মধ্যপ্রদেশে আবিষ্কৃত হয়েছে বৌদ্ধ বিহার ও শিলালিপি: ভারতের মধ্যপ্রদেশে আবিষ্কৃত হয়েছে পুরনো বৌদ্ধ বিহার, ম্যুরার এবং ধ্যান গুহা। আবিষ্কৃত বৌদ্ধ স্থাপনাগুলোর মধ্যে কিছু নমুনা আনুমানিক দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম শতাব্দীর এবং কিছু নমুনা চতুর্দশ থেকৈ পঞ্চদশ শতাব্দীর বলে ধারনা করা হচ্ছে। আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া (এএসআই) মধ্যপ্রদেশের উমারিয়া জেলার বান্ধবগড় ফরেস্ট রিজার্ভে খনন কাজ করার পর এই বৌদ্ধ কাঠামো, ম্যুরাল এবং গুহা আবিষ্কার করেছে। প্রত্নতাত্ত্বিক এই স্থানগুলো এর আগে কখনো প্রত্নতাত্ত্বিকগনের নজরে আসেনি।
প্রাপ্ত শিলালিপিগুলোর মধ্যে মথুরা এবং কৌশাম্বী সহ বেশ কয়েকটি শহরের নাম সম্বলিত ম্যুরাল পাওয়া গেছে। একটি বেশ কয়েকটি স্তূপ পাওয়া গেছে যেগুলো বৌদ্ধ যুগের নিদর্শনের সাথে মিলে যায়। এএসআই-এর মতে, ”এই আইটেমগুলো ২য়-৩য় শতাব্দীতে তৈরি করা হতে পারে। এখানে কালাচুরি যুগের (৯ম-১১ম শতাব্দী) দুটি নতুন শৈব মঠ চিহ্নিত করা গেছে, সেইসাথে মুঘল যুগ এবং জৌনপুর সালতানাতের শার্কি রাজবংশের মুদ্রা ও (১৩৯৪-১৪১৩) পাওয়া গেছে।”
বান্ধবগড় ফরেস্ট রিজার্ভ, মধ্যপ্রদেশে র রাজধানী ভোপাল থেকে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার পশ্চিমে। স্থানটি জন সাধারণের প্রবেশ সংরক্ষিত বাঘের অভায়ারণ্য। এএসআই দল মে মাসের শেষ থেকে জুন পর্যন্ত প্রায় ১৭০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে তাদের অনুসন্ধ্যান পরিচালনা করেছে বলে জানা গেছে। এছাড়া এখানে বিভিন্ন স্থানে কিছু বিষ্ণু সহ হিন্দু দেবতাদের চিত্রিত ভাস্কর্য পাওয়া গেছে।
জবলপুর সার্কেলের সুপারিনটেন্ডিং প্রত্নতাত্ত্বিক এস কে বাজপেই এই দলের নেতৃত্ব দেন। তিনি আবিষ্কার সম্পর্কে আরও বিশদ বিবরণ দিয়ে বলেন, “প্রত্নতাত্ত্বিক এন.পি. চক্রবর্তীর ১৯৩৮ সালের অনুসন্ধানের পর এই প্রথম ASI বান্ধবগাহ অন্বেষণ করেছে৷ সেখানে অনেক কাঠামো নথিভুক্ত ছিল। আমরা প্রাচীন গুহা, মন্দির, বৌদ্ধ ধ্বংশাবশেষ, মঠ, ভাস্কর্য, জলাশয়, ব্রাহ্মীসহ এবং নাগরির মতো পুরানো লিপিতে ম্যুরাল শিলালিপি নতুন করে রিপোর্ট এবং নথিভুক্ত করেছি।”
বাজপাই আরও উল্লেখ করেছেন যে, অন্যান্য অনেক সংস্থা এই অঞ্চলটি অন্বেষণ করেছিল কিন্তু এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার তারা করতে পারেনি। তার কাজের চেলেঞ্জ শেয়ার করতে গিয়ে তিনি বলেন, ”এই বছর বনে কাজ করার সময় একটি বাঘ এবং হাতির মুখোমুখি হয়েছিলাম। এই পরিস্থিতিতে আমরা গুহাগুলোকে আশ্রয় হিসেবে ব্যবহার করেছিলা।”
কিরগিজস্তানে আবিষ্কৃত বৌদ্ধ বিহার উন্মুক্ত করবে সাধারণের জন্য
বাজপাই যুক্ত করে বলেন, ”এটিও গুরুত্বপূর্ণ যে আবিষ্কৃত বৌদ্ধ স্থাপনাগুলো এমন একটি সময়কালে তৈরি হয়েছিল বলে মনে হয় যখন বৌদ্ধধর্ম এই অঞ্চলে রাজনৈতিকভাবে অনুকূল ছিল না। আমার জন্য এটি সবচেয়ে চমকপ্রদ আবিষ্কার যেখানে বৌদ্ধ কাঠামোর অবশিষ্টাংশ পাওয়া গেছে সেখানে একটি হিন্দু রাজবংশ শাসন করেছিল। এটি অবশ্য ধর্মীয় সম্প্রীতির ইঙ্গিত দেয়, কিন্তু কে এই বৌদ্ধ স্থাপনাগুলি তৈরি করেছিল তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে প্রাপ্ত শিলালিপিগুলোতে উত্তর প্রদেশে অবস্থিত মথুরা এবং কৌশাম্বীর মতো পুরানো শহরগুলোর নামের উল্লেখ পাওয়া গেছে।”
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অন্য এক সিনিয়র প্রত্নতাত্ত্বিক বলেন, “বান্ধবগড় থেকে অনেক দূরে অবস্থিত এই শহরগুলোর নাম থেকে বোঝা যায় এই এলাকার সাথে বৌদ্ধদের ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল। বিভিন্ন স্থান থেকে আগত বৌদ্ধরা যাতে ধর্মীয় কাজ সারতে পারে তার জন্য এই স্থাপনা গুলো নির্মাণ করতে পারে।”
এই কর্মকর্তারা উল্লেখ করেছেন যে, এই এলাকায় ৩৫টি মন্দির নথিভুক্ত ছিল, আগের অভিযানের নয়টি এবং সাম্প্রতিক অনুসন্ধানে ২৬টি মন্দির নতুন করে নথিভুক্ত হয়েছে। মন্দির ও গুহাগুলোর মধ্যে কিছু নিদর্শনে মহাযান বৌদ্ধধর্মের প্রমাণ পাওয়া যায়।
সপ্তম শতাব্দীর পরে হিন্দু ধর্মের পুনরুত্থানের কারণে ভারতে বৌদ্ধধর্ম হ্রাস পেতে শুরু করে। ১২ এবং ১৩ শতকে শুরু হওয়া মুসলিম আগ্রাসনের সময় এটি কার্যত ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। ১৯ শতকের শেষের দিকে এবং ২০ শতকের গোড়ার দিকে ভারতে বৌদ্ধধর্মের পুনরুজ্জীবন লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে বুদ্ধগয়াতে এশিয়া ও বিশ্বের বিভিন্ন বৌদ্ধ দেশের মন্দির স্থাপন এবং ড. বি. আর. আম্বেদকর (১৮৯১-১৯৫৬) কর্তৃক দলিত ধর্মান্তর আন্দোলনের মাধ্যমে ক্রমবর্ধমান ভারতে বৌদ্ধদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। বর্তমানে বৌদ্ধা ভারতীতে একটি ক্ষুদ্র সংখ্যালঘু গুষ্টি। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুসারে জনসংখ্যার মাত্র 0.7 শতাংশ বৌদ্ধ।