ইলোরার কৈলাশ মন্দির হলো প্রাচীন বৌদ্ধ স্তূপ

  • ড. বরসম্বোধি ভিক্ষু

মহারাষ্ট্রের ঔরঙ্গাবাদ জিলার ইলোরা বৌদ্ধ গুহা শিল্প তৈরী হয়েছিল খৃষ্টীয় তৃতীয় শতাব্দী হতে একহাজার শতাব্দী পর্যন্ত। সেখানে যে বর্তমানে হিন্দুদের কৈলাশ মন্দির রয়েছে তা হল মূলতঃ বৌদ্ধ স্তূপ।

সুপ্রসিদ্ধ লেখক ও গবেষক প্রবোধ চন্দ্র বাগচী (১৮৯৮-১৯৫৬) তাঁর বহুল প্রতারিত গ্রন্থ ‘India and Central Asia’র ৩৮ পৃষ্টায় লিখেছেন যে-‘ইলোরার কৈলাশ মন্দিরের মত সোগদিয়ানের হৈবক শহরে এক বৌদ্ধ স্তূপ তৈরী হয়েছিল। সোগদিয়ানের রাজধানী ছিল সমরকন্দ শহর। যা হল বর্তমানে রাশিয়ার অন্তর্গত। সোগদিয়ান ছিল বৌদ্ধ ধম্মের এক মহত্বপূর্ণ কেন্দ্র। এ সোগদিয়ান শব্দ তৈরী হয়েছে ‘সুগতিয়ন’ শব্দ হতে। সুগত মানে হল বুদ্ধ এবং সুগতিয়ন মানে হল বুদ্ধের অনুসরণকারী লোক।’

ইলোরার কৈলাশ মন্দির হলো প্রাচীন বৌদ্ধ স্তূপ

প্রবোধ চন্দ্র বাগচী একই পুস্তকের ৪১ পৃষ্টায় আরও লিখেছেন যে-‘সোগদিয়ান লোকদেরকে উত্তর পশ্চিম ভারতে ‘ সুলিক বা শিবালিক’ বলে জানা যেত। সুলিক বা শিবালিক মানে হল শিব পূজারী। এখানে সুগত শব্দ হতেই শিব শব্দ তৈরী হয়েছে। সেখানকার সুগত বৌদ্ধ স্তূপের মত ইলোরায় বৌদ্ধ স্তূপ বানানো হয়েছিল। যাকে বর্তমানে শিবের কৈলাশ মন্দির বলা হচ্ছে। কৈলাশ মন্দির মানে হল সুগত লোকদের বৌদ্ধ বিহার।’

শিব হল বাস্তবে বোধিসত্ব অবলোকিতেশ্বর। বৌদ্ধ ধম্মে হাতী হল এক মহত্বপূর্ণ প্রতীক। কারণ মহারাণী মহামায়া স্বপ্নে দেখেছিলেন এক শ্বেত হস্তী তাঁর গর্ভে প্রবেশ করছে। ইহা ছিল রাজকুমার সুকিতির (সিদ্ধার্থের) মাতৃজটরে প্রবেশের পূর্বাভাস। এজন্য ইলোরার শিল্প কর্মে পাথরের বিশালকায় হাতীর ভাষ্কর্য কৈলাশ মন্দিরের চারিদিকে স্পষ্ট দেখা যায়। শ্রীলঙ্কাদি বৌদ্ধ দেশেও স্তূপ ও বিহারে হাতীর ভাষ্কর্য পরিলক্ষিত হয়। তাতে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, কৈলাশ মন্দিরই হল প্রাচীন বৌদ্ধ স্তূপ।

ইলোরার কৈলাশ মন্দির হলো প্রাচীন বৌদ্ধ স্তূপ

ইলোরার কৈলাশ মন্দির যে বাস্তবে বৌদ্ধ চৈত্য বা স্তূপ ইহার প্রমাণ এখনও তথায় রয়েছে। মন্দিরের প্রবেশদ্বারে একদিকে স্বয়ং মহামায়াকে গজলক্ষ্মীরূপে দেখা যায় এবং অন্য দিকে অমিতাভরূপে বোধিসত্বের মূর্তি রয়েছে। দ্বিতীয় তলায় স্থিত শিবলিঙ্গের সংরচনা হল বৌদ্ধ চৈত্য যেখানে রক্ষিত ছিল বুদ্ধের ধাতু। ইহার প্রবেশ পথে পদ্মপাণি ও বজ্রপাণি বোধিসত্বের ভাষ্কর্যও রয়েছে।

বৌদ্ধ দার্শনিকদের মধ্যে আচার্য অসঙ্গ (৩০০-৩৭০) হলেন অতীব স্বনামধন্য। যিনি বৌদ্ধ ধম্মে যোগাচার বিজ্ঞানবাদের স্থাপনা করেছিলেন। তাঁর আরেকটি নাম ছিল ‘আর্যসঙ্ঘ।’ তাঁকে অজন্তার ঋষিরূপেও জানা যায়। তাহাই ছিল ‘অচিন্তপুরী’ যা পরবর্তীতে অজন্তা গুহা নাম হয়েছে। বাস্তবিকভাবে আর্য শব্দ হল এক বৌদ্ধ শব্দ।

ইলোরার কৈলাশ মন্দির হলো প্রাচীন বৌদ্ধ স্তূপ

আচার্য অসঙ্গ ও আচার্য বসুবন্ধর ( ৫ম হতে ৬ ষ্ট শতাব্দী) সময়কাল হতে অজন্তা ও ইলোরা গুহার শিল্প কর্ম শুরু হয়েছিল।

ভারতবর্ষে সবচেয়ে বেশী দুর্নীতি ও মিথ্যাচার হয়েছে ইতিহাসে। মনুবাদীরা বৌদ্ধ ঐতিহ্য, পরম্পরা, ইতিহাস, উৎসব এবং বৌদ্ধদের স্থাপত্য সমূহকে ধ্বংস করার মাধ্যমে মিথ্যা ইতিহাস রচনা করে সবকিছুকে ব্রাহ্মণীকরণ করে নিয়েছে। সোগাদিয়ান লোকদেরকেই শিবালিক বলে জানা যেত এবং তাঁদের সুগত বুদ্ধকে শিব বলা হত। এভাবে এখন সত্যিকার ও বাস্তবিক ইতিহাস পুণরুদ্ধার করার সময় এসেছে।

আরো পড়ুন>>

শেয়ার করে সবাইকে পড়ার সুযোগ দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!