প্রখ্যাত আধ্যাত্মিক নেতা এবং সামাজ কর্মী বৌদ্ধ সন্ন্যাসী শ্রদ্ধেয় ভিক্ষু সংঘসেনা শান্তি প্রতিষ্ঠা করার জন্য আজীবন প্রচেষ্টার স্বীকৃতি স্বরূপ সপ্তম “ড. এপিজে আবদুল কালাম বিশ্ব শান্তি পুরস্কার ২০২১”-এ ভূষিত হয়েছেন।
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক শান্তি দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার (২১ সেপ্টম্বর) লাদাখে ১১তম আন্তর্জাতিক শান্তি সম্মেলনের সময় এই সম্মান প্রদান করা হয়।
শ্রদ্ধেয় ভিক্ষু সংঘসেনা উত্তর ভারতের লাদাখে অবস্থিত অলাভজনক মহাবোধী ইন্টারন্যাশনাল মেডিটেশন সেন্টারের (এমআইএমসি) আধ্যাত্মিক পরিচালক, মহাকারুণা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা, সেভ দ্য হিমালয় ফাউন্ডেশন এবং ইন্টারন্যাশনাল নেটওয়ার্ক অব এনগেজড বুড্ডিস্ট (আইএনইবি ) আধ্যাত্মিক উপদেষ্টা।

মিডিয়ার সাথে শেয়ার করা একটি বিবৃতিতে, পুরস্কার প্রদানকারী সংস্থার চেয়ারম্যান ড. অ্যান্টনি রাজু উল্লেখ করেছেন, “আপনার ব্যপারে বিভিন্ন প্রমাণপত্র গুলো নিরেপেক্ষভাবে পর্যালোচনা করার পর, আমাদের বিবেচ্য মতামত হল যে, আপনি অক্লান্ত এবং নিঃস্বার্থভাবে কাজ করেছেন। বহুমুখী দাতব্য মানবিক সেবা এবং প্রাচীন বৌদ্ধ ঐতিহ্যের মাধ্যমে প্রেম-দয়া ও করুণার উপর বুদ্ধের শিক্ষা, শান্তিপূর্ণতা, নম্রতা এবং নির্দোষতাকে স্বাভাবিক জীবনধারা হিসেবে বিশ্বাস করেছেন এবং অন্যদের বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে উল্লেখযোগ্য সাফল্যের প্রতি অনুপ্রাণিত করে।
“অতএব, মানবাধিকার, মানবতার সেবা প্রচার, শান্তি, সম্প্রীতি, সুরক্ষায় আপনার অসামান্য অবদানের জন্য ন্যাশনাল গভর্নিং কাউন্সিল, পৃষ্ঠপোষক বোর্ড এবং রাষ্ট্রদূত বোর্ড আপনাকে ভারতের সর্বাধিক আকাঙ্ক্ষিত প্রাতিষ্ঠানিক এবং মর্যাদাপূর্ণ “সপ্তম ড. এপিজে আবদুল কালাম বিশ্ব শান্তি পুরস্কার ২০২১’ দিয়ে সম্মানিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
ড. আভুল পকির জয়নুলাবেদীন আব্দুল কালাম (১৯৩১-২০১৫) একজন ভারতীয় মহাকাশ বিজ্ঞানী এবং ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের একাদশ রাষ্ট্রপতি (২০০২ – ২০০৭)। এপিজে আব্দুল কালামের স্মরণেই তার নামে নামকরণ করা হয় পুরস্কারটির। পুরস্কারটি অল-ইন্ডিয়া কাউন্সিল অব হিউম্যান রাইটস, লিবার্টিজ অ্যান্ড সোশ্যাল জাস্টিস (AICHLS) প্রদান করে থাকে।
ড. এপিজে আবদুল কালাম বিশ্ব শান্তি পুরস্কারের পূর্ববর্তী প্রাপকরা হলেন: হোলিনেস আচার্য ড. শিব মুনি জি মহারাজ (২০২০); ড. কৈলাশ সত্যার্থী, নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী (২০১৯); দাদি জানকিজি, ব্রহ্মকুমারীদের প্রধান (২০১৮); অসওয়াল্ড কার্ডিনাল গ্রাসিয়াস (২০১৭); মহামান্য বাবা হরদেব সিং জি মহারাজ (২০১৬, মরণোত্তর); এবং পবিত্র দালাই লামা (২০১৫)।
