বাঘের মুখে ক্ষীণাস্রব অরহত হলেন ভিক্ষু

একসময় ৩০জন ভিক্ষু মহাকারুণিক বুদ্ধের কাছ থেকে কর্মস্থান শিক্ষা নিয়ে জঙ্গলের কাছাকাছি কোন এক বিহারে শীল-সমাধি ও প্রজ্ঞার অনুশীলন করতে লাগলেন। তাদের মধ্যে যিনি বর্ষাবাসে বর্ষীয়ান ভিক্ষু তিনি সকলের উদ্দেশ্য বললেন, “আবুসো, আমরা সকলে রাতের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় যাম একাকী ভাবনার মাধ্যমে অতিবাহিত করব এবং ভাবনা চলাকালীন সময় কেউ কারো সাথে দেখা বা কথা বলব না। রাতের চতুর্থ যামে আমরা সকলে বিশ্রাম করতে যাব”।

বাঘের মুখে ক্ষীণাস্রব অরহত হলেন ভিক্ষু
অমিতানন্দ ভিক্ষু

বাঘের মুখে ক্ষীণাস্রব অরহত হলেন যে ভিক্ষুঃ ৩০ জন শীলবান ভিক্ষু যে বিহারে ভাবনা চর্চা করতেন তাঁর পাশের বনে অনেক বাঘ ছিল। মনুষ্যর আভাস পেয়ে বাঘগুলো মাঝে মাঝে ভিক্ষুদের মধ্যে কাউকে বনে টেনে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে ভক্ষণ করত। কিন্তু সকলের মধ্যে উৎকণ্ঠা ও ভয়ের উদ্রেক হবে এবং ভাবনায় অন্তরায় হবে বলে ভিক্ষুগণ কেউ কাউকে এ ব্যাপারে বললেন না। তারা নীরব রইলেন। এভাবে বাঘ শীলবান ভিক্ষুদের একে একে হত্যা করার ফলে ৩০ জন হতে ভিক্ষুর সংখ্যা কমে ১৫ জনে এসে দাঁড়ালো।

তখন বর্ষাবাসে বর্ষীয়ান ভিক্ষু সকলকে একত্রিত করে জিজ্ঞাসা করলেন, “আবুসো, আমাদের অন্যান্য ভিক্ষুগণ কোথায়, ভিক্ষুর সংখ্যা এত কম দেখাচ্ছে কেন”? ভিক্ষুদের কাছ থেকে সমস্থ বৃত্তান্ত জানার পর তিনি বললেন, “আবুসো, সকলে শুনুন, এখন থেকে কেউ যদি বাঘের সম্মুখে পড়ে অথবা বাঘ কর্তৃক আক্রান্ত হয়, তাহলে যেন প্রাণ রক্ষার্থে অন্যদের চিৎকার করে ডাকে যাতে সকলে একসাথে গিয়ে বাঘ বিতাড়িত করে আক্রান্ত ভিক্ষুর প্রাণ রক্ষা করতে পারে”। সকলে এ ব্যাপারে একবাক্য সম্মতি দিলেন।

একদিন ১৫ জন ভিক্ষুর মধ্যে এক তরুণ নবীন ভিক্ষুকে ধ্যানরত অবস্থায় বাঘ আক্রমণ করলো। সমূহ বিপদ দেখে সে চিৎকার করে অন্যান্য ভিক্ষুদের সাহায্যর ডাকল।

সেই নবীন আত্মচিৎকারে অন্যান্য ভিক্ষুরা তাকে সাহায্যর জন্য লাথিও মশাল নিয়ে ছুটে গেলেন  কিন্তু ততক্ষণে বাঘ তাকে টেনে নিয়ে পাহাড়ের উপরিভাগে শীর্ষে নিয়ে রাখল যেখানে সাহায্য করতে আসা ভিক্ষুরা সেই নবীন ভিক্ষু বা বাঘ কারো নাগাল পাচ্ছিলেন।

জীবনী: সাধনানন্দ মহাস্থবির (বনভান্তে)

কারণ পাহাড়ের শীর্ষগুলো অত্যন্ত সুউচ্চ যেখানে পাহাড় বেয়ে উঠা খুব কষ্টসাধ্য। কিন্তু তারা নবীন ভিক্ষুর সেই আত্মচিৎকার শুনতে পাচ্ছিলেন, নবীন ভিক্ষুও সাহায্য করতে আসা ভিক্ষুদের শব্দ শুনতে পাচ্ছিলেন। বাঘ ইতিমধ্যে নবীন ভিক্ষুর পায়ের আঙ্গুল থেকে খাওয়া শুরু করলো।

