বৌদ্ধ ধর্মে বন্দনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দৈনিক সকাল ও বিকাল ২ বার বন্দনা করার বিধান আছে। বন্দনা বা প্রণাম স্থান ও কাল ভেদে ভিন্নতা দেখা যায়। আজ আমরা বন্দনা কতভাবে করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা করবো। এই ক্ষেত্রে আমরা সদ্ধর্ম দীপিকা নামক বইটিকে সূত্র হিসেবে ব্যবহার করছি।
বন্দনা পাঁচ প্রকারঃ—
১। দুই পায়ের গোড়ালির উপর গুহ্যদেশ রেখে সোজাভাবে বসে মাথা নীচু করে দুই হাত কপালে লাগিয়ে নমস্কার করার নাম উৎকুটিক’ নমস্কার।
২। দুই হাত জোড় করে কপালে লাগিয়ে, মাথার সমান উচ্চে তুলে বা বুকের কাছে রেখে দাঁড়িয়ে নমস্কার করার নাম ‘অঞ্জলি’ নমস্কার।
৩। দণ্ডের মত লম্বিত হয়ে ভূমিতে উপুড় হয়ে শুয়ে নমস্কার করার নাম ‘দণ্ডবৎ’ নমস্কার।
৪। দুই হস্ত, দুই জানু ও মস্তক- এই পাঁচ অঙ্গ ভূমিতে স্থাপন করে নমস্কার করার নাম ‘পঞ্চাঙ্গ নমস্কার।
৫। গুরুজন ও সাধুর প্রতি শিষ্টতা দেখাতে অষ্টাঙ্গ প্রণিপাত করাই উচিত। দুই পায়ের অগ্রভাগ, দুই জানু, দুই হাত, নাকের অগ্রভাগ ও কপাল, —এই অষ্টাঙ্গ ভূমিতে স্থাপন করে নমস্কার করাকে ‘অষ্টাঙ্গ প্রণিপাত বলে।
সিংহলী বৌদ্ধদের মধ্যে উৎকুটিক নমস্কার ও অঞ্জলি প্রণাম অধিক প্রচলিত। অভিবাদন কম লোকেই করে থাকে। তিব্বত, সিকিম ও ভূটান প্রভৃতি বৌদ্ধদেশে দণ্ডবং অভিবাদন বর্তমান কালেও প্রচলিত আছে। সে দেশের ভক্ত উপাসক ও যিনি সাধু সৎপুরুষ ও বয়োবৃদ্ধদিগকে নিত্য অভিবাদন করেন, তার আয়ু, বর্ণ, সুখ ও বল এই চার সম্পদ বৰ্ধিত হয়। উপাসিকাগণ একবারে ১০০ বার দণ্ডবৎ প্রণাম করে পুনঃ দাঁড়িয়ে এইরূপ একশত বার লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ে।
বৰ্মা, শ্যাম ও চট্টগ্রামের বৌদ্ধদের মধ্যে অভিবাদন প্রচলিত। চট্ট গ্রামের গৃহস্থগণও পরস্পরকে অঞ্জলি নমস্কার করে থাকে। অতি বয়ঃস্ক এবং পূজনীয় হলে অভিবাদন করে।