২১ সেপ্টেম্বর, লাদাখের যৌথ রাজধানী এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের বৃহত্তম শহর লেহে সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট অব বৌদ্ধ স্টাডিজ-এ ১১তম আন্তর্জাতিক শান্তি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনটি যৌথভাবে AICHLS এবং MIMC দ্বারা আয়োজন করা হয়েছিল। সহযোগীদের মধ্যে, লাদাখ বৌদ্ধ সমিতি, অল লাদাখ গুম্ফা এসোসিয়েশন, আঞ্জুমানে ইমামিয়া, আঞ্জুমানের মঈন -উল-ইসলাম, খ্রিস্টান কমিউনিটি, হিন্দু মহাসভা এবং গুরুদ্বার প্রাবান্ধাক কমিটি উল্লেখ যোগ্য।
সম্মেলনে বিশিষ্টজন এবং অতিথি বক্তারা বিশ্বব্যাপী শান্তি ও সম্প্রীতির রক্ষায় কাজ করার জরুরি প্রয়োজনীয়তা এবং সংকীর্ণ ও অনমনীয় মতাদর্শকে পরাস্ত করার গুরুত্বের উপর জোর দেন যা সাম্প্রদায়িক কলহ সৃষ্টি করে। বক্তারা সবাই মিলে আন্তঃসম্পর্কিত পরিবার হিসেবে বিশ্বের জন্য একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছে যেখানে সকল ধর্ম ও সম্প্রদায় সমানভাবে সম্মানিত হবে।
ভিক্ষু সংঘসেনা ১৯৫৮ সালে লাদাখে একটি ধর্মীক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ভারতীয় সেনাবাহিনীতে একটি সংক্ষিপ্ত কর্মক্ষেত্রের পর, তিনি ১৯৭৭ সালে লাদাখের পাহাড় ত্যাগ করেন এক আধ্যাত্মিক আহ্বান অনুসরণ করে প্রয়াত প্রখ্যাত ভারতীয় বৌদ্ধ মাস্টার পূজনীয় আচার্য বুদ্ধরক্ষিত ভান্তের অধীনে থেরবাদা ভিক্ষুত্ব গ্রহণ করেন।

পূজনীয় ভিক্ষু সংঘসেনা ১৯৮৬ সালে লেহে মহাবোধী ইন্টারন্যাশনাল মেডিটেশন সেন্টার (এমআইএমসি) প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি সামাজিকভাবে নিযুক্ত বৌদ্ধধর্মের অন্যতম ধর্মীয় গুরু হিসেবে উদাহরণ হয়ে উঠেছেন।
তিনি অসংখ্য প্রকল্প, ইভেন্ট এবং উদ্যোগের সূচনা করেছেন, যার মধ্যে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষার সুযোগ এবং আশ্রয় প্রদান, মহিলাদের ক্ষমতায়ন এবং সাক্ষরতা দান, অন্যান্য সামাজিকভাবে সুবিধাবঞ্চিত গোষ্ঠীর জন্য কর্মসূচি, অসুস্থ ও অভাবীদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা এবং বয়স্ক ও দুস্থদের জন্য একটি কেয়ার হোম।
বর্তমানে এমআইএমসি একটি সম্প্রসারিত ক্যাম্পাসে বিকশিত হয়েছে যা বহু সামাজিক-সাংস্কৃতিক এবং সম্প্রদায়ের কর্মসূচির কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।
আরো পড়ুন>>
- নভেম্বরে প্রথম বৈশ্বিক বৌদ্ধ সম্মেলনের আয়োজন করার পরিকল্পনা করেছে ভারত।
- প্রথমবার হোয়াইট হাউসে বৈশাখি পূর্ণিমা উদযাপন।
- বন্দনা, সূত্র, জাতক, গাথা, পূজা ইত্যাদি ধর্মীয় বিষয়াদি পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
Valo