জাতীয় পাঠ্যক্রমে বৌদ্ধ দর্শন ও বুদ্ধের শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান করেছেন নেপালের রাষ্ট্রপতি

নেপালের রাষ্ট্রপতি বিদ্যা দেবী ভান্ডারী নেপালের পাঠ্য পুস্তকে বুদ্ধের দেশিত বৌদ্ধ দর্শন ও বুদ্ধের নৈতিক শিক্ষাগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য নির্দেশা দিয়েছেন।

বিদ্যা দেবী ভান্ডারী গত ২ ডিসেম্বর, ২০২১ লুম্বিনি বৌদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের (LBU) ১৭তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী এবং LBU-তে স্থাপিত কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ভবনের উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতির বক্তব্যে তিনি এই নির্দেশনা দেন।

রাষ্ট্রপতি ভান্ডারির মতে, বৌদ্ধ দর্শন সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে এবং বিশ্বের অনেক মর্যাদাপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় তাদের একাডেমিক পাঠ্যক্রমে বৌদ্ধ দর্শন এবং বুদ্ধের শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করেছে। তিনি আরও বলেন, বৌদ্ধ শিক্ষার মান বজায় রেখে জাতীয় শিক্ষা, পরিবেশ, সংস্কৃতি, সাহিত্য, দর্শন সহ প্রতিটি ক্ষেত্রে বৌদ্ধ দর্শন, বৌদ্ধ সাহিত্য এবং বুদ্ধের শিক্ষাকে সম্পৃক্ত করে একাডেমিক পরিবেশ উন্নত করা রাষ্ট্রের নীতি।

রাষ্ট্রপতি ভান্ডারি যোগ করেন, “এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে মহান বৌদ্ধ সভ্যতার উত্তরাধিকার হস্তান্তর করতে সহায়তা করবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন এবং একাডেমিক স্বাধীনতা একাডেমিক শিক্ষা বিকাশের পূর্বশর্ত। বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশুদ্ধভাবে একাডেমিক পরিবেশ বজায় রেখে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির জন্য (বিশ্ববিদ্যালয়) পাঠ্যক্রম হতে হবে গবেষণামুখী ও বুদ্ধের শিক্ষা সমৃদ্ধ।”

লুম্বিনি বৌদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের (LBU)
লুম্বিনি বৌদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের (LBU)

রাষ্ট্রপতি ভান্ডারি স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক ছাত্র ও গবেষকদের আকৃষ্ট করতে LBU-তে বিদ্যমান প্রোগ্রাম গুলোর গুরুত্বের উপর জোর দেন। তিনি আরও বলেলেন, লুম্বিনীর বাস্তব এবং লুকায়িত ইতিহাস গুলো আরো স্পষ্ট করা এখন সময়ের দাবী, যা বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় রয়েছে। লুম্বিনির ইতিহাস বিশ্বের জন্য অপরিহার্য এবং অবশ্যই সংরক্ষণ করা উচিত।

বক্তব্যের এক পর্যায়ে রাষ্ট্রপতি ভান্ডারি বলেন, এখনো লুম্বিনি এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক এবং সাংস্কৃতিক অসংখ্য মূল্যবান নিদর্শন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। তিনি রাজ্য কর্তৃপক্ষকে চলমান খনন কাজের দিকে আরও মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি সারা দেশে, বিশেষ করে কপিলবস্তু, রূপানদেহী এবং নবলপারাসীতে বুদ্ধ ও বৌদ্ধ শিক্ষার সাথে যুক্ত প্রত্নতাত্ত্বিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের খনন ও প্রচারের গুরুত্বের উপর জোর দেন।

শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী দেবেন্দ্র পাউডেলও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেন। তিনি LBU-এর কার্যক্রম আরো সম্প্রসারণের প্রতিশ্রুতি দেন। ইউনিভার্সিটি রিসার্চ কমিশনের চেয়ারম্যান ভীম সুবেদী, LBU-এর প্রশংসা করে বলেছেন, “আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় বৌদ্ধধর্ম, সংস্কৃতি এবং শিল্পের প্রচারে অত্যান্ত সক্রিয়।“

লুম্বিনি বৌদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের (LBU)
লুম্বিনি বৌদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের (LBU)

LBU ১৭ জুন ২০০৪ সালে বুদ্ধের জন্মস্থান নেপালের লুম্বিনিতে প্রতিষ্ঠিত হয়। লুম্বিনিতে এটি তৃতীয় বৌদ্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ১৯৯৮ সালে লুম্বিনিতে অনুষ্ঠিত প্রথম বিশ্ব বৌদ্ধ সম্মেলনে প্রথম  বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করা হয়। পরবর্তীতে ২০০৬ সালের ১০ নভেম্বর লুম্বিনি বৌদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয় আইন হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে বলা হয়েছে এটি একটি স্বায়ত্বশাসিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়টি নেপাল সরকারের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা পাবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে, এলবিইউর ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. হৃদয় রত্ন বজরাচার্য বলেন, ”আমরা বৌদ্ধ সংস্কৃতি ও সমৃদ্ধির মধ্যে যোগসূত্র অনুসন্ধান করার জন্য এই সম্মেলনের আয়োজন করেছি। আমরা সম্মেলনে গৃহীত আলোচনা ও সিদ্ধান্ত নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে শেয়ার করবো।”

 

আরো পড়ুন>>

শেয়ার করে সবাইকে পড়ার সুযোগ দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!