্জ পর্যন্ত বিস্তৃত এবং সিন্ধু নদীর উপরের উপত্যকাও এর অন্তর্ভুক্ত। লাদাখের বেশিরভাগ অঞ্চল সমুদ্রপৃষ্ট থেকে ৩০০০ মিটারের বেশি উচ্চতায় দাঁড়িয়ে আছে। ২০১৯ সালে, লাদাখ ভারতের সবচেয়ে বড় কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গুলোর মধ্যে একটি। লাদাখের সংস্কৃতি এবং ইতিহাস তিব্বতের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত যার কারনে লাদাখকে তিব্বতের ছোট সংস্করণ বলা হয়।
লাদাখের বেশির ভাগ জনসংখ্যা লেহ এবং কার্গিল এই দুই জেলার মধ্যে বিভক্ত। ২০১১ সালের আদমশুমারির তথ্য অনুসারে কার্গিলে, প্রায় ১৪০,৮০০ জনসংখ্যার ৭৬.৯ শতাংশ মুসলমান (বেশিরভাগই শিয়া) এবং লেহতে, প্রায় ১৩৩,৫০০ জনসংখ্যার ৬৬.৪০ শতাংশ বৌদ্ধ। বৌদ্ধদের অধিকাংশই তিব্বতি বৌদ্ধধর্ম পালন করে। সামগ্রিকভাবে, লাদাখের জনসংখ্যার ৪৬.৪ শতাংশ মুসলমান, ৩৯.৭ শতাংশ বৌদ্ধ ১২ শতাংশ হিন্দু এবং অবশিষ্ট ১.৯ শতাংশ শিখ, খ্রিস্টান এবং অন্যান্য ধর্মের অনুসারী।