গৌতম বুদ্ধের জন্মদিনকে কেন্দ্র করে লুম্বিনী সফরে যাচ্ছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি। ভারত ও নেপাল জুড়েই গৌতম বুদ্ধের বিচরণ ছিল সর্বাধিক। দুই দেশের বৌদ্ধ ঐতিহ্য ও আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ পর্যটনের গভীর সম্পর্ক স্থাপনে বিশেষ ভূমিকা রাখবে এই সফর।
এটি ২০১৯ সালে মোদি দ্বিতীয়বারের মতো পুনর্নির্বাচনের পর তার প্রথম নেপাল সফর।
আগামী ১৬ মে আন্তর্জাতিক ভেসাক ডে কে কেন্দ্র করে এই রাষ্ট্রীয় সফরের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এই দিন গৌতম বুদ্ধের জন্ম, জ্ঞান লাভ ও মৃত্যু দিন স্মরণে সমগ্র বিশ্বের বৌদ্ধরা দিনটি পালন করেন।
গৌতম বুদ্ধ আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর চালু
মোদি প্রথমে ঐতিহাসিক বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনি যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। সেখানে তিনি নেপালের প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবার সাথে ভারতের আর্থিক সহায়তায় নির্মিতব্য একটি বৌদ্ধ বিহারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনে যোগ দিবেন।
এরপর তিনি লুম্বিনীর কাছে ভৈরহাওয়াতে নেপালের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, গৌতম বুদ্ধ বিমানবন্দর উদ্বোধন করবেন।
এই সফর ভারতের নেতৃত্বে বৈশ্বিক পর্যটকদের জন্য একটি “বৌদ্ধ সার্কিট” তৈরি করার যে প্রচেষ্টা চলছে মূলত তারই বহিঃপ্রকাশ। এর মাধ্যমে বৈশ্বিক পর্যকটদের ভারত উপমহাদেশের বৌদ্ধ স্থাপনা ও ঐতিহ্য সমূহ ভ্রমণ করতে সহজ হবে।
তীর্থস্থান হিসেবে লুম্বিনী
বুদ্ধের জীবনে নানা ঘটনাবহুল পবিত্র স্থানসমূহকে বৌদ্ধ‘তীর্থস্থান’ বলা হয়। বুদ্ধের শিষ্য ও বৌদ্ধ রাজাদের অনেক কীর্তি এ স্থানগুলোতে জড়িয়ে আছে। ঐতিহ্যমণ্ডিত স্মৃতিবহ এ সকল স্থানে বিহার, চৈত্য, স্থূপ প্রভৃতি নির্মিত হয়েছে। বৌদ্ধধর্মে এ সকল স্থানকে ‘তীর্থ’ বলা হয়। যেমন- কপিলাবস্তু, শ্রাবস্তী, লুম্বিনী, বৈশালী, রাজগৃহ, চক্রশালা, মহামুনি, রাংকুট প্রভৃতি। বুদ্ধের জীবনের উল্লেখযোগ্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ স্মৃতি বিজড়িত পবিত্র স্থানগুলোকে ‘মহাতীর্থ’ বলা হয়। এছাড়া বৌদ্ধদের ইতিহাসসমৃদ্ধ বহু ঐতিহাসিক স্থানও আছে।
বর্তমানে নয়া দিল্লি, আগ্রা, বারাণসী, শ্রাবস্তি, রাজগীর, প্রাচীন নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি স্থানে বুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত স্থান সমূহকে বিশেষ মর্যদায় রক্ষনাবেক্ষনের প্রচেষ্টা করছে ভারত সরকার।
বৌদ্ধধর্ম সম্পর্কে নরেন্দ্র মোদির মন্তব্য
২০১৫ সালের অক্টোবরে কুশিনগর সফরে, মোদি বলেছিলেন: “বৌদ্ধধর্ম এবং গণতন্ত্রের মিলন আমাদের শান্তি ও সহযোগিতা, সম্প্রীতি ও সমতার এশিয়া গড়ে তোলার পথ প্রদর্শণ করে।” (হিন্দুস্তান টাইমস)
তিনি আরো বলেছিলেন, “বৌদ্ধদের ধার্মিকতার পথ মনের স্বাধীনতা, চিন্তার স্বাধীনতা, কর্মের স্বাধীনতা এবং বাক স্বাধীনতার উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে আর এগুলোই গণতন্ত্রের ভিত্তি। একে পরস্পর নির্ভরশীলতার স্বীকৃতি, বৈচিত্র্যের স্বীকৃতি এবং সহাবস্থানে বিশ্বাস দ্বারা সংজ্ঞায়িত করা হয়। তাই বুদ্ধের সঠিক পথে চললে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পথে হাঁটাও হয়ে যায়।” (হিন্দুস্তান টাইমস)
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ) জিওস্ট্র্যাটেজি প্ল্যাটফর্মের একটি গবেষণাপত্র অনুসারে, ভারতে বৌদ্ধদের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অল্প হওয়া সত্ত্বেও ভারতে বৌদ্ধ ধর্মের একটি বিশেষ ভূমিকা আছে।
ভারতেই গৌতম বুদ্ধ বোধিজ্ঞান লাভ করেছিলেন এবং তাঁর জীবনের বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছিলেন ভারতেই। গৌতম বুদ্ধের জীবনের সাথে জড়িত সেই জায়গা গুলো ভ্রমণ করতে সারা বিশ্বের অনেক পূণ্যার্থী ভারত ভ্রমণ করেন। এসব আগ্রহী পূণ্যার্থীরা বুদ্ধের সাথে আধ্যাত্মিক সংস্পর্শ পেতে বুদ্ধের বিচরণকৃত স্থান গুলোর উদ্দেশ্যে ভারতে যেতে চায়।
মহামতি দালাই লামা সহ একটি প্রাণবন্ত তিব্বতি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের আতিথেয়তা করার গৌরবও ভারতের রয়েছে।