পাকিস্তানে ২৩০০ বছরের পুরনো বৌদ্ধ মন্দির আবিষ্কার

পাকিস্তানে খনন কাজ করে ২৩০০ বছরের পুরনো একটি বৌদ্ধ মন্দির আবিষ্কার করেছে পাকিস্তান ও ইতালীয় প্রত্নতাত্ত্বিক দল। হিন্দুস্তান টাইমস দাবি করেছে, পাকিস্তানে আবিষ্কৃত নতুন এই বৌদ্ধ প্রত্নতত্ত্ব বিখ্যাত তক্ষশিলায় আবিষ্কৃত ধ্বংসাবশেষের চেয়েও পুরনো।

খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের আধুনিক বারিকোটের অধীনে অবস্থিত বাজিরা নামে পরিচিত একটি এলাকায় এই মন্দিরটি আবিষ্কৃত হয়েছে।

আবিষ্কৃত মন্দিরটিতে চার মিটার উচুঁ একটি স্মৃতিস্তম্ভ স্পষ্ট হয়েছে, যেটিকে প্রত্নতাত্ত্বিকরা “অপসিডাল মন্দির” বলে অভিহিত করেছেন। তারা একটি বুলেভার্ড বা প্রধান রাস্তাও খুঁজে পেয়েছে যা প্রাচীন বাজিরা শহরের অংশ বলে মনে হচ্ছে। এখানে একটি গেট দেখা যাচ্ছে যা সম্ভবত শহরের প্রবেশদ্বার পর্যন্ত নিয়ে গিয়ে শেষ হয়েছে।

পাকিস্তানের প্রত্নতত্ত্ব ও জাদুঘর বিষয়ক প্রাদেশিক বিভাগের সহযোগিতায় Ca’ Foscari University এবং ইটালিয়ান আর্কিওলজিক্যাল মিশন টু পাকিস্তান (MAIP) এর প্রত্নতাত্ত্বিকরা এই স্থানটি আবিষ্কার করেছেন।

বিখ্যাত বৌদ্ধবিদ জিউসেপ টুকি ১৯৮৪ সালে MAIP প্রতিষ্ঠা করেন। জিউসেপ টুকির নেতৃত্বে MAIP এর প্রতিষ্ঠাকাল থেকে প্রাচীন শহর বাজিরার ধ্বংসাবশেষ খনন কাজ শুরু হয়। সর্বশেষ চলতি বছরের গত সপ্তাহে এই বিশাল মন্দিরটি আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছে MAIP.

MAIP-এর ডিরেক্টর প্রফেসর লুকা এম. অলিভিয়েরি বিখ্যাত মিডিয়া ডন-কে এক স্বাক্ষাতকারে বলেছেন, ”আবিষ্কৃত সাইটের প্রথম ভিত্তির সময়কাল (৩২২BCE-১৮৫BCE) মৌর্য যুগের সাথে মিলে যায়।”

2300 years oldest Buddhist temple
আবিষ্কৃত বৌদ্ধ মন্দিরের একাংশের চিত্র

তিনি আরো বলেন, “এটি আশ্চর্যজনকভাবে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার, কারণ এটি গান্ধার বৌদ্ধ কাঠামো ‍গুলোর একটি নতুন স্থাপত্য আকৃতির স্থপনা। তক্ষশিলার সিরকাপ  শহরে অপসিডাল মন্দিরের আরেকটি উদাহরণ আছে। যাইহোক, বাজিরার অপসিডাল মন্দিরটি এখন পর্যন্ত পাকিস্তানে এই যুগের স্থাপত্যের মধ্যে প্রাচীনতম উদাহরণ।”

প্রত্নতাত্ত্বিকগণের মতে, অঞ্চলটি একসময় গান্ধার রাজ্যের অংশ ছিল। প্রাচীন গান্ধারের রাজা মিলিন্দ মধ্য এশিয়া জুড়ে বৌদ্ধধর্মের বিস্তারের পাশাপাশি বৌদ্ধ শিল্প ও মূর্তিবিদ্যার অঙ্কুরোদগমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য বিখ্যাত ছিলেন।

প্রাপ্ত ধ্বংসাবশেষ কেবল বাজিরার গান্ধার রাজ মিলিন্দের (১৬৫/১৫৫BCE-১৩০BCE) ইন্দো-গ্রীকদের প্রতি আতিথেয়তা প্রমাণ করে না, তিনি সে সময় বৌদ্ধধর্মের সমর্থনের জন্য সবচেয়ে বিখ্যাতও ছিলেন। মূলত খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতক ছিল বৌদ্ধধর্মের স্বর্ণযুগ।

প্রত্নতাত্ত্বিক দলের অপর সদস্য ডক্টর মিশেল মিনার্দি বলেছেন, “এখানে আমরা বেশ কিছু মুদ্রা খুঁজে পেয়েছি, যার মধ্যে রাজা মিলিন্দের জারি করা একটি রৌপ্য মুদ্রা, একটি সীলমোহর যা হেলেনিস্টিক ইন্টাগ্লিও দিয়ে সজ্জিত ছিল, একটি খরোস্তি শিলালিপি পাওয়া গেছে যার উপর গ্রীক পোশাক পরিহিত যুবকের ছবি চিত্রিত করা আছে।”

পাকিস্তানে অবস্থানরত ইতালির রাষ্ট্রদূত আন্দ্রেয়াস ফেরারেস বিখ্যাত গণমাধ্যম ডনকে দেওয়া এক স্বাক্ষাতকারে বলেন, “নতুন আবিষ্কৃত বৌদ্ধ মন্দিরটি ইতালীয় এবং পাকিস্তানি প্রত্নতাত্ত্বিকদের একটি যৌথ দল দ্বারাও করা হয়েছে বলে আমি উচ্ছ্বসিত। এখানে এমন কিছু পাওয়া গেছে যা পাকিস্তান এবং ইতালির প্রত্নতত্ত্বের মধ্যে অনেক কিছুর মিল আছে যা খুবই চিত্তাকর্ষক।”

তিনি আরো বলেন, “এটি এমন কিছু নির্দেশ করে যা প্রাচীনকালেও আমাদের মধ্যে এক ধরণের বিশ্বায়ন ছিল যেখানে লোকেরা সংস্কৃতি এবং ধর্মের কিছু কৌশল এবং ধারণার আদান-প্রদান করেছিল যা আশ্চর্যজনক। আমরা অতীতকে যত বেশি অনুসন্ধান করি, ততই আমরা একে অপরের কাছে চলে আসি।”

দুর্ভাগ্যবশত, ২০০৮ থেকে ২০১০ সালে খনন কাজ চলাকালীণ সময় খননকারীরা সাইটটি অবৈধভাবে লুট করে নিয়েছিল। লুট হওয়া সত্ত্বেও, প্রত্নতাত্ত্বিকদের পাকিস্তানি দলের নেতা ডক্টর আব্দুল সামাদ খান মনে করেন, আবিষ্কৃত সাইটের শুধুমাত্র পাঁচ শতাংশ অন্বেষণ করা হয়েছে। এখনো গান্ধারন কমপ্লেক্সের বেশিরভাগই অন্বেষণ করা বাকি আছে। সম্ভবত মাটির নিচে সমাহিত শহরটি পুরোটা উন্মোক্ত করা গেলে পাকিস্তানে ইন্দো-গ্রীক সময়কাল সম্পর্কে আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উদ্ঘাটন করা যাবে।

 

আরো পড়ুন>>

শেয়ার করে সবাইকে পড়ার সুযোগ দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!