কম্বোডিয়ায় ইসলাম-বৌদ্ধ আন্তধর্মীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || বৌদ্ধবার্তা

গত ২৭ ফেব্রুয়ারি কম্বোডিয়া তার প্রথম ইসলাম ও বৌদ্ধ ধর্মের মধ্যে আন্তধর্মীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মুসলিম ওয়ার্ল্ড লীগ কর্তৃক আয়োজিত এই সম্মেলনে ৩০টিরও বেশি দেশের ১৮০ জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। যা দেশটির ধর্মীয় ও জাতিগত সম্প্রীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

সম্মেলনের উদ্বোধন করেন কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত। তিনি তার ভাষণে “কম্বোডিয়ায় সংহতি ও ধর্মীয় সম্প্রীতির” গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং আন্তধর্মীয় সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের প্রতি সরকারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। শুরুতে প্রধানমন্ত্রী মানেত বৌদ্ধ ধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ব্যক্ত করেন এবং কম্বোডিয়ার ধর্মীয় সম্প্রীতির অগ্রগতির প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, “প্রত্যেক ধর্মই তার অনুসারীদের নৈতিকতা, সহমর্মিতা ও সদয়তার পথে পরিচালিত করে।” এছাড়া, তিনি ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘হালাল ইনস্টিটিউশনের’ ভূমিকা উল্লেখ করেন, যা কম্বোডিয়ায় মুসলিম সম্প্রদায়ের খাদ্যতালিকাগত মান বজায় রাখতে কাজ করে।

কম্বোডিয়ায় বৌদ্ধ ধর্ম প্রধানতম ধর্ম, যেখানে দেশের ১ কোটি ৭৫ লক্ষ জনসংখ্যার প্রায় ৯৩ শতাংশ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। ইসলাম দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম, এখানে প্রায় পাঁচ শতাংশের মতো জনসংখ্যা ইসলাম ধর্ম পালন করে। এছাড়া, ক্যাথলিক খ্রিস্টান সম্প্রদায় দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ০.৫ শতাংশ।

কম্বোডিয়ার ইসলামী বিষয়ক সিনিয়র মন্ত্রী ও মুসলিম ওয়ার্ল্ড লীগের সুপ্রিম কাউন্সিলের সদস্য ওথসমান হাসান এই সম্মেলনকে কম্বোডিয়ার ধর্মীয় উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, “এই সম্মেলনের মাধ্যমে কম্বোডিয়া বিশ্বব্যাপী এমন একটি মডেল রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পাবে, যা সম্পূর্ণ ধর্মীয় ও জাতিগত সম্প্রীতি নিশ্চিত করে এবং কোনো ধরনের বৈষম্য চর্চা করে না।”

মুসলিম ওয়ার্ল্ড লীগ, যা সৌদি সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত একটি আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা, “ইসলামের প্রকৃত বার্তা প্রচার এবং মধ্যপন্থী মূল্যবোধ উন্নীত করার” লক্ষ্যে কাজ করে।

এই সম্মেলন এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে, যখন কম্বোডিয়া মুসলিম পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য থেকে আগত পর্যটকদের টার্গেট করে পর্যটন খাতকে বৈচিত্র্যময় করার চেষ্টা করছে। কম্বোডিয়ার পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বিদেশি পর্যটকদের সংখ্যা ২৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। চীন এখনও বিদেশি পর্যটকদের তৃতীয় বৃহত্তম উৎস দেশ, যেখানে ২০২৪ সালে ৮,৪৮,৯৫২ চীনা নাগরিক কম্বোডিয়া সফর করেছেন, যা আগের বছরের তুলনায় ৫৫ শতাংশ বৃদ্ধি নির্দেশ করে।

মধ্যপ্রাচ্য থেকে আগত পর্যটকদের সংখ্যা ২০২৪ সালে ৪,৩০,০০০ জনে পৌঁছেছে, যা মোট ৬.৭ মিলিয়ন বিদেশি পর্যটকের ৭.৩ শতাংশ। এটি ২০২৩ সালের তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ বৃদ্ধি নির্দেশ করে। এছাড়া, কম্বোডিয়া ২০২৪ সালে ১,২৩,০০০ ইন্দোনেশীয় পর্যটককে স্বাগত জানিয়েছে, যা বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ।

২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে, পর্যটনমন্ত্রী হুট হাক মুসলিম পর্যটন একটি পাঁচ-দফা কৌশল ঘোষণা করেন। এতে মুসলিম-বান্ধব সেবার মান উন্নয়ন, মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে বিমান সংযোগ সম্প্রসারণ, কম্বোডিয়াকে মুসলিম-বান্ধব গন্তব্য হিসেবে প্রচার, সরকার-শিল্প খাতের সহযোগিতা জোরদার করা, এবং মুসলিম পর্যটকদের চাহিদা বিশেষত হালাল খাদ্য বিকল্প নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

কম্বোডিয়ার কর্মকর্তারা সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরবের মতো দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক সুদৃঢ় করার পাশাপাশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।

এই ইসলাম-বৌদ্ধ সম্মেলন কম্বোডিয়ার ধর্মীয় সহনশীলতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ভাবমূর্তি তুলে ধরার বৃহত্তর প্রচেষ্টার অংশ, পাশাপাশি আন্তধর্মীয় কূটনীতি ব্যবহার করে পর্যটনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সুবিধা অর্জনের লক্ষ্যেও অবদান রাখবে।

শেয়ার করে সবাইকে পড়ার সুযোগ দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!