বুদ্ধমূর্তি স্থাপন নিয়ে দুই সম্প্রদয়ের মধ্যে উত্তেজনা

বুদ্ধমূর্তি স্থাপন: ভারত এবং শ্রীলঙ্কার জল সীমায় অবস্থিত কাচাথিভু দ্বীপে বুদ্ধমুর্তি স্থাপন নিয়ে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে খ্রিষ্টান এবং বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মধ্যে। দ্বীপটিতে শ্রীলংকার বৌদ্ধ নাবিকেরা একটি বুদ্ধমুর্তি স্থাপন করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

মূলত মাছ ধরতে গিয়ে গভীর সমুদ্রের এই দ্বীপটিতে উভয় দেশের জেলেরা বিশ্রাম ও জাল শুকায়। এর আগে দ্বীপটিতে বৌদ্ধদের কোন ধর্মীয় স্থাপনা ছিল না, ছিল কেবল সেন্ট অ্যান্থনির ক্যথলিক মন্দির। লোকস্রুতি আছে যে দ্বীপটি সেন্ট অ্যান্থনির নামে উৎসর্গ করা হয়েছিল।

বুদ্ধমূর্তি স্থাপন নিয়ে দুই সম্প্রদয়ের মধ্যে উত্তেজনা

আগে দ্বীপটিতে কোন বুদ্ধমূর্তি না থাকলেও সম্প্রতি বৌদ্ধ সম্প্রদায় দ্বীপটিতে গৌতম বুদ্ধের মুর্তিটি স্থাপন করলে উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে খবর প্রকাশ করেছে দ্য হিন্দু।

ক্যথলিক চার্চ এর প্রধান পুরোহিত এবং খ্রিষ্টান জেলে সম্প্রদায়ের সদস্যরা এর প্রতিবাদ করেছেন এবং মূর্তিটি অপসারণের দাবি জানিয়েছেন। তামিল ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স, শ্রীলঙ্কার তামিলদের প্রতিনিধিত্বকারী একটি রাজনৈতিক জোট। তাদের পক্ষ থেকেও বুদ্ধ মূর্তিগুলি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অপসারণ করার দাবি জানিয়েছে।

শ্রীলঙ্কার তামিল প্রেসে প্রকাশিত একটি ব্যাখ্যায়, শ্রীলঙ্কান নৌবাহিনী “ছোট বুদ্ধমূর্তি” স্থাপন করার কথা স্বীকার করেছ, যাতে দ্বীপে অবস্থানরত নৌবাহিনীর কর্মীরা শ্রদ্ধা জনাতে পারে। তারা এটিও উল্লেখ করেছে যে দ্বীপটিতে বছরের বেশির ভাগ সময় ধরে জনশূণ্য থাকে এবং শ্রীলঙ্কার নৌবাহিনীর কর্মীরা এখানে নিরাপত্তার স্বার্থে অবস্থান করে। যেহেতু শ্রীলঙ্কান নৌবাহিনীর কর্মীরা বৌদ্ধ এবং বৌদ্ধদের প্রার্থনা করার জন্য জায়গা ছিল না, তাই মূর্তিগুলি স্থাপন করা হয়েছিল। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এটাও পরিষ্কার করা হয়েছে যে,  দ্বীপে বৌদ্ধ বিহার নির্মাণ বা স্থাপন করার মতো কোনো পরিকল্পনা নাই।

কাচাথিভু দ্বীপ, Sri Lanka
গুগল ম্যাপে কাচাথিভু দ্বীপের অবস্থান

নৌবাহিনীর মুখপাত্র গয়ান বিক্রমাসুরিয়া বলেছেন, ”যেহেতু কাচাথিভু দ্বীপে ডিউটিরত নৌ-বাহিনীর বেশিরভাগ নাবিক বৌদ্ধ, তাই আমরা একটি ছোট বুদ্ধ মূর্তির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করি, যা আমাদের মেসের কাছাকাছি স্থাপন করা হয়েছে।”

তিনি আরো বলেন, “কাচাথিভুতে নিরাপত্তার দায়িত্বরত নাবিকদের জন্য এখানে একটি অস্থায়ী ক্যাম্প আছে। এখানে সেন্ট অ্যান্টনির চার্চ ছাড়া অন্য কোনো ধর্মীয় উপাসনালয় নেই। শ্রীলঙ্কার নৌবাহিনী কাচাথিভুত এলাকাটির চারপাশের নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব ছাড়াও সেন্ট অ্যান্থনি চার্চকেও রক্ষা করে। নৌবাহিনীর অন্য কোনো ধর্মীয় উপাসনালয় বা ধর্মীয় স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের কোনো ইচ্ছা নেই।”

এদিকে পাট্টালি মক্কাল কাচ্চি নেতা এস. রামাদোস বুদ্ধ মূর্তি স্থাপনকে “জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি” হিসাবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, এটি আরও অশুভ কিছুর জন্য প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে৷

সেন্ট অ্যান্থনি’র চার্চ
সেন্ট অ্যান্থনি’র চার্চ

তামিলনাড়ু সরকারকে মূর্তিটি অপসারণের জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “তামিলনাড়ুর বেশ কিছু খ্রিস্টান এবং শ্রীলঙ্কার তামিলরা সেন্ট অ্যান্টনির মন্দিরের বার্ষিক উৎসবে অংশগ্রহণ করে। বুদ্ধ মূর্তি স্থাপন দ্বীপের সিংহলাইজেশনের একটি পদক্ষেপ। প্রতি বছর বুদ্ধ মন্দিরে উৎসব হলে তা অনাকাঙ্ক্ষিত উত্তেজনা তৈরি করবে।”

কাচাথিভু দ্বীপটির আয়তন প্রায় ১৬৩ একর। ভারত ১৯৭৬ সালে জনবসতিহীন দ্বীপটির দাবি ছেড়ে দিয়েছিল। তবে দ্বীপটি উভয় দেশের জেলেদের মধ্যে পবিত্র বলে বিবেচিত।

আরো পড়ুন>>

শেয়ার করে সবাইকে পড়ার সুযোগ দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!