গত ১৪ এপ্রিল ছিল ভারতে সংবিধান প্রণেতা বাবা সাহেব ড. আম্বদকর এর ১৩২তম জন্মদিন। বি. আর. আম্বেদক এর জন্মদিবস উপলক্ষ্যে হাজার হাজার দলিত ও আদিবাসী গান্ধীনগরে একটি বিশাল সমাবেশ করে। সমাবেশটি ১১ নম্বর সেক্টর এর রাম কথা ময়দানে এসে শেষ হয়। সমাবেশে উপস্থিত অনেকেই ঐদিন বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানটি মূলত দলিতদের সংগঠন স্বয়ম সৈনিক দল (এসএসডি) আয়োজন করেছিল। ভারতের প্রথম সারির দৈনিক দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের রিপোর্ট অনুযায়ী, সমাবেশে প্রায় ৬৫,০০০ লোক উপস্থিত হয়েছিল।
যদিও এসএসডির পক্ষ থেকে ঐদিন কতজন মানুষ নতুন করে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেছে তার নির্দিষ্ট সংখ্যা দেয়নি, সংগঠনের একজন প্রবীণ স্বেচ্ছাসেবক দাবি করেছেন যে অনুষ্ঠানে প্রায় ১০,০০০ লোক বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেছে।
রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ ব্যক্তিগত বাস এবং অন্যান্য যানবাহনে এসে রাম কথা ময়দানে একটি সমাবেশে জড়ো হয়। সমাবেশে তাদের অনেকেই হিন্দু ধর্ম পরিহার করে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করে।
একদল বৌদ্ধ ভিক্ষুর উপস্থিতিতে ধর্মান্তর অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৫৬ সালে বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করার সময় ড: বি আর আম্বেবদকর যে ২২টি শপত গ্রহণ করেছিল তা পাঠ করা হয়। ঘটনাক্রমে, ঐদিন (১৪ এপ্রিল) শুক্রবারও আম্বেদকরের জন্মবার্ষিকী ছিল।
ভারতে গির-সোমনাথ জেলার এসএসডির একজন নব্য স্বেচ্ছাসেবক জয়সুখ (৩৪)। জয়সুখ এই অনুষ্ঠানে হিন্দুধর্ম ত্যাগ করে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন।
জয়সুখ, তার শেষ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “যেহেতু আমি একটি বর্ণহীন সমাজ চাই তাই আমি বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করতে চাই। বৌদ্ধধর্ম এমন একটি ধর্ম যা সমতার কথা বলে এবং যা মানুষের মধ্যে বৈষম্য করে না। আর তাই আমি বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
“আমি তিনবার চুক্তির ভিত্তিক চাকরিতে ভাল পরীক্ষা দেওয়ার পরও আমার চাকরি হয়নি। আমি সব পরীক্ষায় ভাল লিখিত পরীক্ষা দেওয়ার পর ইন্টারভিউয়ার আমার জাত সম্পর্কে জানার পর আমাকে চাকরিতে যোগদান করতে দেয়নি।
ভারতে রাজকোট থেকে আসা শৈলেশ চৌহান (৪৩) অনুষ্ঠানে হিন্দুধর্ম ত্যাগ করে বৌদ্ধধর্মে ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছেন অনুষ্ঠানে।
শৈলেশ বলেন, “আমি কোনরূপ বৈষম্য ছাড়া একটি সমাজের অংশ হতে চাই আর এই জন্যই আমি বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেছি। শৈলেশ নার্সিং কোর্স শেষ করে বর্তমানে একটি বেসরকারি হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটারের ইনচার্জ হিসেবে কাজ করছেন।
শৈলেশ আরো বলেন, “আমি বহুবার বৈষম্যের সম্মুখীন হয়েছি। নার্সিং করার আগে ইটের ভাটায় কাজ করতাম। সেখানে আমাকে একটি সাধারণ পাত্র থেকে জল পান করতে দেওয়া হয়নি শুধু মাত্র আমার জাত পরিচয়ের কারনে।”
আহমেদাবাদের ভেজালপুর এলাকার উর্বশী রাঠোড (২৩) অন্য একজন যিনি এই অনুষ্ঠানে স্ব-পরিবারে বৌদ্ধধর্মে দীক্ষা নেন। উর্বশী তার পরিবার – বাবা-মা এবং দুই ভাইবোন সহ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
উর্বশী বলেন, “ভ্রাতৃত্বের সংস্কৃতিকে গ্রহণ করতে আমরা আজ বৌদ্ধ ধর্মে ধর্মান্তরীত হলাম। হিন্দুধর্মে, প্রতিটি পদক্ষেপে আমাদের জাত স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়। আমরা এটি এড়িয়ে যেতে চাই।” উর্বশী বর্তমানে আইনে তার ডিগ্রি নিচ্ছেন।
এসএসডি-এর স্বেচ্ছাসেবকদের একজন লাভেশ রানা বলেছেন যে তাদের কাছে সঠিক সংখ্যা নেই যারা বৌদ্ধ ধর্মে ধর্মান্তরিত হতে পারে। রাজ্য জুড়ে অনেক লোক এই অনুষ্ঠানে এসে এবং তাদের মধ্যে অনেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের জানানো ছাড়াই এসেছে। “অনুষ্ঠানে ১০,০০০ মানুষ (বেশিরভাগ দলিত) আজ বৌদ্ধ ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ার কথা আছে”, রানা বলেছেন।
অনুষ্ঠানের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে, গান্ধীনগর কালেক্টর হিতেশ কোয়া বলেন, “আমি পুলিশ সুপারের সাথে চেক করেছি এবং অনুষ্ঠানটি অনুমতি নিয়ে আয়োজন করা হয়েছিল।”
এই অনুষ্ঠানে সঞ্চালিত ধর্মান্তর অনুষ্ঠান সম্পর্কে অনুমতি নেওয়া হয়েছিল কিনা জানতে চাইলে, গান্ধীনগর কালেক্টর বলেন, “ভারতীয় বিধানমতে ধর্মান্তরের জন্য, একজন ভারতীয়কে তার বসবাসের জেলার জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়।”
“এখানে প্রায় ধর্মান্তরের ঘটনা ঘটে। আমি সম্প্রতি গান্ধীনগরে বদলি হয়ে এসেছি। গত ১০-১২ দিনে ধর্মান্তরের জন্য কোন অনুমতি দেওয়া হয়নি। এর আগে অন্য কোনো অনুমতি দেওয়া হয়েছিল কিনা তা আমাকে খতিয়ে দেখতে হবে।”
এদিকে, পুলিশের ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট (গান্ধীনগর জেলা) অমি প্যাটেল বলেছেন যে প্রায় ৬৫,০০০ লোক এই অনুষ্ঠানের জন্য এসেছিলেন এবং এর জন্য পূর্ব অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই অনুষ্ঠানটি শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
আরো পড়ুন>>
- ভারত বিশ্বকে উপহার দিয়েছে বুদ্ধকে, যুদ্ধ নয়: নরেন্দ্র মোদি
- এশিয়ার বৃহত্তম তামার বুদ্ধমূর্তি ভিয়েতনামে
- ভারতে রাষ্ট্রীয়ভাবে হতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ কনফারেন্স
- ফ্রান্সে কুশলায়ন বুড্ডিস্ট মেডিটেশন সেন্টারের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত
- বৌদ্ধধর্মের উত্তান-পতন: নব জাগরনের সম্ভাবনা
- জীব মাত্রই কর্মের অধীন