ড. জিনবোধি ভিক্ষু: চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহারে একুশে পদক প্রাপ্ত বৌদ্ধ ভিক্ষু ড. জিনবোধি ভিক্ষুকে মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সদ্য একুশে পদক প্রাপ্ত ড. জিনবোধি ভিক্ষুর উপর এহেন আক্রমণে বড়ুয়া তথা সমগ্র বৌদ্ধ সম্প্রদায় স্যোসাল মিডিয়ায় প্রতিবাদ জানিয়েছে। এই ঘটনার প্রতিবাদে আজ ৯ মার্চ দুপুর ২টায় মানববন্ধনেরও ডাক দিয়েছে বৌদ্ধরা।
জানা গেছে পূর্ব প্রকাশিত সময় অনুযায়ী গতকাল (৮ মার্চ) ছিল চট্টগ্রাম নন্দনকান বৌদ্ধ বিহারে প্রয়াত সংঘরাজ, উপ সংঘরাজ এবং উক্ত বিহারের বিগত অধ্যক্ষগণের পূণ্যস্মৃতি স্মরণে বুদ্ধপ্রতিবিম্বদান, অষ্টপরিস্কারসহ সংঘদান ও সদ্ধর্মসভার ১ম দিন।
উল্লেখ্য, দুদিনের অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত ছিলেন, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, অতিরিক্ত আইজিপি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত কৃষ্ণপদ রায় বিপিএম (বার), পিপিএম (বার), বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার উপ-সংঘরাজ শাসনস্তম্ভ ভদন্ত ধর্মপ্রিয় মহাস্থবির, উপ- সংঘরাজ ত্রিপিটক বিশারদ সদ্ধর্মবারিধি ভদন্ত প্রিয়দর্শী মহাথের, বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার সভাপতি ভদন্ত বুদ্ধপ্রিয় মহাথেরো, রাঙ্গামাটির রাজবন বিহারের আবাসিক প্রধান সাধকপ্রবর ভদন্ত প্রজ্ঞালঙ্কার মহাস্থবির, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমান্ডেন্ট ইন সার্ভিস অতিরিক্ত ডিআইজি অনিন্দিতা বড়ুয়া।
এদিকে ১ম দিনের অনুষ্ঠান শুরু হতে না হতেই শুরু হয় বড়ুয়া বৌদ্ধ ইতিহাসের এই নেক্যার জনক ঘটনার জন্ম দেয় বলে অভিযোগ করেছে প্রত্যক্ষদর্শীরা।
জানা গেছে একদল বিরোধী বৌদ্ধ নেতা ৮মার্চ নারী দিবেস উপলক্ষ্যে নারীকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে হামলা চালায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীরা জনান, বিহারের দ্বিতীয় তলায় অনুষ্ঠান চলাকালে বাংলাদেশ বৌদ্ধ মহিলা সমিতির সভাপতি রেখা রাণী বড়ুয়া ধর্মীয় দেশনারত অবস্থায় উপস্থিত লোকসমাগমের মাঝে একুশে পদকে ভূষিত ড. জিনবোধি ভিক্ষু মহাথেরোর হাতে থাকা মুঠো ফোন বা মোবাইল ঝাপটা মেরে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।
এসময় ড. জিনবোধি ভিক্ষু নিজের মোবাইল বাঁচানোর চেষ্টা করে। এই ঘটনাকে বিরোধীরা নারীর শ্লীলতাহানী বলে মামলা সাজিয়েছে বলে জানা গেছে।
ছবি ও ভিডিও ফুটেজ সাক্ষ্য দিচ্ছে বিরোধীদের কয়েকজন ড. জিনবোধি ভিক্ষু মহাথেরোর উপর কিছু একটা দিয়ে মাথায় আগাত করছে। প্রত্যক্ষদর্শূরা জানান এ জঘন্যতম হামলার নেতৃত্ব দেন কথিত বৌদ্ধ সমিতির নেতা সুধীপ বড়ুয়া ও শশী ভূষণ বড়ুয়া।
একপর্যায়ে অনুষ্ঠানে নিরাপত্তার কাজে বৌদ্ধ বিহারে উপস্থিত থাকা কোতোয়ালি থানার পুলিশ সদস্যরা রেখা রাণী বড়ুয়া থেকে মোবাইলটি উদ্ধার করে ড. জিনবোধি ভিক্ষুকে ফেরত দিলে উত্তেজনা থেমে যায়।
এনিয়ে চট্টগ্রামের সচেতন মহলে চট্টগ্রামের সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব, শিক্ষায় একুশে পদকে ভূষিত গুণীজন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, ধর্মীয় পন্ডিত অধ্যাপক ড জিনবোধি ভিক্ষুকে জড়িয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য ও মিথ্যা মামলা করায় নিন্দার ঝর উঠেছে।
এমন জঘন্যতম কাজ সভ্য সমাজ কখনো মেনে নিতে পারে না। অবিলম্বে এ হামলায় জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান তারা।
অনুষ্ঠান চলাকালে উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা জানান এটি একটি পরিকল্পিত ও সাজানো ঘটনার প্রতিস্হাপন। অনুষ্ঠানে রেখা রাণী বড়ুয়াকে আমন্ত্রণও জানানো হয়নি, তিনি আসার কথা নয়। তিনি এসেছেন বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতির কর্মকর্তা ও অবৈধ দখলদারদের সাজানো নাটকের দৃশ্যের উপস্থাপন করতে। বিষয়টি তদন্ত করলে স্পষ্ট হওয়া সম্ভব সহজ হবে।
কোতোয়ালি থানার ওসি এসএম ওবায়েদুল হক বলেন, নেতৃত্বে নিয়ে বিবদমান দুপক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। এ নিয়ে শুক্রবার উভয়পক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটেছে। উভয়পক্ষই থানায় জিডি করেছেন। বিষয়টি তদন্তাধীন।