আগুন নিয়ন্ত্রেণে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা আমেরিকায় ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। বিভিন্ন সময়ে ভিক্ষুরা আগুন নিয়ন্ত্রণে এগিয়ে এসেছেন নিজ উদ্যোগে।
গত ১৭ জুন ক্যালিফোর্নিয়ার Big Sur এলাকার জঙ্গলে এক দাবানলের সূত্রপাত হয়। দাবানলটির নামকরন করা হয়েছে উইলো ফায়ার। জ্বলতে থাকা দাবানলটি তাসাজারা জেন মাউন্টেন সেন্টারের কাছাকাছি আশংকাজনকভাবে জ্বলছিল। সেখানে অবস্থিত বৌদ্ধ বিহারের মূল্যবান দরকারি জিনিসপত্র সরিয়ে নেওয়া হলেও যে কোন মুহুর্তে বিহারটি আগুনে আক্রান্ত হতে পারতো। বিহারের প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত কয়েকজন ভিক্ষু আগুন নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করে পরে তাদের সাথে যোগ দেয় স্থানীয় দমকলকর্মী বাহিনী।
পরবর্তীতে সরকারের জরুরী বিভাগ জলবাহী হেলিকপ্টার ও বিমান দিয়ে সমগ্র এলাকা আচ্ছাদন করে ফেলে। জানাগেছে গত সপ্তাহে উইলো ফায়ারে তাপমাত্রা কিছুটা শীতল হয় এবং আগুন নিয়ন্ত্রণ প্রচেষ্টার অনেক অগ্রগতি হয়েছে। জরুরী পরিষেবা মন্টেরি কাউন্টি অফিসের ওয়েবসাইট অনুসারে, ২ জুন অবধি উইলো ফায়ার ৭৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণে আনা গেছে। ১৭ জুন থেকে ২৭ জুন পযর্ন্ত এই ১০ দিনে প্রায় ২৮৭৭ একর (১১৬৪ হেক্টর প্রায়) এলাকা পুড়ে গেছে।
লস প্যাড্রেস ন্যাশনাল ফরেস্টের ভেন্টানা ওয়াইল্ডারনেস অঞ্চলে অবস্থিত, তাসাজারা জেন মাউন্টেন সেন্টারটিকে এর আগেও আগুনে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করা হয়েছিল। গত গ্রীষ্মে, বৌদ্ধদার গ্লোবাল দ্বারা প্রকাশিত হিসাবে, বিহারটি বিপদজনকভাবে ডোলান ফায়ার দাবানল দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার কাছাকাছি এলাকায় অবস্থিত।
এর আগেও তাজাসারা বিহারের ভিক্ষুরা কোন প্রকার পেশাদার সাহয্য ছাড়া আগুন নেভানোর মতো দুঃসহসিক কাজ করেছিলে। পরে ২০০৮ সালে যে সব ভিক্ষু আগুনের সাথে লড়াই করছিল তাদের সেবা দেওয়ার জন্য বেসিন ফায়ার কমপ্লেক্সর ভিক্ষুদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে। মূলত তখন থেকে ভিক্ষুদের একটা অংশ পেশাদার দমকল বাহিনীর সাথে প্রশিক্ষণ নেওয়া সাধারণ রীতিতে পরিনত হয়।
গত সপ্তাহে যখন তাসাজারা বিহার সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল তখন এসএফজেডসি ওয়েবসাইটে বিহার অধ্যক্ষ সোজন মিগলিওলি নিম্নলিখিত বিবৃতি পেশ করেছিলেন:
জেডএমসি ফায়ার ক্রু “ধর্ম বৃষ্টি” (তাসাজারার স্প্রিংকলার সিস্টেম) অব্যহত রাখবে এবং আমরা আগুন মোকাবেলায় সদা প্রস্তুত থাকবো। তাসাজারা পেন্ডেমিক শাটডউনের সময় আগুন নিয়ন্ত্রণের বিশেষ প্রকল্পের সাথে কাজ করে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞ ফায়ার ক্রু বেশ কয়েকমাস ধরে আমাদের ভিক্ষুদের প্রশিক্ষণ দেয়ছেন। আমাদের পানি সরবরাহ ব্যবস্থা যথেষ্ট ভাল এবং আমরা যেকোন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত। বর্তমানে তাসাজারা বিহারে চারটি ইঞ্জিন আছ (ক্যালফায়ারের দুটি এবং ফরেস্ট সার্ভিসের দুটি)। তারা আমাদের ফায়ার টিমকে প্রস্তুতি নিতে সহায়তা করছে।
২০০৮ সালে তাসাজারা জেন মাউন্টেন সেন্টারে বৌদ্ধধর্ম গ্রহণকারী কলিন মর্টেন বুশ ২০১১ সালে Fire Monks শিরোনামে দমকলকর্মী ভিক্ষুদের নিয়ে একটি বই লিখেছিলেন।
“আগুনের দেশে বসবাসের সচেতনতা তাসাজারা বিহারের সংস্কৃতির একটি অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বুশ তার বই প্রকাশের পরে বলেছিলেন, “আমি সেখানে অনুশীলনের সময়কালে রেসিডেন্ট ফায়ার ক্রুতে অংশ নিয়েছিলাম। তিনি বলেন, ভিক্ষুদের আগুন প্রতিরোধ করতে আরো ট্রেইনিং ও সরঞ্জাম বৃদ্ধি করা দরকার কারণ আগুনের দেশে আগুন আবারও আসবে এবং আবার সেই প্রাকৃতিক দৃশ্যে ফিরে আসবে।”
পশ্চিম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রচুর বন্য আগুনের মধ্যে উইলো ফায়ার সবচেয়ে মারাত্মক। ফেডারেল তথ্য অনুসারে, এ বছর দেশে নতুন দাবানলের সংখ্যা ইতিমধ্যে বিগত ১০ বছর সবচেয়ে বেশি। (ন্যাশনাল ইন্টিগ্রেন্সি ফায়ার সেন্টার)।
তাসাজারা জেন মাউন্টেন সেন্টার আমেরিকার প্রাচীনতম জাপানি স্যাটি জেন (Sōtō Zen) বৌদ্ধ মঠ। ২০২০ সালের গোড়ার দিকে COVID-19 মহামারীর প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকে মঠটি জনসাধারণের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
আরো পড়ুন>>
- বৌদ্ধ স্টাডিজে মাস্টার্স প্রোগ্রাম চালু করতে যাচ্ছে বুলগেরিয়ান সোফিয়া বিশ্ববিদ্যালয়।
- অনলাইন অনুষ্ঠানের তারিখ ঘোষণা করেছে কোর অব কালচার।
- সুইডেনে ৬ষ্ট বৌদ্ধ সম্মেলেনে যোগদান করুন।
- বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বৌদ্ধধর্মের উপর লেকচার।
- বৌদ্ধ সাহিত্যে চিকিৎসা ব্যবস্থাঃ ভ্রুণ তত্ত্ব
- বাংলাদেশ যদি ভুটান হতো!-জাহাংগীর হোসাইন
- করণীয় মৈত্রী সূত্র (পালি ও বাংলা অনুবাদ)