নোয়াখালীতে: ভাড়া করা সন্ত্রাসী দিয়ে বৌদ্ধদের চলাচলের রাস্তাসহ পাশের খালি জায়গাট দখল করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গত ২৪ ফ্রেব্রুয়ারি নোয়াখালীর সেনবাগে সংখ্যালঘু বৌদ্ধ গ্রামে প্রায় সন্ত্রাসী কায়দায় হামলা চালিয়ে প্রায় ২শ বছর ধরে ব্যবহার করে আসা একমাত্র চলাচলের পথটি জবর দখল করে দোকান ঘর নির্মাণ করে প্রবাসী লোকমান হোসেন ও তার ভাড়াকৃত সন্ত্রাসী বাহিনী।
এই ঘটনায় অসহায় মুষ্টিমেয় স্থানীয় বড়ুয়া বৌদ্ধ সম্প্রদায় প্রতিবাদ ও মানবন্ধন করলে তাতে সাড়া দিয়ে ইউএনও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে চলাচলের রাস্তা উন্মোক্ত করে দেন এবং উভয় পক্ষকে ইউএনও অফিসে যাওয়ার নির্দেশ দেন।
পরবর্তীতে ২৬ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে প্রায় ২শ সন্ত্রাসী লেলিয়ে দিয়ে স্বসস্ত্র মহড়ায় রাতারাতি টিনের ঘর তৈরী করে রাস্তাসহ পুরো খালি জায়গাটি দখল করে নেয়। এই সময় প্রকাশ্যে হুঙ্কার দিয়ে সবাইকে জানিয়ে দেয়, যে এই জায়গায় নামবে তার লাশ পড়বে।
স্থানীয় পত্রিকার রিপোর্ট মতে, প্রধান রাস্তার সম্মূখভাগের এক টুকরো জায়গা কিনে প্রায় ২৫০ বছরের পথ বন্ধ করে দিয়েছিল লোকমান হোসেন নামে এক ভূমি দস্যু। পরে রাস্তার জায়গা উন্মুক্ত করে দেন এসি ল্যান্ড ও ভারপ্রাপ্ত ইউএনও তানজিম আলম তুলি। তিনি উভয়পক্ষকে আলোচনায় বসার জন্য অফিসে আহবান জানান।
গ্রামবাসীর দাবী, পূর্বে ঐ জমি বৌদ্ধদের ছিল, তাই পথের জন্য কখনও ঝামেলা হয়নি। কালক্রমে হাত বদলে রাস্তার জন্য জায়গা রেখে স্থানীয় মুসলিমদের কাছে বিক্রি করে দেয় বড়ুয়ারা। চলাচলের রাস্তা নিয়ে পূর্বের মালিক (লোকমানের আগের) ও রাস্তাটির ব্যবহারকারীদের সাথে কোন ঝামেলা ছিল না। কিন্তু বিগত ৩/৪ মাস আগে গোপনে লোকমান হোসেন কিনে নিয়ে খতিয়ান করেই রাস্তাটি বন্ধ করে দেন।
বৌদ্ধ বার্তার পক্ষ থেকে অভিযুক্তের সাথে কথা বলতে চেষ্টা করেও সফল হইনি। স্থানীয় সংবাদকর্মীর রিপোর্ট অনুযায়ী তারা অভিযুক্ত প্রবাসী লোকমান হোসেনের সাথে ফোনে কথা বলে জানতে পারেন, তিনি টাকা দিয়ে জমি কিনে তা খতিয়ান করেছেন। সরকারী নিয়মকানুন মেনেই সব কিছুই করেছেন। তিনি রাস্তার জায়গা দিবেন না। তার জায়গার সমপরিমান জায়গা দিলেই সে রাস্তার জন্য জায়গা ছেড়ে দেবে। অন্যথায় সে অন্য কোন শর্ত মানবেন না।
সাংবাদিক প্রদীপ জয় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে লোকমান হোসেনকে উক্ত চলাচলের রাস্তার জায়গার জন্য মূল্য দিতে চাইলে, তিনি টাকা নিতে অস্বীকার করেন। তিনি জায়গার পরিবর্তে জায়গা দাবী করেন। পরে ইউএনও অফিসে আলোচনায় বসার অনুরোধ জানিয়ে চলে আসেন। কিন্তু অভিযুক্ত লোকমান প্রদীব জয়ের অনুরোধে কর্ণপাত না করে জায়গা দখলের পায়তারা করে। পরবর্তীতে রাতের অন্ধকারে সন্ত্রাসীদের দিয়ে রাস্তার পরিবর্তে জায়গা দখল করে ঘর নির্মানের পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী জায়গাটিও দখল করে নেন। ভুক্তভোগী পরিবার থানায় অভিযোগ করছেন বলেও জানা যায়।
স্থানীয় সংবাদকর্মীদর রিপোর্ট মতে, সেনবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে ফোনে কথা বলে জানা যায়, তিনি এই ব্যাপারে অবগত নন। তবে এই ধরনের ঘটনা ঘটলে, ইউএনও এর নির্দেশ পেলেই অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করার ব্যবস্থা করবেন।
পরবর্তীতে দখলের ব্যাপারে এসি ল্যান্ড তানজিম আলম তুলি কে জানানো হলে, তিনি বলেন, তাদেরকে আলোচনায় বসার জন্য আহ্বান করেছিলাম। কিন্তু কেন তিনি দখল করার সিদ্ধন্ত নিল, তা তারা আমরা অবগত নয়। তিনি আরো বলেন, ইউএনও ছুটি শেষে অফিসে যোগদান করেছেন। তাই তিনিই এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিবেন। অন্যদিকে ঐদিন সকাল থেকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
রিপোর্ট লেখা সময় (১২/০৩/২০২৩) পর্যন্ত দখলীকৃত রাস্তাটি বন্ধ আছে। এদিকে রাস্তাটির ব্যবহারকারীর দুর্ভোগের শেষ নাই। সংখ্যালঘু বড়ুয়া বৌদ্ধ সহ স্থানীয় অনেকেই রাস্তাটি উন্মুক্ত করে এর একটি সুষ্টু সমাধান চায়। এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার বলে মনে করছেন সংখ্যা লঘুদের অনেকেই।
উল্লেখ্য, ১৯১০ সালে উক্ত বৌদ্ধ গ্রামে মতইন বৌদ্ধ বিহারটি নির্মিত হয়েছিল। কিন্তু ভারতের বাবরী মসজিদ ভাঙ্গার ইস্যুতে উক্ত বড়ুয়া পাড়াসহ বৌদ্ধ বিহারটিতে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেন উগ্রবাদীরা। তাই ১৯৯২ সালে নিরাপত্তার খাতিরে তৎকালীন ১০ম সঙ্ঘরাজ জ্যোতিপাল ভিক্ষুর তত্ত্বাবধানে গ্রামের অভ্যান্তরে পুনঃনির্মিত হয় বিহারটি। তখন স্থানীয় বড়ুয়া বৌদ্ধরা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে জীবন যাপন করে আসছে সেখানে। অন্যদিকে সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীর র্যাব ও পুলিশের কড়া নিরাপত্তায় বৌদ্ধরা ধর্মীয় অনুষ্ঠান সম্পাদন করে।