ভামলা স্তূপ একটি প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার

ভামলা স্তূপ প্রাচীন বৌদ্ধ স্তূপগুলো মধ্যে অন্যতম। হারো নদীর কূলে পাহাড়ের চূড়ায় পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের খানপুর জেলায় ঐতিহাসিক এই ভামলা স্তূপটি অবস্থিত।

প্রত্নতাত্ত্বিক তত্ত্ব মতে স্তূপটি খ্রিস্টপূর্ব ২য় শতাব্দীর হতে পারে। ১৯৩০ সালে পেশোয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রত্নতাত্ত্বিক এটি আবিষ্কার করেন। এ্ই প্রাচীন বৌদ্ধ স্তুপটি ১৯৮০ সালে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসাবে ঘোষণা করে।

এর আগে স্যার সুফিয়ান মালিক এবং স্যার জন মার্শাল ছিলেন প্রথম প্রত্নতাত্ত্বিক যারা ১৯২৯ সালে ভামলা স্তূপের স্থানটি খনন করলেও আবিষ্কৃত হয় ১৯৩০ সালে। স্তূপটি ১৯৭০ এবং ১৯৮০ এর দশকে পুনরুদ্ধার করা হয় এবং তখন থেকেই এটি পকিস্তানের প্রধান পর্যটক আকর্ষণীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম হয়ে ওঠে।

ভামলা স্তূপের কাঠামো

ভামলা স্তূপ ইট ও পাথরের তৈরি একটি বড় গোলার্ধের কাঠামো। এর ব্যাস ২৩ মিটার এবং উচ্চতা ১০ মিটার। স্তূপের একটি কেন্দ্রীয় কক্ষ রয়েছে যাতে মুদ্রা, মৃৎপাত্র এবং মূর্তি সহ বেশ কিছু নিদর্শনীয় বৌদ্ধ ঐতিহ্যের স্থাপনা রয়েছে।

ভামলা স্তূপটি বেশ কয়েকটি ছোট স্তূপ এবং মঠ দ্বারা বেষ্টিত। সাইটটিতে প্রচুর সংখ্যক শিলা খোদাই এবং শিলালিপি রয়েছে।

ভামলা স্তূপ ইউনেস্কোর একটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান

ভামলা স্তূপটি ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের অন্তর্ভুক্ত একটি ঐতিহ্য। অর্থাৎ এটি মহান ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক গুরুত্ব বহন করে। পাকিস্তানে এই পর্যন্ত যত প্রাচীন স্থাপনা পাওয়া গেছে তাদের তালিকায় অন্যতম এই ভামলা স্তূপ। বিশ্বে যত গুলো বড় বড় স্থাপনা আছে সেগুলোর মধ্যেও ভামলা স্তূপ বিশেষ স্থান দখল করে আছে।

ভামলা স্তূপ একটি প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার

স্তূপটি তথাগত বুদ্ধকে সম্মান জানাতে এবং তাঁর ধ্বংসাবশেষ ধরে রাখার জন্য নির্মিত হয়েছিল। স্তূপটি ইট ও পাথরের তৈরি এবং সুন্দর খোদা করা বুদ্ধের বিভিন্ন চিত্রে সজ্জিত। স্তূপটির বাইরে একটি বড় প্রাঙ্গণ বিভিন্ন চিত্র খোদাই দ্বারা সজ্জিত। প্রাঙ্গণের ছোট ছোট স্তূপগুলো বুদ্ধের শিষ্যদের সম্মানার্থে নির্মিত হয়েছিল। ভামলা স্তূপ বৌদ্ধ ঐতিহ্যের একটি সুন্দর এবং শান্তিপূর্ণ নিদর্শন। এই স্থাপনাটি শুধু বৌদ্ধ নয় একজন অনুভুতিশীল মানুষ মাত্রই দর্শন করার মত।

ভামলা স্তূপ একটি পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত হওয়ার কারনে এর মূল ভবন থেকে চার দিকে মাইলের পর মাইল দেখতে পাবেন। দূরের দৃশ্যগুলি কেবল শ্বাসরুদ্ধকর মনোরম। উপর থেকে হারো নদীটি দেখলে একটি একে বেকে চলা মহা সড়ক বলে মনে হবে। এক কথায় অসাধরণ। এর থেকেই বুঝা যায় কেন বৌদ্ধ বিহার হিসেবে এই স্থানটিকে নির্বাচন করা হয়েছিল। বৌদ্ধ ভিক্ষুদের ভাবনা করার জন্য এর চেয়ে ভাল স্থান হতেই পারে না।

উপসংহার

ভামলা স্তূপ একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থান যা পাকিস্তানে যাওয়ার সময় প্রত্যেক ভ্রমণকারীর তালিকায় থাকা উচিত। স্তূপটি শুধুমাত্র দেখার মতো সুন্দর দৃশ্যই নয়, এটি পাকিস্তানের তথা বৌদ্ধদের গৌরবময় ইতিহাস ও সংস্কৃতির জন্যও অত্যন্ত তাৎপর্য বহন করে।

শেয়ার করে সবাইকে পড়ার সুযোগ দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!