ইহুদি-বৌদ্ধ সংলাপের পথিকৃৎ এবং হাজার হাজার তিব্বতিদের দৃষ্টিশক্তি দানকারী ডা. মার্ক লিবারম্যান (১৯৪৯-২০২১) গত ২ আগস্ট সান ফ্রান্সিসকোতে তাঁর বাড়িতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। তার ছেলের মতে এই মহান ব্যক্তির প্রোস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
বৌদ্ধধর্মের প্রতি তার আগ্রহ শুরু হয় ১৯৮০ এর দশক থেকে। তৎকালীন তার বান্ধবী ন্যান্সি গারফিল্ডকে বিয়ে করার পর সমদ্র উপকূলবর্তী বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। পরে লিবারম্যান বৌদ্ধধর্ম আরো ভালভাবে বোঝার জন্য বৌদ্ধ ধর্মীয় জীবন যাত্রা অনুশীলন করার জন্য জীবনকে সম্পূর্ণরূপে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করে।
এরপর তিনি অল্প দিনে এলাকার সাধারণ বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের একজন বিশিষ্ট সদস্য হয়ে ওঠেন, তার লিভিং রুমে সাপ্তাহিক সভা হতো। তিনি বিশ্বজুড়ে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের ভ্রমন আয়োজন করতেন। ১৯৮৯ সালে যখন দালাই লামার মার্কিন সফরের পরিকল্পনা করা হয়েছিল, তখন লিবারম্যান তাকে সহযোগীতা করেছিলেন এবং দালাই লামার সাথে ইহুদি ধর্মের বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার সুযোগ করেছিলেন।

সেই বছর তিনি দালাই লামা এবং অসংখ্য রাব্বি (ইহুদি ধর্মীয় শিক্ষক) এবং ইহুদি পণ্ডিতদের সাথে নিউ জার্সির একটি মন্দিরে এক দিনের মিটিং আয়োজন করেছিলেন।
শুধুমাত্র একটি দিন স্থায়ী হওয়া সত্ত্বেও, সভাটি একটি দুর্দান্ত সাফল্য হিসাবে প্রশংসিত হয়েছিল। পরের বছর উত্তর ভারতের ধর্মশালায়, দালাই লামার সরকারি বাসভবনে এক বৈঠকের জন্য একসঙ্গে লিবারম্যান সহ আটজন রাব্বি এবং পণ্ডিত ভ্রমণ করেছিলেন। সেই বৈঠকটি চার দিন স্থায়ী হয়েছিল, যার ফলে অংশগ্রহণকারীরা দুঃখের উৎপত্তি, কারণ, নিভারনের উপায় থেকে শুরু করে দৈনন্দিন জীবনে রহস্যবাদের অর্থ এবং ভূমিকা পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ের গভীর আলোচনা করতে পেরেছিলেন। এই বৈঠকে সকল অংশগ্রহণকারী খুব বেশি পুলকিত হয়েছিল।
সেই দলের সাথে ছিলেন রজার কামেনেটজ, যিনি একজন কবি এবং লিবারম্যানের দীর্ঘদিনের বন্ধু। কামেনেটজ

সেখানে এতটাই অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন যে বৈঠককে কেন্দ্র করে তিনি The Jew in the Lotus: A Poet’s Rediscovery of Jewish Identity in Buddhist India (HarperOne 1994) নামে একটি বই পর্যন্ত লিখেছিলন।
বইটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে, অনেক ইহুদি এবং অন্যান্য ধর্মের বিশ্বাসীদের বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট করে বইটি।
পেশায় একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ, লিবারম্যান ইহুদি বিশ্বাসের সাথে বৌদ্ধ তত্ত্ব এবং অনুশীলনের দিকগুলির মিশ্রণকে করে নিজের প্রবর্তিত “জুবু” এর প্রাথমিক প্রবক্তা ছিলেন। ডা. লিবারম্যান ২০০৬ সালে লস এঞ্জেলেস টাইমসকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “আমি ইহুদি এবং বৌদ্ধধর্মের সংমিশ্রন করে সুন্দর এক মতের প্ররবর্তন করেছি। এটি অন্য ধর্মকে আঘাত করে না, এটা যা তাই আমি।”
তিব্বতীয় মালভূমির উচ্চতা অতিবেগুনি রশ্মি, দীর্ঘ শীতকালীন তুষারের পাতের কারনে তিব্বতিদের একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জনগনের চোখে ছানি পড়েছিল।
তিব্বতের সম্প্রদায়ের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনতে ১৯৯৫ সালে লিইবারম্যান তিব্বতে ফিরে আসার লক্ষ্যে তিব্বত ভিশন প্রকল্প প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর ২০ বছরের ব্যবধানে, তিনি এবং তার দল প্রায় ৫,০০০ তিব্বতীকে তাদের দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেতে সাহায্য করেছিল।
এই মহান ব্যক্তির মৃত্যুতে তিব্বতী বৌদ্ধদের মাঝে এক শোকের ছায়া নেমে এসেছে।