বুদ্ধগয়ার মহাবোধি বিহারে চলছে আমরণ অনশন ধর্মঘট

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || বৌদ্ধবার্তা

মধ্য ভারতের বিহার রাজ্যে অবস্থিত মহাবোধি বিহারকে বৌদ্ধ ধর্মের অন্যতম পবিত্র স্থান হিসেবে গণ্য করা হয়। এই বিহারের পূর্ণ প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণের দাবিতে একদল বৌদ্ধ ভিক্ষু, নেতা ও অনুসারী অনির্দিষ্টকালের জন্য অনশন ধর্মঘট পালন করছেন। তারা ১৯৪৯ সালের বুদ্ধগয়া বিহার আইনের অধীনে প্রতিষ্ঠিত বর্তমান পরিচালনা কাঠামোয় হিন্দু সংখ্যাগরিষ্টতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও প্রশাসনিক বিতর্ক

মহাবোধি মন্দির সেই স্থান যেখানে গৌতম বুদ্ধ বোধিলাভ করেছিলেন বলে বিশ্বাস করা হয়। ইতিহাস অনুযায়ী, খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতকে সম্রাট অশোক এই বিহারটি নির্মাণ করেন। তবে দ্বাদশ শতকে ঘুরিদের নেতা বখতিয়ার খলজির আক্রমণে এটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। পরে শ্রীলঙ্কার বৌদ্ধ সংস্কারক অনাগারিকা ধর্মপালের প্রচেষ্টায় বিহারটি পুনরুজ্জীবিত হয়। ২০০২ সালে ইউনেস্কো এই স্থানটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী হিসেবে ঘোষণা করে এর ঐতিহাসিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক গুরুত্বের স্বীকৃতি দেয়।

প্রতিবাদকারীদের প্রধান দাবি

১৯৪৯ সালের বুদ্ধগয়া বিহার আইন অনুসারে, বুদ্ধগয়া বিহার পরিচালনা কমিটি (বিটিএমসি)-তে নয়জন সদস্য থাকেন, যেখানে পাঁচজন হিন্দু প্রতিনিধি এবং মাত্র চারজন বৌদ্ধ প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত থাকার বিধান রয়েছে। প্রতিবাদকারীরা এই কাঠামো পরিবর্তন করে মহাবোধি বিহারের ওপর সম্পূর্ণ বৌদ্ধ প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছেন। এছাড়া, তারা রাষ্ট্রের বৌদ্ধ ধর্মীয় বিষয়ে হিন্দুদের হস্তক্ষেপ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন।

প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনা ও প্রতিবাদকারীদের অভিযোগ

প্রতিবাদকারীদের অভিযোগ, বর্তমান প্রশাসনের অধীনে বৌদ্ধ ইতিহাস বিকৃত করা হচ্ছে এবং বিহারের পবিত্রতা নষ্ট করার চেষ্টা চলছে। বিহার রাজ্য সরকার আন্দোলনকারীদের অভিযোগ উপেক্ষা করছে এবং তাদের আন্দোলন ভঙ্গ করতে বিভিন্ন বাধা সৃষ্টি করছে বলে দাবি করা হয়েছে। এছাড়া, বিহার কর্তৃপক্ষ দানের অর্থের অপব্যবহার করছে এবং তীর্থযাত্রীদের প্রতি অবহেলা করছে বলেও প্রতিবাদকারীরা অভিযোগ তুলেছেন।

আন্তর্জাতিক সংহতি ও প্রতিক্রিয়া

চলমান অনশন ধর্মঘটকে বিশ্বব্যাপী ৫০০-রও বেশি সংস্থা সমর্থন জানিয়েছে, যার মধ্যে অল ইন্ডিয়া বৌদ্ধ ফোরাম ও লাদাখ বৌদ্ধ অ্যাসোসিয়েশন উল্লেখযোগ্য। ত্রিপুরা, লাদাখ, উত্তরপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্রসহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সমর্থকরা এই আন্দোলনে যোগ দিচ্ছেন।

১২ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এই অনশন ধর্মঘট আন্তর্জাতিক সমর্থনও অর্জন করেছে। “সংহতিতে: মহাবোধি মন্দিরের উপর বৌদ্ধ নিয়ন্ত্রণের দাবি” শিরোনামে একটি পিটিশনে ইতোমধ্যে ৫,০০০-রও বেশি স্বাক্ষর সংগ্রহ করা হয়েছে। শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, লাওস, কম্বোডিয়া, কোরিয়া, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং মঙ্গোলিয়ার বৌদ্ধ সম্প্রদায় এ আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছে।

তবে ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক চাপ সত্ত্বেও, ভারত সরকার এখনো এই দাবির বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

শেয়ার করে সবাইকে পড়ার সুযোগ দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!