দালাই লামার ভারত ভ্রমণ: কোভিড-১৯ মহামারীজনিত কারণে দীর্ঘ দুই বছর পর বৃহস্পতিবার ভারতের বুদ্ধগয়ায় ভ্রমণ করেছেন মহামান্য দালাই লামা। এর আগে দালাই লামা সর্বশেষ বুদ্ধগয়া সফর করেছিলেন ২০২০ সালের জানুয়ারী মাসে। মহামান্য দালায় লামা আগামী বছর জানুয়ারী মাসের শেষ পর্যন্ত ভারতের বিভিন্ন বৌদ্ধ তীর্থস্থানে অবস্থান করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এই সময় তিনি ধারাবাহিক শিক্ষা ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান পরিচালনা করার কথা রয়েছে।
তিব্বতের এই বৌদ্ধ আধ্যাত্মিক নেতাকে গয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অভ্যার্থনা জানাতে গয়া জেলার জেলা কর্মকর্তা সহ অনেক পূণ্যার্থী ছুটে আসে। বুদ্ধগয়া টেম্পল ম্যানেজমেন্ট ট্রাস্টের মতে, দালায় লামাকে এক পলক দেখার জন্য ভারতে তার অনেক অনুগামী এবং শুভাকাঙ্ক্ষীরা বিমানবন্দর থেকে বুদ্ধগয়া পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত রাস্তা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে তাকে পুষ্প বৃষ্টি বর্ষণ করে।
দালাই লামার সফরকে কেন্দ্র করে রাজ্যে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ শহরে কোভিড-১৯ প্রোটোকল কঠোর করেছে। দালায় লামাকে দেখতে আসা পূণ্যার্থীদের কোভিড-১৯ পরীক্ষা করার জন্য স্বাস্থ্য কর্মীদের মোতায়েন করা হয়েছে এবং জনসাধারণকে মাস্ক পরার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
দালাই লামাকে দেখতে উপস্থিত হাজার হাজার মুসলিম
স্থানীয় মিডিয়া রিপোর্ট অনুসারে, মহামান্যের ধর্মীয় ও শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে প্রায় ৫০টি দেশ থেকে ৬০,০০০ এরও বেশি পূণ্যার্থীর আগমন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
গয়ার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট উদ্ধৃত করে স্থানীয় গণমাধ্যমে লেখা হয়েছে, “দালাই লামার ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা সমস্ত পূণ্যর্থীদের কোনরূপ অসুবিধা হবেনা। আমরা পূণ্যার্থীদের সকল সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য সমস্ত ব্যবস্থা নিয়েছি। সকলের জন্য আবাসন, পানীয় জল, বিদ্যুতসহ বিভিন্ন বিষয় নিশ্চিত করা হয়েছে। এমনকি কালচক্র [শিক্ষা] ময়দানে হাঁটতেও তাদের কোনো অসুবিধা হবে না।”
শুক্রবার ভোরে, মহাবোধি মন্দিরে তীর্থযাত্রাকালে তিনি মিডিয়াকে সংক্ষিপ্ত এক ভাষণে তিনি বলেন,-
“শারীরিকভাবে, আমরা তিব্বতের অভ্যন্তরে বসবাসরত আমাদের তিব্বতি ভাই ও বোনদের থেকে বিচ্ছিন্ন। যাইহোক, আধ্যাত্মিকভাবে, আমরা অনেক বেশি সংযুক্ত। একইভাবে, হিমালয় অঞ্চলে বসবাসরত সকল তিব্বতিদের মাঝে অসামান্য ভক্তি ও নিষ্ঠা রয়েছে। তারা সবাই আমার প্রার্থনায় আছে। আমি বিশ্বাস করি, শেষ পর্যন্ত সত্যেরই জয় হবে।”
শুক্রবার বোধগয়ায় তার বাসভবনে ফিরে আসার আগে, নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী দালাই লামা বলেন, “সমস্ত মানব জাতী সহ সকল প্রাণির প্রতি আরও সহানুভূতিশীল এবং আরও ন্যায়সঙ্গত বৈশ্বিক সমাজ তৈরি করার জন্য আরও অনেক কিছু করা দরকার: “আজকের দ্রুতগতির বিশ্বে, আমরা মৌলিক মানব প্রকৃতির অগ্রগতিতে একটি ধাক্কা থাকলেও বস্তুগত জিনিসের ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন দেখেছি, যার প্রতি আরো মনোযোগ দিতে হবে।
দালাই লামা আগামী ২৯-৩১ ডিসেম্বর সকাল বেলা কালচক্র শিক্ষা গ্রাউন্ডে বোধিচিত্ত বিষয়ে নাগার্জুনের ভাষ্যের উপর তিন দিনের ধর্ম দেশনা ও শিক্ষা দেওয়ার কথা রয়েছে।
2022 সালের শেষ দিন অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বর এক বিশেষ আশির্বাদ সভায় উপস্থিত থাকবেন যাকে বলা হচ্ছে ২১ তারা আশীর্বাদ প্রদান অনুষ্ঠান।
ইংরেজী নববর্ষের দিন দালাই লামা মহাবোধি মন্দিরে প্রার্থনা করবেন। দালাই লামার দীর্ঘায়ূ কামনা করার উদ্দেশ্যে এটি কালচক্র শিক্ষার মাঠ এবং তিব্বতি বৌদ্ধ গেলুগ স্কুলের বৌদ্ধ ভিক্ষুরা আয়োজন করবে।
বলে রাখা ভালো সমস্ত অনুষ্ঠানগুলো সর্বস্তরের মানুষের জন্য উন্মোক্ত থাকবে।