উগান্ডায় প্রথম বৌদ্ধ প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন

আন্তর্জাতিক নিউজ ডেস্কঃ

উগান্ডার জন্মজাত বৌদ্ধ ভিক্ষু ভান্তে ভিক্ষু উগান্ডাওয়ে বৌদ্ধরক্ষিত এর নেতৃত্বে উগান্ডায় প্রথম বৌদ্ধ প্রাথমিক বিদ্যালায়ের ভিত্তিপ্রস্থর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন। বৌদ্ধ ভিক্ষু শ্রদ্ধেয় ভান্তে ভিক্ষু উগান্ডাওয়ে বুদ্ধরক্ষিত দ্যা উগান্ডা বোড্ডিস্ট সেন্টার এর পরিচালক।

বুদ্ধরক্ষিত বলেন, “এটি এমন একটি স্কুল হবে, যেখানে লোকেরা তাদের হাত, মাথা ও বুদ্ধি-বিবেক-কে প্রশিক্ষণ দিতে পারবে। ধ্যানের মাধ্যমে মানুষ এখানে তাদের হৃদয়কে প্রশিক্ষণ দিতে শিখবে।”

উগান্ডায় বৌদ্ধ প্রাথমিক বিদ্যালয়
ভিক্ষু বুদ্ধরক্ষিতের সাথে থাই রাষ্ট্রদূত সাসিরিত টাঙ্গুলরাত

তিনি আরো বলেন, “আপতত আমাদের কিন্ডারগার্টেন প্রোগ্রাম, পিস স্কুল, দ্যা উগান্ডা বোড্ডিস্ট সেন্টারে পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমানে ২৪ জন শিশু আমাদের বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে যাদের বয়স ৩-৫ বছর। আমরা তিনজন শিক্ষক এবং দুজন কর্মী সদস্যকে নিয়োগ দানের মাধ্যমে আমাদের কার্যক্রম চালেয়ে যাচ্ছি।”

স্কুলটি স্থানীয় ছাত্র-ছাত্রীদের বিনামূল্যে শিক্ষা প্রদান করে যাচ্ছে। গত মার্চ মাসে থাইল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত সাসিরিট টাঙ্গুলরাট কেনিয়ায় ভ্রমণ শেষে তিনি উগান্ডার রাষ্ট্রপতি ইওওয়েরি মুসেভেনির আমন্ত্রনে উগান্ডা সফর করেন। সফর কালে তিনি স্কুলটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

Buddharakkhita
ভিক্ষু ভান্তে বুদ্ধরক্ষিত

উগান্ডা বোড্ডিস্ট সেন্টারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, “পিস স্কুলের প্রধান লক্ষ্য হল একটি নৈতিক শিক্ষার পরিবেশে শিক্ষা প্রদান করা যাতে শিশুরা বিবেকবান নাগরিক হতে পারে।”

“স্কুলটি একটি মননশীলতা-ভিত্তিক শিক্ষা প্রদানের আকাঙ্ক্ষায় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে যা অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক শান্তিতে অবদান রাখবে এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের যত্ন নেবে। যদিও স্কুলটি বৌদ্ধ কৃষ্টি-কালচার ও শিক্ষার উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে তবে এটি ঐতিহ্যগত আফ্রিকান নীতি ও মূল্যবোধও শেখায়।”

এই প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা নিয়ে কেবল উগান্ডা বৌদ্ধ কেন্দ্রের সাথে থাই রাষ্ট্রদূতের প্রথম মিথস্ক্রিয়া নয়। ২০২০ সালের আগস্টেও থাই রাষ্ট্রদূত টাঙ্গুলরাত ভান্তে বুদ্ধরক্ষিতের সাথে সাক্ষাত ও প্রশংসা করেন। সে সময় উগান্ড বোড্ডিস্ট সেন্টার পরিদর্শনের সময় উগান্ডায় বৌদ্ধ শিক্ষা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ভান্তে বুদ্ধরক্ষিত প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