তখন সাহায্য করতে আসা ভিক্ষুরা সেই আক্রান্ত নবীন ভিক্ষুর উদ্দেশ্য বললেন, “বন্ধু, আমাদের আর কিছু করার নেই, আমরা শতচেষ্টা করেও পাহাড় বেয়ে উঠে আপনাকে সাহায্য করতে পারছি না। বন্ধু আপনি ধর্মকে স্মরণ করুন। একটা ধর্মই আপনাকে আলোর দিশা দেখাতে পারে”।

এমন সময় সেই বাঘের মুখে আক্রান্ত নবীন ভিক্ষু দৃঢ়চিত্তে অসহ্য ব্যাথা বেদনার মধ্যেও বিদর্শন ভাবনায় মনোনিবেশ করে বেদনানুপাস্সানা ভাবনা করতে লাগলেন।

তীব্র ব্যাথা বেদনায় বেদনানুপাস্সানা ভাবনা করতে করতে বাঘ যখন নবীন ভিক্ষুর পায়ের গোড়ালি খেয়ে নিল তিনি সেই বেদনায় মনোনিবেশ করে স্রোতাপত্তি ফলে প্রতিষ্ঠিত হলেন। তিনি তবুও থেমে থাকেন নি, আরও অসহ্য তীব্র বেদনার মাঝেও তিনি আরও কঠোর ভাবনায় শুয়ে শুয়ে মনোনিবেশ করলেন।

এভাবে আরও তীব্র ব্যাথা বেদনায় বেদনানুপাস্সানা ভাবনা করতে করতে বাঘ যখন নবীন ভিক্ষুর পায়ের হাঁটু খেয়ে নিল তিনি সেই বেদনায় মনোনিবেশ করে সকৃতাগামী ফলে প্রতিষ্ঠিত হলেন। তিনি তাঁর ভাবনাকে আরও উন্নীত করলেন। যত ব্যাথা-বেদনা তীব্র হচ্ছে, তিনি শুয়ে শুয়ে তাঁর ভাবনায় আরও কঠোর হলেন।

মিডল ওয়ে এডুকেশন এর নতুন ডিরেক্টর -লি

এখইভাবে আরও তীব্র ব্যাথা বেদনায় বেদনানুপাস্সানা ভাবনা করতে করতে বাঘ যখন নবীন ভিক্ষুর পাকস্থলী খেয়ে নিল তিনি সেই বেদনায় মনোনিবেশ করে অনাগামী ফলে প্রতিষ্ঠিত হলেন। তিনি তীব্র ব্যাথাকে সম্বল করে আরও জোর ভাবনায় শুয়ে শুয়ে মনোনিবেশ করলেন।

পরিশেষে বাঘ তার হৃদপিণ্ড বিদীর্ণ করার পূর্বে সমস্থ আসব ক্ষয় নবীন ভিক্ষু মুক্তপুরুষ অরহত হলেন। অরহত হবার পর এবং নির্বাপিত হবার পূর্ব মুহূর্তে তিনি ভাষণ করলেন, “আমি এখন আসব মুক্ত হয়েছি, আমার ভেতরে প্রজ্ঞা বিদ্যমান। যে বাঘ আমাকে পাহাড়ের শীর্ষে এনে হত্যা করেছে তার প্রতি আমার কোন রাগ বা দ্বেষ নেই। বাঘ আমার এই শরীর নিশ্চিন্তে ভক্ষণ করুক, কিন্তু আমার নির্বাণ প্রদায়ী মন বাঘ ভক্ষণ করতে পারবে না। বাঘের মুখে নিহত হয়েও আমার এ মৃত্যু মহৎ।

মূল লেখক- অমিতানন্দ ভিক্ষু, ওয়াট কান্তাথারারাম বিহার, ব্যাংকক, থাইল্যান্ড

তথ্যসূত্র – সুমঙ্গল বিলাসিনী অর্থকথা, ২য় খণ্ড

বিঃদ্রঃ লেখকের লিখিত লেখা কপি করার সময় অবশ্যই সৌজন্যতা প্রকাশ করবেন।

শেয়ার করে সবাইকে পড়ার সুযোগ দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!