দক্ষিণ কোরিয়ায় নিহতদের স্মরণে প্রার্থনা সভা করেছে বৌদ্ধরা: গত ২৯ অক্টোবর দক্ষিণ কোরিয়া র রাজধানী সোল শহরে হ্যালোউইন উৎসব উদযাপনের জন্য সমবেত হওয়া বিপুল জনতার ভিড়ে চাপা পড়ে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অন্তত ১৫৬ জন নিহত এবং আরো ১৫১ জন আহত হয়েছে। মৃতদের অধিকাংশের বয়স কুড়ির কোঠায় বলে জানাচ্ছেন স্থানীয় কর্মকর্তারা। মৃতদের মধ্যে তিনজন চীনা নাগরিকসহ ১৯ জন বিদেশি রয়েছেন।
হ্যালোইন উৎসবে মর্মান্তিক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের স্মরণ করতে সেদেশের বৌদ্ধ ভিক্ষুসংঘ ও বৌদ্ধ অনুসারীরা এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠানে মৃতদের উদ্দেশ্যে পূণ্যরাশি দান, মঙ্গলকামনা ও তাদের পরিবারের উদ্দেশ্যে শোক প্রকাশ করা হয়েছে।
হ্যালোইন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন
অনুষ্ঠানে পরে দক্ষিণ কোরিয়ার অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিনিধিরা যোগ দেন। কোরিয়ার প্রধান প্রধান ধর্মগুলো হলো- প্রোটেস্ট্যান্টিজম, ক্যাথলিক, সিওন বৌদ্ধধর্ম, ওয়ান বৌদ্ধধর্ম, কনফুসিয়ানিজম, চেওন্ডো-জিও। প্রতিটি ধর্মীয় নেতাদর দ্বারা গঠিত কোরিয়ান ধর্মীয় সংগঠন কনফারেন্স অফ রিলিজিয়নস ফর পিস। তারা সিউল সিটি হলের সামনে পাবলিক প্লাজায় নির্মিত একটি আন্তঃধর্মীয় স্মৃতিসৌধের বেদির সামনে দাঁড়িয়ে প্রার্থনা করে এবং শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
বৌদ্ধ ভিক্ষু শ্রদ্ধেয় জিনউও স্মৃতিসৌদের রাখা একটি গেস্টবুকে লিখেছেন, “এরকম বিপর্যয় আর কখনও যেন না হয়। আমরা নিহতদের স্বর্গসুখ কামনা করছি, যারা আহত হয়েছে তাদের আরোগ্য জীবন প্রার্থনা করছি।”
পরে গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, “আমি খুবই দুঃখিত যে এমন একটি অকল্পনীয় বিপর্যয় ঘটেছে। আমি মনে করি এই বিপর্যয় তাদের পরিবার এবং সমগ্র বিশ্বের মানুষের হৃদয়ে আগাত দিয়েছে। এ ধরনের দুর্ভাগ্যজনক দুর্ঘটনা যাতে আর না ঘটে সেজন্য গোটা দেশের প্রচেষ্টা করা উচিত।”
গত ২৯ অক্টোবর সন্ধ্যায় হ্যালোইন উৎসব পালন করতে গিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে অন্তত ১৫৬ জন নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই মহিলা এবং ২০ বছর বয়সী। এই ঘটনায় আরো অন্তত ১৫১ জনেরও বেশি আহত হয়। হ্যালোইন উদযাপনের সময় একটি সরু গলিতে ভক্তদের ঢল নেমে পড়লে এই দূর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আহত ১৫১ জনের মধ্যে ২৯ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল শনিবার পর্যন্ত জাতীয় শোক ঘোষণা করেছেন এবং নিহতদের শেষকৃত্য ও চিকিৎসার খরচ বহন করার জন্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন।
কোরিয়ার ওয়ান বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রধান না সাং-হো বলেন, “এটি আমার হৃদয়কে মর্মাহত করেছে যে তরুণরা এই ঘটনার শিকার হয়েছে। আমি তাদের আত্মার শান্তির জন্য প্রার্থনা করি এবং আশা করি তারা আবার আমাদের মধ্যে পূনঃজন্ম নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে ফিরে আসবে।”
শোক ও প্রার্থনা অনুষ্ঠানে দক্ষিণ কোরিয়ার অনেক সাধারণ জনগনও অংশ নিয়েছিল। নারী-পুরুষ সহ সকল ধর্মের ধর্মীয় নেতারা এই অনুষ্ঠানে জড়ো হতে দেখা গেছে। শোকার্তরা ঐতিহ্যবাহী সাদা চন্দ্রমল্লিকা ফুল দিয়ে মৃতদের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা জানায়।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের জাতীয় আদমশুমারি থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, দক্ষিণ কোরিয়ার জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ ৫৬.১ শতাংশ কোনো ধর্মীয় অনুষঙ্গ অনুসরণ করে না। সে হিসেবে দেশটিতে খ্রিস্টানরা জনসংখ্যার বৃহত্তম ধর্মীয় অংশ ২৭.৬ শতাংশ, যেখানে বৌদ্ধরা ১৫.৫ শতাংশ।