আমি খুবই আনন্দিত যে বৌদ্ধধর্ম এশিয়া থেকে আফ্রিকা পর্যন্ত বহুদূর পৌঁছে গেছে। প্রকৃতপক্ষে, থাই সমাজে বৌদ্ধ ধর্মের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বৌদ্ধধর্ম শুধুমাত্র একটি ধর্ম নয়, এটি একটি জীবন পদ্ধতিও। এটি এমন একটি পথ যা আমাদের শেখায় কীভাবে কাজ করতে হয় এবং মুক্তির পথে হাঁটতে হয়। আমি বিশ্বাস করি যে উগান্ডা বোড্ডিস্ট সেন্টার উগান্ডা এবং থাই সম্প্রদায় সব সময় উগান্ডার বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সাথে থাকবে। আমি আপনাকে আশ্বস্ত করতে চাই যে নাইরোবিতে রয়্যাল থাই দূতাবাস এবং উগান্ডার রয়্যাল থাই কনস্যুলেট উগান্ডায় বৌদ্ধ ধর্মের প্রসারে সহায়তা করবে। এছাড়াও আমি শুনে খুব খুশি হলাম যে নাইরোবির অনারারি কনসাল সম্মানিত বারবারা মুলওয়ানা ক্রমাগতভাবে উগান্ডা বোড্ডিস্ট সেন্টারকে সমর্থন করছেন। বর্তমানে উগান্ডা বোড্ডিস্ট সেন্টার বৌদ্ধ ধর্মের মাধ্যমে উগান্ডার জনগণকে থাই জনগণের সাথে সংযুক্ত করতে একটি বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় ভিক্ষু বুদ্ধরক্ষিত।

-(উগান্ডা বোড্ডিস্ট সেন্টার)

উগান্ডা বোড্ডিস্ট সেন্টার আফ্রিকান দেশের প্রথম এবং একমাত্র বৌদ্ধ কেন্দ্র। ভান্তে বুদ্ধরক্ষিত ভারত থেকে স্বদেশে ফিরে ২০০৫ সালে এন্টেবে শহরে এটি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বাণিজ্য বিভাগ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের জন্য উত্তর ভারতে অবস্থান কালে থাইল্যান্ডের কিছু বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর সাথে একটি সাক্ষাৎ তার জীবনের গতিপথকে চিরতরে বদলে দেয়।

ভান্তে বুদ্ধরক্ষিত স্মরণ করে বলেন:

আমি ১৯৯০-৯৪ সাল পর্যন্ত ভারতে ছিলাম। এরপর ১৯৯৫-৯৮ সাল নাগাদ আমি থাই সংস্কৃতি এবং বৌদ্ধধর্ম অন্বেষণ করতে থাইল্যান্ড ভ্রমণ করি। অবশেষে, ১৯৯৯ সালে আমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ করার সুযোগ পাই সেখানে আমি আমার বার্মিজ প্রিসেপ্টর, প্রয়াত ভান্তে সায়াদাউ উঃ শীলানন্দ এর সাথে দেখা করি। আমি মূলত প্রয়াত সায়াদাউ উঃ শীলানন্দ ভান্তের নির্দেশনায় সন্ন্যাস প্রশিক্ষণ শুরু করেছিলাম। অবশেষে, ২০০২ সালে, আমি ক্যালিফোর্নিয়ার তথাগত মেডিটেশন সেন্টারে বৌদ্ধ ধর্মে অর্ডিনেশন নিয়েছিলাম।

সন্ন্যাসী শিক্ষার পাশাপাশি, উগান্ডা বোড্ডিস্ট সেন্টার ভিক্ষুদের কম্পিউটার সাক্ষরতার প্রশিক্ষণও দেওয়া হয় যাতে তারা আধুনিক বিশ্বের সাথে সমানভাবে তালমিলাতে পারে।

ভান্তে বুদ্ধরক্ষিত ২০২০ সালে দ্য গার্ডিয়ান সংবাদপত্রকে দেয়া এক স্বাক্ষাতকারে বলেছিলেন, “উগান্ডায় আমি আফ্রিকান পদ্ধতিতে থেরবাদ বৌদ্ধধর্ম শেখাচ্ছি যাতে লোকেরা ভগবান বুদ্ধকে বুঝতে পারে এবং এটিকে অদ্ভুত, বিদেশী এবং এশিয়ান কিছু হিসাবে না দেখে।”

তিনি আরো বলেছিলেন, “আমি উগান্ডা এবং আফ্রিকায় অনেক লোককে কষ্ট পেতে দেখেছি। আমি একজন বৌদ্ধ ভিক্ষু হিসেবে একজন গেম চেঞ্জার হিসাবে বা আফ্রিকাতে দুঃখ থেকে সুখে পরিবর্তনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই। আমাদের আফ্রিকায় প্রায় ৩০০০ বৌদ্ধ রয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় এই সংখ্যা সবচেয়ে বেশি কারণ এশিয়ার দেশগুলো থেকে সোনার খনিতে কাজ করতে আসা অনেক লোক সেখানে মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছে।”

 

আরো পড়ুন>>

শেয়ার করে সবাইকে পড়ার সুযোগ দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!