স্বাধীন দেশে সংখ্যালঘু সংখ্যাগুরু || ভদন্ত প্রজ্ঞানন্দ থের, রামু, কক্সবাজার
ক্ষমতার রাজনৈতিক পালাবদল আমাদের দেশে নতুন কোন বিষয় নয়। স্বাধীনতা পরবর্তী সময় বিশেষ করে ৭৫ থেকে অদ্যাবধি দীর্ঘ ৫০বছর সময় ধরে এটাই হয়ে আসছে। এবং বহুদলীয় রাজনৈতিক সরকার ব্যবস্থায় এটা স্বাভাবিক একটা বিষয়। ক্ষমতার পালাবদল হলে অভ্যন্তরীণ অনেক কিছুতেই পালাবদল কিংবা রদবদল ঘটে।এটাও স্বাভাবিক একটা বিষয়।কিন্তু এই পরিবর্তন কিংবা পালাবদলের রেশ ধরে জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু হবার কারণে একে অন্যের জান-মালের উপর ঝাঁপিয়ে পড়া কোনভাবেই কাম্য নয়।
আমি সংখ্যালঘু/সংখ্যাগুরু এই বিভাজনের শুরু থেকেই গুরুতর বিরোধীতা করি। এটা আমার আশেপাশে যারা থাকেন তারা সবাই জানেন। রাষ্ট্রে আমাদের সবার প্রথম এবং প্রধান পরিচয়টা নাগরিকের পরিচয় হওয়া উচিত। এই ভূখন্ডের সকল বৈধ নাগরিকের একটাই পরিচয় আমরা সবাই বাংলাদেশী। এরপরে ধর্মীয় পরিচয়ে কেউ মুসলিম, কেউ হিন্দু, কেউ বৌদ্ধ এবং কেউ খ্রিস্টান। সংখ্যার হিসাবটা তো ধর্মের ভিত্তিতেই করা হয়ে থাকে।
এদেশে ইসলামের অনুসারীদের সংখ্যা সবথেকে বেশি। তাই ধর্মীয় সংখ্যাগুরু হলেন মুসলিম জনগোষ্ঠী। অন্যান্য ধর্মাবলম্বী জনগোষ্ঠীর সংখ্যা তাদের চেয়ে কম। তাই অন্যান্যরা ধর্মীয় সংখ্যালঘু।এটি তো সারাবিশ্বের একটি বাস্তব চিত্র। আবার বিশ্বের সকল ধর্মীয় জনগোষ্ঠী বিশ্বের কোথাও না কোথাও ধর্মীয় সংখ্যালঘু হয়ে থাকে। পৃথিবীর সকল মানুষ যদি এই হীন মানসিকতাকে ধারণ করে, লালন করে এবং প্রতিফলিত করে তাহলে গোটা বিশ্বে শান্তি বলতে কি আর কিছুই থাকবে! মানুষের সাথে মানুষের যে সম্পর্ক থাকার কথা সেটা কি আর থাকবে!
মিডিয়া এবং চারপাশ থেকে সারাক্ষণ সংখ্যালঘু সংখ্যালঘু এই বিশ্রী শব্দটা শুনতে শুনতে নিজের প্রতি নিজেকে মানুষ হিসেবে খুবই লজ্জাবোধ হয়, খুবই ছোট মনে হয়। কেন ভিন্ন ধর্মাবলম্বী তো বলা যায়।নিদেনপক্ষে ধর্মীয় সংখ্যালঘু বলা যায়। আপনি ভিন্ন ধর্মাবলম্বী হিসেবে আমাদের উপর আঘাত আসলে আমাদেরকে প্রতিবাদ অবশ্যই করতে হবে কিন্তু প্রতিবাদ হবে ভিন্ন ধর্মাবলম্বী নাগরিক হিসেবে সংখ্যালঘু হিসেবে নয়।
সংখ্যালঘু হিসেবে গণ্য করে নিজেদেরকে একটি বিশেষ শ্রেণির তথা রাষ্ট্রের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে তুলে ধরার প্রয়োজন আছে কিনা ভাবতে হবে।
ভদন্ত প্রজ্ঞানন্দ থের
সমাজ সংস্কারক ও সংগঠক, রামু কেন্দ্রীয় সীমা বিহার।