কোরিয়ায় স্থাপিত সবচেয়ে প্রাচীন বুদ্ধমুর্তি উদ্ধার পুণঃস্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সে দেশের সরকার। প্রায় ১৩০০ বছরের পুরানো পাথরে খোদাই করা মূর্তিটি এতোদিন ভাঙা অবস্থায় পড়েছিল। সম্প্রতি কোরিয়ান বৌদ্ধদের প্রচেষ্টায় সরকারের সহায়তায় মুর্তিটি পুনরুদ্ধার করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে যা প্রায় ৬০০ বছর আগে একটি ভূমিকম্পে ভেঙে পড়েছিল বলে মনে করা হয়।
কোরিয়ান গবেষণা প্রতিষ্ঠান জিওংজু ন্যাশনাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট অফ কালচারাল হেরিটেজ ২০০৭ সালে সর্বপ্রথম ভাঙা অবস্থায় প্রাচীন এই মুর্তিটি আবিষ্কার করে। প্রায় পাঁচ মিটার দীর্ঘ, ৮০-টন পাথরের ভাস্কর্যটি দক্ষিণ কোরিয়ার উত্তর গেয়ংসাং প্রদেশের গিয়াংজু শহরের কাছে নামসান পর্বতে ইওলামগোক বৌদ্ধ মন্দিরের কাছে অবস্থিত। মূর্তিটি মুখ থুবড়ে পড়ে থাকতে দেখা গেছে, মুর্তিটির নাক একটি পাথরের সাথে লেগে থাকতে দেখা যায় তবে এর অন্যান্য অংশগুলো এখনো অক্ষত আছে।
দক্ষিণ কোরিয়ান বৌদ্ধধর্মীয় গুরু এবং সেদেশের ভিক্ষুসংঘের সভাপতি শ্রদ্ধেয় জিনউ গত ১১ জানুয়ারি সিউলে একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেনে। “বুদ্ধ [শায়িত মূর্তি] সমগ্র বিশ্বের মানুষের দুর্ভোগ সহ্য করার জন্য মুখ থুবড়ে পড়ে এক হাজার বছর কাটিয়েছেন। বুদ্ধকে দাঁড় করানো মানে নিজেদেরকে উত্থিত করা এবং এটি একটি পবিত্রতম বুদ্ধ সেবা।”
কোরিয়ায় বৌদ্ধদের সাধারণত যোগে অর্ডার বলা হয়, যোগে অর্ডার হলো সিওন (জেন) বৌদ্ধধর্মের একটি স্কুল যা ১২০০ বছর আগে ইউনিফাইড সিলা (পরবর্তী সিলা নামেও পরিচিত) রাজ্যে (৬৬৮-৯৩৫) প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। কোরিয়ান বৌদ্ধ সন্ন্যাসী বোজো জিনুল এর হাত ধরে, যোগে স্কুল একটি স্বতন্ত্র সত্তা হিসাবে ১১ শতকের শেষের দিকে আবির্ভূত হয়েছিল। কোরিয়ায় বিশুদ্ধ বৌদ্ধধর্ম প্রতিষ্ঠায় বোজো জিনুল কৃতিত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। যোগে অর্ডার বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়ার বৌদ্ধ জনসংখ্যার বৃহত্তম অংশকে প্রতিনিধিত্ব করে। প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ১৯০০টি সক্রিয় বৌদ্ধ মন্দির পরিচালনা করে, বর্তমানে তাদের ১৩০০০ এর বেশি অনুসারী বৌদ্ধ সন্ন্যাসী এবং দেশব্যাপী ৭ মিলিয়ন অনুগামী আছে।
আপতত বুদ্ধ মূর্তিটি কিভাবে উদ্ধার করা যায় সে বিষয়ে গবেষণা চলছে এবং আশা করা হচ্ছে যে এই বছরের মাঝামাঝি সময়ে সম্পূর্ণ গবেষণা ও পরিকল্পনা শেষ হবে। মূর্তিটি নিরাপদে সোজা হয়ে গেলে শেষ পর্যন্ত কোথায় স্থানান্তর করা হবে সেটিও নির্ধারণ করবে পরিকল্পনায়। পুনরুদ্ধারের কাজটি সরাসরি কোরিয়ান সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য প্রশাসন এবং গিয়াংজু শহর সরকার তদারকি করছে। আশা করা হচ্ছে আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে সম্পূর্ণ কাজ শেষ হবে।
গবেষকদের বিশ্বাস গ্রানাইট মূর্তিটি আনুমানিক অষ্টম শতাব্দীর শেষের দিকে, ইউনিফাইড সিলা রাজবংশের সময়কালে তৈরি করা হয়েছিল। ১৪৩০ সালে একটি শক্তিশালী ৬.৪ মাত্রার ভূমিকম্প এই অঞ্চলে আঘাত হানে, এই সময় মুর্তিটি হেলে পড়তে পারে।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের জাতীয় আদমশুমারির তথ্য অনুসারে, দক্ষিণ কোরিয়ার জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ ৫৬.১ শতাংশ মানুষ কোনো ধর্মীয় অনুষঙ্গ মানে না। ২৭.৬ শতাংশ মানুষ খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারী যেখানে বৌদ্ধরা মাত্র ১৫.৫ শতাংশ।