পণ্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয়: প্রধানমন্ত্রীর আগামী ২৮ অক্টোবর চট্টগ্রামের আনোয়ারায় অনুষ্ঠিতব্য জনসভায় ‘আন্তর্জাতিক পণ্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয়’ উদ্বোধনের তারিখ ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত।
বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে আন্তর্জাতিক পণ্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন নাগরিক উদ্যোগে ‘আন্তর্জাতিক পণ্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠার যৌক্তিকতা শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই দাবি জানান।
এক যুগেও এই বিশ্ববিদ্যালয় না হওয়ায় পিছনে একটি মহল চক্রান্ত করছে জানিয়ে রানা দাশগুপ্ত বলেন, ফাইল প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে রয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে স্মরণ করে দিতে হবে।
আগামী ২৮ অক্টোবর জনসভায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয় উদ্বোধণের তারিখ ঘোষণা করবেন, আমরা আশা করছি। আন্তর্জাতিক পণ্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয়’- ২০১২ এর খসড়া আইন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের প্রতিবেদনেরর প্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী দপ্তরে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তুি আজও এটির চূড়ান্ত অনুমোদন না পাওয়ার কারণ আমাদের বোধগম্য নয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তা ও ‘বাস্তবায়ন নাগরিক উদ্যোগ’ এর আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. জিনবোধি ভিক্ষু।
তিনি বলেন, অষ্টম শতকে পাল রাজা ধর্মপালের পৃষ্টপোষকতায় তৎকালীস পটিয়া বর্তমান আনোয়ারা উপজেলার দেয়াং পাহাড়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল প্রাচীন বিদ্যাপীঠ পণ্ডিত বিহার। নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ষোড়শ শতকে যা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিল। ইতোমধ্যে ‘বাস্তবায়ন নাগরিক উদ্যোগ’ এর আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে আনোয়ারার বড় উঠানের বিশ্বমুড়া এলাকায় খননকার্য পরিচালিত হচ্ছে। খনন কার্যে অতীতের ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রাচীন বিশ্ববিখ্যাত নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়, পাহাড়পুর, মহাস্থানগড়, বিক্রমশীলাসহ অসংখ্য বিদ্যাপীঠের ন্যায় পণ্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাকীর্তির প্রায় একই নিদর্শনাসমূহ পাওয়া যাচ্ছে। তাই শিগগিরই এই ঐহিত্যবাহী বিশ্ববিদ্যালয় চালু করা হোক।
অধ্যাপক ড. জিনবোধি ভিক্ষু বলেন, ২০১০ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একজন অন্যতম প্রতিনিধি হিসেবে সূদূর চীনে যাই। সেখান থেকে এসে ২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক সহযোগিতা, প্রতিশ্রুতি এবং আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে প্রাথমিক অনুমোদন প্রাপ্তি সাপেক্ষে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন সংশ্লিষ্ট দাপ্তরিক কার্যক্রম শেষ করি। পরে চট্টগ্রামের আনোয়ারার ঝিউরী ও হাইদগাঁও গ্রামের মাঝামাঝি এলাকায় ৫০ একর জমি বরাদ্দকরণ, কারিকুলাম প্রণয়ন ও প্রাথমিক বাজেট ৫৬০ কোটি টাকা নির্ধারণপূর্বক তা বাস্তবায়নের জন্য একটি খসড়া আইন প্রণয়ন করা হয়। এই আইনের খসড়াসহ তৎকালীন মুখ্যসচিবের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ‘আন্তর্জাতিক পণ্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয়’ শিরোনামে চুড়ান্ত অনুমোদনের জন্য ২০১৫ সালে যাবতীয় সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র প্রদান করেছিলাম। কিন্ত তা এখনও আলোর মুখ দেখেনি। কিন্তু সেটি কেন আলোর মুখ দেখিনি সেটাও আমাদের বোধগম্য নয়।
মুক্তিযোদ্ধা গবেষক ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, দক্ষিণ চট্টগ্রামে কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় না হলেও দেশে ইতোমধ্যে অর্ধশত বিশ্ববিদ্যালয় চালু রয়েছে। সাত বছর অতিক্রান্ত হলেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক প্রাথমিকভাবে অনুমোদিত আনোয়ারায় প্রতিষ্ঠিত হতে যাওয়া প্রস্তাবিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়টি কেন বা কি কারণে দীর্ঘসূত্রিতায় পড়ল তা আমরা জানতে চাই।
বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন নাগরিক উদ্যোগের সদস্য সচিব ও নাট্যনির্দেশক মোস্তফা কামাল যাত্রার সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে একাত্মতা প্রকাশ করে বক্তব্য দেন মুক্তিযোদ্ধা ফজলে আহমেদ, জামাল উদ্দিন, শরীফ চৌহান ও আ ফ ম মোদাচ্ছের আলী প্রমুখ।