দীপংকর ভান্তের মৃত্যু: হত্যা মামলা নিয়ে ৭ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ

দীপংকর ভান্তের মৃত্যু: হত্যা মামলা নিয়ে ৭ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ। বান্দরবানের আর্যগুহা ধুতাঙ্গ বিমুক্তি বিহারে ড. এফ দীপংকর মহাথের ধুতাঙ্গ ভান্তের মৃত্যুর ঘটনায় তাঁর ভাইয়ের দায়ের করা হত্যা মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করতে বান্দরবানের রোয়াংছড়ি থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) বান্দরবানের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজিএম) আদালত-১ এর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এ এস এম এমরান এই আদেশ দেন। 

বাদী পক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ রাশেল বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, বৌদ্ধদের ভিক্ষুকূল গৌরব, ধুতাঙ্গসাধক ড. এফ দীপংকর মহাথের ধুতাঙ্গ ভান্তেকে রশিতে ঝুঁলিয়ে হত্যার অভিযোগ তুলে আদালতে একটি মামলার আবেদন করা হয়। আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে বান্দরবানের রোয়াংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) এজাহার হিসেবে লিপিবদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন পাশাপাশি এক সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। মামলাটি দায়ের করেন হত্যার শিকার ড. এফ দীপংকর মহাথের ধুতাঙ্গ ভান্তের ভাই কাজল বড়ুয়া (মহাকশ্যপ ভিক্ষু)। মামলায় ১৮৬০ দ-বিধির ৩০২/৩৪ ধারায় তিনজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং অজ্ঞাত আসামী দেখানো হয়েছে। মামলার তিন আসামীরা হলেন- #হ্যাপি_চাকমা_ও_তাঁর_স্বামী_এমিল_তঞ্চগ্যা_এবং_জনারণ্য_ভিক্ষু। মামলার প্রধান আসামী হ্যাপি চাকমা ছিলেন-দীপংকর মহাথের ভান্তের প্রধান সেবিকা।

মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ১৩ জুলাই দুপুরে বান্দরবানের কালাঘাটা গোদারপাড় এলাকার আর্যগুহা ধুতাঙ্গ বিমুক্তি বিহারে একটি কুঠিরের লোহার সিলিংয়ের সঙ্গে রশিতে ঝুঁলন্ত অবস্থায় ড. এফ দীপংকর মহাথের ধুতাঙ্গ ভান্তের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মরদেহ উদ্ধারের সময় আসামীরা অসংলগ্ন আচরণ করেন। এমনকি মরদেহ উদ্ধারের খবর পেয়ে স্থানীয়রা কুঠিয়ে ঢুকতে চাইলেও ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পরবর্তীতে ঘণ্টাখানেক পর স্থানীয় পুলিশ আসলে গণমাধ্যমকর্মীদের ঘটনাস্থলে ঢুকতে দেওয়া হয়।

মরদেহ উদ্ধারের পরদিন (১৪ জুলাই) রোয়াংছড়ি থানা পুলিশ বান্দরবান জেলা হাসপাতালে ময়নাতদন্ত করেন। পরে মরদেহটি ড. এফ দীপংকর মহাথের জন্মস্থান চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার ফরাঙ্গীরখীল গ্রামে নিয়ে আসা হয়। এখনো মরদেহটি ফ্রিজারের সংরক্ষিত রয়েছে। তিনি ফরাঙ্গীরখীল গ্রামের নান্টু বড়ুয়া  ও পুটি রাণী বড়ুয়ার ছেলে ড. এফ দীপংকর মহাথের। মামলায় উল্লেখ করা হয়-পরিকল্পিতভাবে ড. এফ দীপংকর মহাথের ধুতাঙ্গ ভান্তেকে হত্যা করা হয়েছে। ভান্তের বাম পায়ের হাঁটুতে মারাত্মক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। 

উল্লেখ্য, বৌদ্ধদের ভিক্ষুকূল গৌরব ড. এফ দীপংকর মহাথের ধুতাঙ্গ ভান্তে ভারতের কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তেকে প্রাচ্যভাষা বিষয়ে সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী। ২০০২ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাচ্যভাষা বিষয়ে এম এ পরীক্ষার ফলাফলে প্রথম শ্রেণিতে প্রম হওয়ায় ভারত সরকার কর্তৃক তিনি গোল্ড মেডেল অর্জন করেন। পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন বিভাগীয় প্রধান ড. বেলা ভট্টাচার্য এর তত্বাবধানে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন। ১৯৯৭ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ভারতে অবস্থান করে এসব প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করে তিনি বৌদ্ধ ধর্ম প্রচার-প্রসারে মনোনিবেশ করেন। তিনি বাংলাদেশি বৌদ্ধদের একজন উচ্চ শিক্ষিত, মেধাবী, গুণী ও সাধক (ভাবনাকারী) বৌদ্ধ ভিক্ষু। বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে তাঁর নাম, যশ, খ্যাতি রয়েছে।

২০১২ সালে ড. এফ দীপংকর মহাথের ভান্তে সর্বপ্রথম ধ্যান-সাধনার মাধ্যমে সত্যের সন্ধানে রাঙামাটির জেলার বিলাইছড়ি উপজেলার ধুপপানিছড়ার নির্জন গহীন অরণ্যে গমন করেন। ২০১২ সালের মার্চ মাস থেকে তিনি সেখানে পাঁচ বছরেরও বেশি সময় একাকি এক চীবরে (ত্রি-চীবর) ভাবনা/সাধনায় নিমগ্ন ছিলেন। এরমধ্যে বছরের ছয় মাস খোলা আকাশ/বৃক্ষতলে, আর ছয় মাস আচ্ছাদনের মাধ্যমে ধ্যানে মগ্ন থাকতেন। তিনি ২৪ ঘণ্টায় এক বেলা আহার করতেন। আর পাশ্ববর্তী এলাকায় পিন্ডচারণ করে আহার যোগাড় করতেন। অনেক সময় তিনি সপ্তাহে একবারও আহার করে তিনি ধ্যান সাধনায়রত ছিলেন। মূলত ধ্যান সাধনাই ছিল তাঁর মূখ্য বিষয়।

২০১৪ সালে তিনি তাঁর সাধন জীবনে রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার ধূপশীল মহাশ্মশানের গভীর জঙ্গলে মানবদেহের প্রকৃতস্বরূপ জানার জন্য মরদেহ সামনে নিয়ে দিনরাত ভাবনা করেন। সেখানে অনেক দায়ক-দায়িকা ও শিষ্য গড়ে উঠে। পরবর্তীতে ২০১৬ সালে বান্দরবান আর্যগুহা ধুতাঙ্গ বিমুক্তি বিহারের দায়ক দায়িকাদের আহবানে ধর্মপ্রচারের নিমিত্তে ড. এফ দীপংকর মহাথের ধুতাঙ্গ ভান্তে বান্দরবান সদরের কালাঘাটার পাশ্ববর্তী গোদার পাড় এলাকার একটি পাহাড়ি গুহায় ধ্যান সাধনা শুরি করেন। সেই বিহারের একটি কুঠিরেই পরবর্তীতে তিনি ধ্যান সাধনা করতে থাকেন।

আরো পড়ুন>>

শেয়ার করে সবাইকে পড়ার সুযোগ দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!