ভারতে রাষ্ট্রীয়ভাবে হতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ সম্মেলন

ভারতে হতে যাচ্ছে দুই দিন ব্যাপী বৌদ্ধ সম্মেলন। চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে এই আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা আছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দুই দিনব্যাপী এই বৌদ্ধ সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন বলে বিশ্বস্ত সূত্রে যানা গেছে। মূলত ২০২০ সালের পরিকল্পিত সম্মেলনটি করোনা ভাইরাসের কারনে স্থগিত করার পর ২০২৩ সালে তা বাস্তবে পরিনত হতে যাচ্ছে।

প্রায় ৩০ টি দেশের বৌদ্ধ প্রতিনিধিরা সম্মেলনে যোগ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। সম্মেলনের স্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে “Responses to Contemporary Challenges from Philosophy to Praxis.” অর্থাৎ ”দর্শন থেকে বাস্তবতায় বর্তমান সমস্যা সমাধান করার পরিকল্পনা উন্নয়নে চ্যালেঞ্জ ও উত্তরনের উপায়।”সম্মেলনের আলোচ্য বিষয়ও হবে এটি।

কনফারেন্সে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ১৭০ জনের বেশি প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সূত্র। ভারতের কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রী জি কিশান রেড্ডি সোমবার জানিয়েছেন, “বিভিন্ন দেশ থেকে বিশিষ্ট বৌদ্ধ ভিক্ষু, পণ্ডিত, রাষ্ট্রদূত এবং কূটনীতিকরা এই শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেবেন। ভারতের কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রক সম্মেলনটির প্রধান আয়োজক হিসেবে কাজ করছে। সহযোগী হিসেবে কাজ করছে আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ কনফেডারেশন (IBC)।

রেড্ডি উল্লেখ করেছেন যে, ”ভারত বুদ্ধের জন্মস্থান হিসেবে, বৌদ্ধদের ইতিহাস এবং ঐতিহ্যকে বৃহত্তর বিশ্বের কাছে প্রদর্শন করা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। আমাদের দায়িত্বের অংশ হিসেবে সম্মেলনটি প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার আয়োজন করতে যাচ্ছে।”

আইবিসি (আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ কনফেডারেশন) মহাপরিচালক অভিজিৎ হালদারের মতে, কম্বোডিয়া, জাপান, রাশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম এবং অন্যান্য বৌদ্ধ দেশ থেকে প্রতিনিধি প্রত্যাশিত৷

চীন থেকে কোন প্রতিনিধি উপস্থিত হবেন কিনা জানতে চাইলে হালদার জবাব দিয়েছিলেন যে আমন্ত্রণ পাঠানো হয়েছে, তবে চীন সরকারকে নয়। চীনা প্রতিনিধি সম্পর্কে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “একটি আমন্ত্রণ পাঠানো হয়েছিল কিন্তু কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।”

মহামহিম দালাই লামা উপস্থিত হবেন কিনা জানতে চাইলে হালদার বলেন, “আমরা আমন্ত্রণ পাঠিয়েছি কিন্তু [তার] স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে, আমরা এখনও নিশ্চিতকরণের জন্য অপেক্ষা করছি।”

ভারতে রাষ্ট্রীয়ভাবে হতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ সম্মেলন

দালাই লামার ঘনিষ্ঠ একটি সূত্রের মতে, “যেহেতু বয়সের তার চলাফেরা সীমিত এবং বিভিন্ন কাজে তার সহায়তা প্রয়োজন। তার চারপাশে অনেক নিরাপত্তা। এই কারণেই তার উপস্থিতির বিষয়ে নিশ্চিতকরণ এখনও পাওয়া যায়নি।”

অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তাদের মধ্যে ডঃ রবার্ট থারম্যান, তিব্বতি বৌদ্ধদের গেলুগ স্কুলের প্রাক্তন ভিক্ষু এবং পূর্বে কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির ইন্দো-তিব্বত বৌদ্ধ অধ্যয়নের অধ্যাপক জে সংখাপা এবং মহামান্য থিচ ট্রাই কোয়াং উপস্থিত থাকবেন।

সম্মেলনে বৌদ্ধধর্ম এবং শান্তি, পরিবেশগত সংকট, স্বাস্থ্য এবং স্থায়িত্ব, বৌদ্ধ তীর্থযাত্রা, বৌদ্ধ ধ্বংসাবশেষ সংরক্ষণ এবং নালন্দা বৌদ্ধ ঐতিহ্যের সংরক্ষণ সহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

উপরন্তু, আগত প্রতিনিধিরা ভারতের বিভিন্ন বৌদ্ধ তীর্থস্থান স্থান ভ্রমণ করবেন। রেড্ডির মতে, “প্রতিনিধিরা ভারতের বিভিন্ন বৌদ্ধ সাইট পরিদর্শন করতে পারে এবং ভারত সরকার তাদের পরিদর্শনের ব্যপারে সাহায্য করবে।”

গত মাসে, ভারত সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (SCO) এর পৃষ্ঠপোষকতায় অনুরূপ একটি শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করেছিল। এখানে বৌদ্ধধর্মের ইতিহাসে ভারতের ভূমিকা, ভ্রমণ, তীর্থযাত্রা এবং কূটনীতির গন্তব্য কি হবে এই বিষয়ে আলোচনা করা হয়।

২০১১ সালের আদমশুমারি অনুসারে, ভারতে ৮৪,৪২,৯,৭২ জন বৌদ্ধ বাস করে। ডক্টর বি আর আম্বেদকর দ্বারা শুরু করা নবায়ন বা নব্য-বৌদ্ধ আন্দোলনের ফলে মহারাষ্ট্র ভারতে সর্বোচ্চ বৌদ্ধ বাস করে। মহারাষ্ট্রে প্রায় ৬৫,৩১,২,০০ বৌদ্ধ বসবাস করে। লাদাখ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভারতের সর্বোচ্চ শতাংশ বৌদ্ধের আবাসস্থল যেখানে প্রায় ৩৯.৬৫ শতাংশ মানুষ বৌদ্ধ ধর্ম অনুসরণ করে।

আরো পড়ুন>>

শেয়ার করে সবাইকে পড়ার সুযোগ দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!