আজ ত্রি-স্মৃতি বিজড়িত শুভ বুদ্ধপূর্ণিমা। বৌদ্ধদের সবচেয়ে বড় ও পবিত্র ধর্মীয় উৎসব। বিশ্বের প্রতিটি বৌদ্ধ দেশে বুদ্ধপূর্ণিমা দিনটি সরকারি ছুটির দিন। বিভিন্ন দেশে বৌদ্ধধর্মীয় আচারণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দিনটি পালন করে।
গৌতম বুদ্ধ আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৬২৩ অব্দে এক বৈশাখী পূর্ণিমার দিনে নেপালের লুম্বিনি নামক স্থানে জন্ম গ্রহণ করেন। জন্মের পরে গৌতম বুদ্ধের নাম রাখা হয়েছিল সিদ্ধার্থ। তার পিতার নাম শুদ্ধোধন, মাতার নাম মহামায়া। শুদ্ধোধন তৎকালিন শাক্য রাজ্যের রাজা ছিলেন। সিদ্ধার্থ জন্মের ৭ দিন পর তার মাতা মহামায়া মৃত্যুবরণ করলে বিমাতা (মাসি) মহাপ্রজাপতি গৌতমী তার লালন পালন করেন। মূলত তার মাসি/বিমাতার নামনুসারেই পরে সিদ্ধার্থের নাম হয় গৌতম।
রাজপুত্র সিদ্ধার্থকে সংসার মুখী করতে ১৬ বছর (মতান্তরে ১৯ বছর) বয়সে গোপাদেবী নামক এক সুন্দরী রাজকন্যার সাথে বিয়ে দেন। সংসার জীবনে সিদ্ধার্থ ও গোপাদেবীর ঘরে রাহুল নামে এক পুত্র সন্তান ছিল। সিদ্ধার্থ গৌতম ২৯ বছর বয়সে দুঃখ মুক্তির জন্য এক আষাঢ়ী পূর্ণিমার রাতে সংসার ত্যাগ করেন।
সংসার ত্যাগ করার পর সিদ্ধার্থ কঠোর সাধানায় নিমগ্ন হন। অতঃপর ৬ বছর কঠোর সাধনা বলে ৩৫ বছর বয়সে এক বৈশাখী পূর্ণিমা রাতে তিনি সর্বজ্ঞতা প্রাপ্ত হন। তিনি জন্ম, মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন করলেন। আবিষ্কার করলেন আর্য্য অষ্টাঙ্গিক মার্গ, চতুরার্য সত্য। জগত জুড়ে তিনি বুদ্ধ নামে পরিচিত হলেন।
বুদ্ধত্ব লাভ করে তিনি দীর্ঘ ৪৫ বছর ধর্ম প্রচার করেন। এই সময় তিনি সমগ্র ভারত বর্ষ জুড়ে ঘুরে ঘুরে তার অমৃত বাণী প্রচার করেন। জগত জুড়ে বুদ্ধ বুদ্ধ ধ্বনিতে ধ্বনিত হলো।
আশি বছর বয়সে বুদ্ধ একদিন মাঘী পূর্ণিমা তিথিতে তার মহাপরিনির্বাণের দিন ঘোষনা করেন। তিনি তার ভিক্ষু সংঘকে উদ্দেশ্য করে বলেন, হে ভিক্ষুগণ আজ থেকে তিন মাস পর বৈশাখী পূর্ণিমা তিথিতে আমি পরিনির্বাপিত হবো। তোমরা তোমাদের অজানা যা জানার বুদ্ধকে প্রশ্ন করে জেনে নিতে পারো।
ঠিক তিন মাস পর বৈশাখী পূর্ণিমা তিথিতে গৌতম বুদ্ধ মল্লদের জোড়া শালবৃক্ষের নিচে মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন। তিনি ইহজগত ত্যাগ করে নির্বাণে গমন করলেন।
মূলত এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার জন্যই বৌদ্ধদের কাছে বৈশাখী পূর্ণিমা এতটা গুরুত্বপূর্ণ। বুদ্ধের স্মৃতির সাথে জড়িতে বলে এটিকে বুদ্ধপূর্ণিমা বলা হয়। আন্তর্জাতিক ভাবে এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক ভেসাক ডে হিসেবে পালন করা হয়।
বিশ্বব্যাপি বুদ্ধপূর্ণিমা
বুদ্ধপূর্ণিমা সঠিক তারিখ চীনা চন্দ্র ক্যালেন্ডারে চতুর্থ মাসের প্রথম পূর্ণিমা। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার মতে দিনটি বছরের পর বছর পরিবর্তিত হয় তবে সাধারণত মে মাসে,হয়। বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে দিনটি যার যার মতো করে উদযাপন করে আসছে, ১৯৫০ সালে সর্বপ্রথম দিনটিকে বিশ্বব্যাপী আনুষ্ঠানিকভাবে উদযাপন করার সিদ্ধান্ত হয়। শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব বৌদ্ধ ফেলোশিপের প্রথম সম্মেলনে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
জাতিসংঘে বুদ্ধপূর্ণিমা
১৯৯৯ সালের জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের 54/115 এর রেজুলেশনের মাধ্যমে দিনটি আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।
বিশ্বের প্রাচীনতম ধর্মগুলির মধ্যে অন্যতম ধর্ম হিসেবে বৌদ্ধধর্ম আড়াই হাজার বছর ধরে মানবতার কল্যানে যে অবদান রেখেছে এবং তা অব্যাহত ভাবে চালিয়ে যাচ্ছেতা স্বীকার করার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে বুদ্ধপূর্ণিমাকে ভেসাকদিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। আধ্যাত্মিক মানবতার এই দিবসটি প্রতি বছর জাতিসংঘ সদর দপ্তরে এবং জাতিসংঘের অন্যান্য অফিসে, জাতিসংঘের পরিচালিত সংশ্লিষ্ট স্থায়ী মিশনগুলো গুরুত্বের সাথে স্মরণ ও পালন করে।
সকলকে বুদ্ধপূর্ণিমার মৈত্রীময় শুভেচ্ছা। জগতের সকল প্রাণি সুখি হোক।